ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অস্ট্রেলিয়া ৩ উইকেট জয়ী

লড়াই করে হারল টাইগাররা

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২২ মার্চ ২০১৬

লড়াই করে হারল টাইগাররা

মিথুন আশরাফ, ব্যাঙ্গালুরু থেকে ॥ কথায় আছে, ‘এক ঢিলে দুই পাখি মারা।’ সোমবার অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে পারলে বাংলাদেশ দলত এক ঢিলে বহু পাখি মারতে পারত। টি২০ বিশ্বকাপে ভালভাবে টিকে থাকা, বাংলাদেশের মাটিতে নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে অস্ট্রেলিয়া যে খেলতে আসেনি, তাদের যুব দল বিশ্বকাপে খেলতে আসেনি, তার জবাব দেয়া, সবচেয়ে বড় বিষয়, সবার বিশ্বাস মতে তাসকিন আহমেদের বোলিং এ্যাকশন যে বৈধ থাকার পরও আইসিসি অবৈধ ঘোষণা করল, এর একটা জবাবও দেয়া যেত। যে জবাব দেয়ার কথা আগেরদিনেই বলেছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। কিন্তু কিছুই হলো না। ৩ উইকেটে হারই হলো নিয়তি। বিধ্বস্ত দলটি, আরও বিধ্বস্ত হয়ে পড়ল। দলের ক্রিকেটারদের ভেতর যে তাসকিনকে নিয়ে আইসিসির সিদ্ধান্তে একটা জেদ তৈরি হয়েছিল, তার দেখা ঠিকই মিলল। কিন্তু কাজ হলো না। টানা দুই ম্যাচ হেরে এখন বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকেই বাংলাদেশের বিদায় নেয়া যেন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াল। এত ‘ঝড়-ঝাপ্টা’, সব ‘ওলট-পালট’ হয়ে যাওয়ার পরও কী দুর্দান্ত খেলল বাংলাদেশ। তাসকিন আহমেদ, আরাফাত সানি নেই। সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পেটের পীড়ায় খেললেন না ওপেনার তামিম ইকবালও। দল যেন বিক্ষিপ্ত অবস্থায় পড়ে গেল। এমন অবস্থা থেকেও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (৪৯*) ও সাকিব আল হাসান (৩৩) এত দুর্দান্ত ব্যাটিং করলেন যে দলের বিধ্বস্ত অবস্থাতেও মন ভরিয়ে দিলেন। তাতে ব্যাঙ্গালুরুর ক্রিকেটপ্রেমীরা যে বাংলাদেশকে সমর্থন করলেন, তারাও শান্তি পেলেন। কিন্তু বোলিংয়ে সেই শান্তি আর থাকল না। অশান্তি ঘিরে ধরল। খোয়াজার (৫৮) দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশকে হারিয়ে টুর্নামেন্টে টিকে রইল অস্ট্রেলিয়া। ব্যাঙ্গালুরুর উইকেট ব্যাটিং নির্ভর, তা সবারই জানা। সে উইকেটে ৫ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৫৬ রান করল বাংলাদেশ। অসাধারণ ব্যাটিং প্রদর্শন হলো। এরপরও অস্ট্রেলিয়ার যে ব্যাটিং স্তম্ভ, তাতে এ রানও কম মনে হতে থাকে। তবে আশা থাকে। উইকেট যে সেøা হয়ে যায়। বল ঘুরতে থাকে। স্পিনে যে খুবই দুর্বল অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু স্পিনটাই এত ভাল খেলে দিল অস্ট্রেলিয়া ব্যাটসম্যানরা, তা দেখে অবাক হতে হলো! ৭ উইকেট হারিয়ে ১৮.