ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাবার কবরের পাশে দাফন

এফডিসিতে দিতির প্রতি সহশিল্পীদেও শেষ শ্রদ্ধা

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ২২ মার্চ ২০১৬

এফডিসিতে দিতির প্রতি সহশিল্পীদেও শেষ শ্রদ্ধা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা (বিএফডিসি) চত্বরে সোমবার সকাল থেকেই ছিল উৎসুক মানুষের ভিড়। চলচ্চিত্রাঙ্গনের ব্যক্তিত্বদের পাশাপাশি ছিল মিডিয়াকর্মীরাও। প্রিয় চলচ্চিত্র নায়িকা পারভীন সুলতানা দিতিকে শেষবারের মতো একনজর দেখার ইচ্ছায় অধীর ছিল সবাই। প্রথমটায় বিএফডিসির গেট থেকে অনেককে প্রবেশ করতে না দিলেও পরবর্তীতে এ বাধা-নিষেধ শিথিল করা হয়। সকাল সোয়া ৯টায় দিতির মরদেহ এনে রাখা হয় চত্বরের ছোট মঞ্চে। এ সময় কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে পুরো চত্বর। একে একে সবাই ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় প্রিয় এই নায়িকাকে। শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব মুশফিকুর রহমান গুলজার, চিত্রনায়ক আলমগীর, ওমরসানী, রুবেল, চিত্রনায়িকা চম্পা, অভিনেতা মিজু আহমেদ, শিবা সানু, আহমেদ শরিফ, অভিনেত্রী খালেদা আক্তার কল্পনা, রেবেকা সুলতানা, সঙ্গীতশিল্পী মনির খান ও চিত্রপরিচালক এস এ হক অলিকসহ অনেকে। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, চলচ্চিত্রকে অসম্ভব ভালবাসতেন দিতি। দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি ছিল তার অগাধ ভালবাসা। সবার উদ্দেশে দিতির মেয়ে লামিয়া চৌধুরী বলেন, আমার মা নিজের পরিবারের চাইতে চলচ্চিত্রাঙ্গনের মানুষদের বেশি ভালবাসতেন। খুব আপন ভাবতেন চলচ্চিত্রের মানুষদের। শেষদিকে মায়ের শরীর অনেক অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। আমার মায়ের জন্য সবাই দোয়া করবেন। চিত্রনায়ক আলমগীর বলেন, ‘অমর সঙ্গী’ ছবিতে কাজ করার মধ্য দিয়ে তার সঙ্গে আমার সখ্য গড়ে ওঠে। খুব মিশুক ছিল সে। আমার সন্তানতুল্য এক শিল্পীকে হারালাম। সবাই ওর জন্য দোয়া করবেন। মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, জীবনের শেষপ্রান্তে এসে অনেক অসুস্থতার মধ্যেও দিতি অভিনয় করেছেন। চিত্রনায়িকা চম্পা দিতির কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, আজ কিছু বলার ভাষা নেই। দিতি শুধু একজন অভিনেত্রীই ছিলেন না, একজন ভাল মানুষও ছিলেন। মিজু আহমেদ বলেন, দিতির চলে যাওয়া দেশীয় চলচ্চিত্রাঙ্গনের অভূতপূর্ব ক্ষতি। এ ক্ষতি পূরণ হবে কি-না জানি না। ওমরসানী বলেন, বলার কিছুই নেই। নিজেকে সান্ত¡না দিতে পারছি না এই ভেবে যে দিতি আপু আমাদের মাঝে নেই। পারিবারিক কবরস্থানে দাফন ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান, চিত্রনায়িকা পারভীন সুলতানা দিতির লাশ সোমবার বেলা পৌনে ২টায় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার দত্তপাড়ায় নিজ গ্রামের বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে। প্রিয় নায়িকা দিতির লাশ দেখতে এ সময় হাজারও মানুষ দূরদূরান্ত থেকে দত্তপাড়ায় ছুটে আসেন। এ সময় অনেকেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। রবিবার বিকেল ৪টা ৫ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আশির দশকের এ জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা। তার বয়স হয়েছিল ৫১ বছর। জানা গেছে, দুপুর ১২টায় চিত্রনায়িকা পারভীন সুলতানা দিতির লাশ ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের দত্তপাড়ায় নিয়ে আসা হয়। বাদ জোহর দত্তপাড়ার নিজ বাড়ির সামনে মসজিদের মাঠে তার শেষ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন দিতির মামা মাওলানা দেলোয়ার হোসেন। এর আগে ঢাকার এফডিসিতে জানাজা শেষে লাশবাহী গাড়িটি দিতির মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছায়। জোহরের নামাজের আগে মরদেহ দত্তরপাড়া জামে মসজিদের মাঠে আনা হয়। এ সময় হাজারও নারী-পুরুষ শেষবারের মতো দিতির লাশ দেখতে ভিড় করেন। দিতির পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন ও ভক্তরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- সোনারগাঁ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু নাসের ভূঁইয়া, নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনের সাবেক এমপি আবদুল্লাহ আল কায়সার, সোনারগাঁ থানা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম, সোনারগাঁ থানার ওসি মঞ্জুর কাদের, পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, সনমান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাহাবউদ্দিন সাবু, সোনারগাঁ নাগরিক কমিটির সভাপতি এটিএম কামাল, দিতির ছেলে সাফায়েত হোসেন দীপ্ত চৌধুরী, দিতির বড় ভাই মনির হোসেন, পারভেজ হোসেন, আনোয়ার হোসেন ও টিপুসহ স্থানীয় লোকজন। পারভীন সুলতানা দিতি নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁয়ে ১৯৬৫ সালের ৩১ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮৪ সালে নতুন মুখের সন্ধানের মাধ্যমে দেশীয় চলচ্চিত্রে তার অভিষেক। তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র উদয়ন চৌধুরী পরিচালিত ‘ডাক দিয়ে যাই’। কিন্তু এটি শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। দিতি অভিনীত মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র ছিল আজমল হুদা মিঠু পরিচালিত ‘আমিই ওস্তাদ’। জীবদ্দশায় দুই শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন দিতি। সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘স্বামী স্ত্রী’ চলচ্চিত্রে আলমগীরের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রথমবারের মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন তিনি।
×