ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পান্থ আফজাল

তারুণ্যের স্বাধীনতা দিবস

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ২২ মার্চ ২০১৬

তারুণ্যের স্বাধীনতা দিবস

তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে যেন মেতেছে বাঙালী। বিপ্লবের মন্ত্রে উজ্জীবিত তারুণ্য ঘরের চার দেয়াল থেকে রাজপথে। স্বাধীনতাযুদ্ধের অনুপ্রেরণাদায়ক গান আর রাজধানী ঢাকার পথে প্রান্তরের সমাবেশ সাম্প্রতিককালের সঙ্কটকে ভুলে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে এদেশের মানুষ গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের কাছে দাঁড়ায়। অবয়ব থেকে হৃদয়ে, মননে সর্বত্রই লাল-সবুজের চেতনা। আবহে স্বদেশের প্রতি মমত্ববোধ। আর সুরে সুরে স্বাধীনতার প্রতি এক হৃদয় নিংড়ানো বহির্প্রকাশ। স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, প্রদীপ প্রজ্বালন, নাচ, গান, আবৃত্তি, প্রদর্শনী, নাটক, কনসার্ট আলোচনাসভাসহ নানা আয়োজনে রাজধানীসহ সারাদেশে উদ্যাপিত হয় মহান স্বাধীনতা দিবস। জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদ বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায় অগণিত তরুণ আর বৃদ্ধ শিশু। সঙ্গীত, নৃত্য, আলোচনা ও নবীন সদস্যদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়ার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপন করে বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান। সমবেত সঙ্গীত, দলীয় নৃত্য পরিবেশনের মধ্য দিয়ে দিনভর উদ্যাপিত হয় এই দিনটি। স্বাধীনতা দিবসে অন্যভাবে আয়োজন করা হয় স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান। নগরীর নয়নাভিরাম স্থান হাতিরঝিল জুড়েবসা স্বাধীনতাপ্রিয় মানুষের উপচেপড়া ভিড়। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে হাতিরঝিলের লেকে চলে নৌকাবাইচ। এই অনুষ্ঠান দেখতে অনুষ্ঠানস্থলে ছুটে আসেন রাজধানীর বাসিন্দারা। মানুষের মাত্রাতিরিক্ত ভিড়ে নয়নাভিরাম হাতিরঝিলের সর্বত্রই থাকে মুক্তির ছোঁয়া। আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপন করে বাংলা একাডেমি। তবে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বরাবরের মতো আয়োজন করে গণজাগরণ মঞ্চ পতাকা মিছিল ও কনসার্টের। শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে দেশের খ্যাতিমান বিভিন্ন ব্যান্ডদল সঙ্গীত পরিবেশন করে। আর তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে মেতে উঠে সর্বত্র। এদিন নেচে-গেয়ে স্বাধীনতা দিবসকে স্মরণ করে শিশু-কিশোররা। দেশাত্মবোধক গান, কবিতা ও নৃত্য পরিবেশন করে এই দিনটি উদ্যাপন করে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিশু-কিশোররা। এসব গান কবিতা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যুদ্ধের দিনগুলোর কথা। প্রতিবছর এই দিন গান, নাচ, আবৃত্তি ও পথনাটক পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ‘স্বাধীনতা উৎসব’ অনুষ্ঠান। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও ধানম-ির রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চে বিকেলে একই সময়ে চলতে থাকে এই উৎসব। তবে বরেণ্য ব্যক্তিত্ব আর শিল্পীদের অংশগ্রহণে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ অনুষ্ঠান। মূল মঞ্চে দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করে বরাবরই সবাইকে মুগ্ধ করেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও সুরের ধারার শিল্পীরা। নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের অপরিসীম অবদানের বিন্দু পরিমাণ ঋণ শোধ করার অভিলাষ আজ পাহাড় সমান হয়ে দাঁড়িয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের নিঃস্বার্থ আত্মদানের ঋণ কোনভাবেই পরিশোধ করা যায় না। তবে দেশ আজ একাত্তরের পরাজিত শত্রু আর দোসর রাজাকারদের ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। স্বাধীনতার পঁয়তাল্লিশ বছরে বাঙালী জাতি এই প্রথম একটি অন্যরকম স্বাধীনতা দিবস পালন করছে। তরুণ প্রজন্মের নিকট আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রয়াসে জাতির এই অর্জন ইতিহাসের সাক্ষীর মাধ্যমে অম্লান হয়ে থাকবে। স্বাধীনতা-পরবর্তী আমাদের অর্জন যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে ব্যর্থতাও। এরপরও সব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ অপার সম্ভাবনাময় একটি রাষ্ট্র, যার গতিপথ শুধু এগিয়ে চলার।
×