৩ ওভারে ১৫৭ রান করল। সেই সঙ্গে ২০০৭, ২০১০, ২০১৪ সালের টি২০ বিশ্বকাপের মতো এবারও বাংলাদেশকে হারাল অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ যখন শুরু হলো, তখন ইএসপিএন-ক্রিকইনফোর টুইটারে একটি টুইট দেখা গেল, ‘ড্রিম বিগ, স্টার্ট নাও।’ মানে দাঁড়াল, ‘বড় স্বপ্ন দেখ, এখনই স্বপ্ন সফল করার পথে এগিয়ে যাওয়াও শুরু কর।’ টি২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশেরও স্বপ্ন বড়ই ছিল। সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্ন এখন যেন শেষ বললেও ভুল হবে না। এখন বাংলাদেশের সামনে আরও দুটি ম্যাচ আছে। বুধবার ভারতের বিপক্ষে ও ২৬ মার্চ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। সেই দুই ম্যাচে জিতলেও যে বাংলাদেশ শেষ চারে খেলতে পারবে, এর কোন নিশ্চয়তা নেই। দলের যে অবস্থা, তাতে পরের দুই ম্যাচ জিতবে, সেই চিন্তা করাটাই তো বাস্তব নয়। সেখানে সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন দেখা এ মুহূর্তে কোনভাবেই সমীচীন নয়। তবুও আশা থাকে। সেই আশাতেই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশের কাছে এখন যতটানা সেমিফাইনালে খেলার লক্ষ্য থাকবে, তারচেয়ে বেশি অন্তত একটি ম্যাচ জেতার চিন্তাই থাকবে। শুরু থেকেই যেভাবে মারমুখী ব্যাটিং করতে থাকেন উসমান খোয়াজা ও শেন ওয়াটসন তাতে দ্রুতই ৬ ওভারে পাওয়ার প্লেতে ৫১ রান করে ফেলে অস্ট্রেলিয়া। স্পিনে তারা দুর্বল, অথচ সাকিব আল হাসানের এক ওভারেই তিন বাউন্ডারিসহ ১৩ রান নিয়ে নেয়। রান যখন ৬২টিতে পৌঁছে এমন সময়ে রানের গতি থামে। রানআউট হয়ে যান ওয়াটসন (২১)। ৯৫ রানে গিয়ে মুস্তাফিজুর রহমানের বলে বোল্ড হয়ে যান স্মিথও (১৪)। মুস্তাফিজ দুর্দান্ত বল করেন। ৫১ রানের সময়ই ওয়াটসনের উইকেটটি পেতেন মুস্তাফিজ। কিন্তু মিঠুন ক্যাচ ধরতে ব্যর্থ হন। যদি তখনই ওয়াটসনকে আউট করা যেত, তাহলে বিপাকেও পড়তে পারত অসিরা। ১১৫ রানে গিয়ে যখন খোয়াজাকে বোল্ড করেন আল আমিন, এর আগেই ৫৮ রান করে ফেলেন খোয়াজা। অস্ট্রেলিয়াকে এগিয়ে দিয়ে যান। ৪ রান যোগ হতেই ২০০ ইনিংসে ৬ হাজার রান করা ওয়ার্নারকে (১৭) কট এ্যান্ড বোল্ড করে দেন সাকিব। তখন বাংলাদেশের জয়ের কিছুটা আশা জাগে। কিন্তু সেই আশা মুহূর্তেই যেন শেষ হয়ে যায়। টি২০তে ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে নিজের তৃতীয় ওভারে এসে ১৪ রান দিয়ে দেন। অস্ট্রেলিয়ার তখন জিততে ২৪ বলে ২২ রান লাগে। তখন কী আর বাংলাদেশের জেতার কোন আশা থাকে! মুস্তাফিজ শুরুতে যেমন চাপে রাখেন অস্ট্রেলিয়াকে। শেষেও বল হাতে নিয়ে বিপাকে ফেলেন। মার্শকে (৬) আউট করে দেন। মার্শ আউট হওয়ার পর ম্যাক্সওয়েল ছক্কা হাঁকিয়ে দেন। তাতে রান আর বলের পার্থক্য একেবারেই কমে আসে। মুস্তাফিজের