ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সরকারী অফিসে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের নির্দেশিকা জারি

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২১ মার্চ ২০১৬

সরকারী অফিসে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের নির্দেশিকা  জারি

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ জাতীয় ঐক্য ও চেতনার পরিপন্থী এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে এমন কিছু প্রকাশের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের নির্দেশিকা জারি করেছে সরকার। সরকারী প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করতে এ নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। ফেসবুক ছাড়াও আর ১০টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ে এ নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, স্কাইপে, গুগল প্লাস, ইমো, ভাইবার, লিংকডইন, ইনস্টাগ্রাম, পিন্টারেস্ট ও হোয়াটসএ্যাপÑ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্ল্যাটফর্মের মধ্যে পড়বে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রবিবার ‘সরকারী প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা-২০১৬’ নামে নির্দেশিকাটি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীব্যাপী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর জনপ্রিয়তা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বাংলাদেশেও ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানিক উভয় পর্যায়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারের এ প্রবণতা লক্ষণীয়। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, কোন সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে বা ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি পরিপন্থী কোন কনটেন্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা যাবে না। এছাড়া বাংলাদেশে বসবাসকারী আদিবাসী, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃগোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্যমূলক বা হেয় প্রতিপন্নমূলক কনটেন্ট প্রকাশ করা যাবে না। কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রকে হেয় প্রতিপন্ন করে এবং লিঙ্গ বৈষম্য বা এ সংক্রান্ত বিতর্কমূলক কোন কনটেন্ট প্রকাশ করা যাবে না বলে নির্দেশিকায় বলা হয়েছে। জনমনে অসন্তোষ বা অপ্রীতিকর মনোভাব সৃষ্টি করতে পারে এমন কনটেন্ট প্রকাশ করতে নিষেধ করা হয়েছে এতে। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৪২ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এর মধ্যে ২৯ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুক্ত আছেন। বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৮০ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেন। আর আট শতাধিক সরকারী অফিসে দাফতরিক কাজে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহার হচ্ছে। নির্দেশনার উদ্দেশ্যের বিষয়ে এতে বলা হয়, সরকারী প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে সরকারী প্রতিষ্ঠান ও কর্মচারীদের করণীয় ও বর্জনীয় নির্ধারণ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। দাফতরিক যোগাযোগ ও মতবিনিময়, সমস্যা পর্যালোচনা ও সমাধান, জনসচেতনতা ও প্রচার, নাগরিক সেবা সহজীকরণ ও উদ্ভাবন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ, জনবান্ধব প্রশাসন ব্যবহার নিশ্চিতকরণ এবং সেবাগ্রহীতার অভিযোগ নিষ্পত্তিতে সরকারী অফিসগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করতে পারবে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এ্যাকাউন্ট পরিচালনার বিষয়ে বলা হয়েছে, এ্যাকাউন্টে কোন ব্যক্তিগত ছবি ব্যবহার করা যাবে না। প্রতিষ্ঠানের কোন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা তিন থেকে পাঁচজনের একটি মডারেটর দল থাকবে। সরকারের কর্মচারীদের ব্যক্তিগত এ্যাকাউন্টকে এই নির্দেশনার বাইরে রাখা হলেও ব্যক্তিগত এ্যাকাউন্ট পরিচালনায় দায়িত্বশীল আচরণ ও অনুশাসন মেনে চলতে নির্দেশনা এসেছে। এছাড়া কনটেন্ট ও বন্ধু নির্বাচনে সতর্কতা অবলম্বন এবং অপ্রয়োজনীয় ট্যাগিং না করতেও সরকারী কর্মচারীদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী, কোন প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মডারেটরকে তাদের পেজ সপ্তাহে কমপক্ষে দু’বার হালনাগাদ করতে হবে। জাতীয় ঐক্য ও চেতনা পরিপন্থী কোন কনটেন্ট প্রকাশ করা যাবে না। সরকারী প্রতিষ্ঠানকে তিন মাসে একবার নিজ দফতরের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের অগ্রগতি ও কার্যকারিতা পর্যালোচনা করার কথা জানিয়ে নির্দেশিকায় বলা হয়, বছর শেষে মূল্যায়নের ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবহারকারীকে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার বা স্বীকৃতির ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। সেরা পোস্ট, সেরা কমেন্ট, সেরা পেজ, সেরা নাগরিক সমস্যা উপস্থাপক, সেরা সমাধান এবং সেরা প্রচারকে বিবেচনায় নিয়ে পুরস্কার দেয়া যেতে পারে বলেও নির্দেশনায় বলা হয়েছে। সরকারী প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা ছাড়াও নির্দেশিকার উদ্দেশ্যের মধ্যে এ মাধ্যম ব্যবহারে সরকারী প্রতিষ্ঠান এবং কর্মচারীদের করণীয় ও বর্জনীয় নির্ধারণ এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা নিশ্চিত করা হয়েছে। সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদফতর, সংস্থা, মাঠ পর্যায়ের সরকারী অফিস, শিক্ষা/প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান এবং গণকর্মচারী নির্দেশিকার ব্যবহারের আওতাধীন। সরকারী প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও নাগরিক সম্পৃক্তিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের নতুন নতুন সুযোগ তৈরি এবং সরকারী কর্মচারীদের মধ্যে একুশ শতকের উপযোগী সক্ষমতা সৃষ্টি করার জন্য ব্যবহার করার কথা বলা হয়।
×