ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘আমি ও রবীন্দ্রনাথ’ নাটকে নিজের অনুভূতিকেই তুলে ধরেছি ॥ নূনা আফরোজ

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ২১ মার্চ ২০১৬

‘আমি ও রবীন্দ্রনাথ’ নাটকে নিজের অনুভূতিকেই তুলে ধরেছি ॥ নূনা আফরোজ

নূনা আফরোজ একাধারে মঞ্চাভিনেত্রী, নাট্যকার ও নির্দেশক। হৃদয়ের টানে থিয়েটারকে আঁকড়ে ধরে আছেন দীর্ঘদিন। নতুন নতুন নাটকে দেশের মঞ্চকে আলোকিত করার পাশাপাশি বিদেশের মাটিতেও প্রশংসা কুড়িয়েছেন। প্রাঙ্গণেমোর নাট্যদলের সিনিয়র সদস্য তিনি। শুরু থেকেই রবীন্দ্রনাথের নাটককে প্রাধান্য দিয়ে দেশের নাট্য আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে সংগঠনটি। তার রচনা ও নির্দেশনায় সম্প্রতি মঞ্চে এসেছে দলের নবম প্রযোজনা ‘আমি ও রবীন্দ্রনাথ’। তিনি নানা বয়সী রবীন্দ্র জীবনের প্রতিচ্ছবি ও তাঁকে আরও ভালভাবে চেনার আগ্রহ জাগিয়েছেন এ নাটকটিতে। মহিলা সমিতি মিলনায়তনে ‘ভাঙ্গা গড়া’ নাট্যোৎসবে ২৩ মার্চ সন্ধ্যা ৭টায় মঞ্চায়ণ হবে নাটকটির পঞ্চম প্রদর্শনী। নাটকটির একটি বিশেষ চরিত্রে অভিনয়ও করবেন তিনি। নাটক সম্পর্কে কথা হয় তার সঙ্গে। ‘আমি ও রবীন্দ্রনাথ’ নাটকের বিষয়বস্তু কি? নূনা আফরোজ : অথৈ একদিন তার বন্ধুর সঙ্গে শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে বেড়াতে যায়। সে একাই দোতলার সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে যায়। হঠাৎ তার সামনে এসে হাজির হন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি অথৈকে কুঠিবাড়ি ঘুরিয়ে দেখার আমন্ত্রণ জানান। এই ঘুরিয়ে দেখানোর নানান স্তরে অথৈয়ের সামনে পরপর হাজির হন ২৯, ২১, ৬৯ ও ৮০ বছর বয়সের রবীন্দ্রনাথ। এই চার বয়সের রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে অথৈয়ের কথা হয় সেই সময়ের রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিজীবন আর তার সৃজনশীলতা নিয়ে। রবীন্দ্রনাথের প্রতিটি বয়সের সঙ্গে অথৈও বদলে যেতে থাকে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্র ও বয়সে। নাটকে ব্যাক্তি রবীন্দ্রনাথ কিভাবে এসেছে? নূনা আফরোজ : শিলাইদহ রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ি আমি যখন প্রথম যাই, সবে তখন দর্শনার্থীদের জন্য দ্বার বন্ধ হয়ে গেছে। অনুরোধের পর যেতে দেয়া হলো। একা দোতলার সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে মনে হচ্ছিল আমি যেন রবীন্দ্রনাথকে দেখছি। এই অনুভব থেকে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে লেখার সূচনা হলো। নাটকে ‘আমি’ কে? নূনা আফরোজ : আমি হচ্ছে একজন গুণমুগ্ধ রবীন্দ্র পাঠক। অথৈ নামের এ নারী পাঠকের বয়স ২৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। রবীন্দ্রভক্ত এ পাঠকের রয়েছে অনেক জিজ্ঞাসা। নাটক সম্পর্কে আপনার অনুভূতি কি? নূনা আফরোজ : নিজের অনুভূতিকেই তুলে ধরেছি এ নাটকে। আমি এতে রবীন্দ্রজীবনী তুলে আনার চেষ্টা করিনি। এখানে আমি কোথাও অতিরঞ্জিত ভাবনা বা লোভনীয় কিছু করতে চাইনি। কারণ, আমি ব্যক্তিগতভাবে একজন রবীন্দ্রভক্ত। সে যায়গা থেকে আমি নিউট্রাল থাকার চেষ্টা করেছি। কোন বিষয়ের ওপর গুরুত্ব এসেছে এ নাটকে? নূনা আফরোজ : কোন বিষয়কে এড়িয়ে যেতে চাইনি। ১ ঘণ্টা ২০ মিনিটের এ নাটকে পুরো রবীন্দ্রনাথকে দেখানো সম্ভব নয়। এতে রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তি জীবনে নারী ও সৃষ্টি যেমন আছে, তেমনি রাগ-অভিমানও আছে। তবে অনেক বিষয়ই এতে পাওয়া যাবে, এমনকি তার ১৫ পুরুষের ইতিহাসও খানিকটা ছুঁয়ে ছুঁয়ে জানতে পারবে দর্শক। ব্যক্তি, প্রেমিক ও সৃষ্টিশীল রবীন্দ্রনাথের এক অংশ তুলে আনা হয়েছে এ নাটকে। আমাদের দেশের মঞ্চ নাটকের অগ্রগতি সম্পর্কে বলুন নূনা আফরোজ : মঞ্চ নাটকে আমরা যে খুব বেশি এগোতে পেরেছি তা কিন্তু নয়। নব্বইয়ের দশকে যেসব নাটক মঞ্চায়ন হতো, মানের দিক থেকে তার থেকে যে উত্তীর্ণ হতে পেরেছি এটা বলতে পারব না। তবে মঞ্চে কিছু নতুন নাটক আসছে সেগুলো সময়ের সঙ্গে তার মিলিয়ে এগোচ্ছে। মঞ্চ নাটক এগিয়ে নিতে প্রতিবন্ধকতা কী? নূনা আফরোজ : শুধু শিল্পকলা একাডেমিতে নাটক মঞ্চায়ন করলে নাটক এগোবে না। নাটককে এগিয়ে নিতে মঞ্চ সঙ্কট সব চেয়ে আমাদের দেশে বড় সমস্যা। দেশের বিভিন্ন স্থানে পর্যাপ্ত মঞ্চ থাকলে নাটকের অগ্রগতি হবে। পাশাপাশি দলগুলোকে মানসম্মত নাটকও তৈরি করতে হবে। -গৌতম পাণ্ডে
×