করা ১৭তম ওভারের শেষ বলে যখন আরেকটি ছক্কা হাঁকান ম্যাক্সওয়েল, তখন ১৯ বলে জিততে লাগে মাত্র ১০ রান। এমন সময় সাকিব বল হাতে নেন। ম্যাক্সওয়েলকে (২৬) আউট করে দেন। তৃতীয় বলে হ্যাসটিংগসের উইকেটটিও পেতেন সাকিব। আল আমিন সহজ ক্যাচটি ধরতে পারেননি। তবে নিজের শেষ ওভারের শেষ বলে গিয়ে হ্যাসটিংগসকেই (৩) আউট করে দেন সাকিব। তাতে করে অস্ট্রেলিয়ার ৭ উইকেটের পতন ঘটে যায়। এমন মুহূর্তে গিয়ে যেন জয়ের আশা জাগে। যদি কোন অলৌকিক কিছু ঘটে যায়। জিততে ১২ বলে যে ৫ রান লাগে অস্ট্রেলিয়ার, তাই যদি নিতে না পারে! কিন্তু ১৯তম ওভারের তিন বলেই জয় তুলে নিল অস্ট্রেলিয়া। সাকলায়েন সজিবের তৃতীয় বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দেন ফকনার (৫*)। এ বাউন্ডারিতে জয়ও নিশ্চিত হয়ে যায়। তাসকিন ও সানি যে খেলতে পারবেন না অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, এমনকি বিশ্বকাপে, তা সাময়িক নিষিদ্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নিশ্চিত হয়ে যায়। অসিদের বিপক্ষে একাদশে যখন দেখা গেল না তামিম ইকবালকেও, পেটের পীড়ায় খেললেন না তামিম; তখন আসলে স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেল। তখনই সবার বোঝা হয়ে গেল, হার হচ্ছে বাংলাদেশেরই। তিন নিয়মিত ক্রিকেটার যদি একটি দলের একাদশে না থাকেন, তাহলে সেই দল জিতে কী করে! কিন্তু যখন ব্যাঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিং করতে শুরু করল বাংলাদেশ, ২৫ রানে সৌম্য সরকার (১) ও সাব্বির রহমানকে (১২) হারালেও তৃতীয় উইকেট থেকেই দুর্দান্ত খেলা শুরু করে দিল। তামিমের পরিবর্তে ব্যাট হাতে নামা মোহাম্মদ মিঠুন ভাল ব্যাটিং করলেন। ২৩ রান করে দলের ৬২ রানের সময় আউট হলেন। এরপর শুভগত হোম রানের খাতা খোলার আগেই ‘নতুন জীবন’ পেলেও কিছুই করতে পারলেন না। ৭৮ রানের সময় ১৩ রান করা শুভগত আউট হয়ে গেলেন। বাংলাদেশ চাপে পড়ল। সেই চাপ থেকে সাকিব আল হাসান ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ দলকে চাপমুক্ত করলেন। দুইজন মিলে পঞ্চম উইকেটে ৫১ রানের জুটি গড়লেন। যা দলকে ১০৫ রানে নিয়ে গেল। এমন সময় ৩৩ রান করে সাজঘরে ফিরেন সাকিব। এরপর মুশফিকুর রহীমকে সঙ্গে নিয়ে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ পুরোটা পথ পাড়ি দিলেন। শেষ মুহূর্তে বাউন্ডারির পর বাউন্ডারি হাঁকাতে থাকেন মাহমুদুল্লাহ। একপ্রান্তে মাহমুদুল্লাহ রানের গতি বাড়িয়ে দিতে থাকেন। অন্যপ্রান্তে মুশফিক শুধু তাকে সঙ্গ দিতে থাকেন। শেষপর্যন্ত বাংলাদেশ দেড় শ’ রানও অতিক্রম করে ফেলে। ১ রানের জন্য অর্ধশতক করতে পারেননি মাহমুদুল্লাহ। মুশফিকের ব্যাট থেকে আসে অপরাজিত ১৫ রান। এই রান করেও অস্ট্রেলিয়ার কাছেও হারল বাংলাদেশ।
×