ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যাম্পাসে নবীন প্রাণের জোয়ার

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২০ মার্চ ২০১৬

ক্যাম্পাসে নবীন প্রাণের জোয়ার

হলুদ রঙের বাসন্তি শাড়ি আর সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে বেশ জাঁকজমকভাবেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পালিত হয়েছিল বসন্ত বরণ উৎসব। এরপর বসন্তের দখিনা হাওয়ার স্পর্শে শীতের শুষ্ক আর রুক্ষ প্রকৃতি আবার নতুন করে জেগে উঠতে শরু করল। আম্রমুকুলের ম ম করা গন্ধে ছেয়ে গেল পুরো ক্যাম্পাস। গাছের শাখায় শাখায় জেগে উঠতে শুরু করল নতুন কচি পাতার দল। কোকিলের কুহু ডাক শুনে যেনো পাপড়ি মেলতে শুরু করল শিমুল আর পলাশের সদ্য ফোটা কলিগুলো। নৈস্বর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় যেন এক কথায় সেজে উঠল নতুন বউয়ের সাজে। এজন্যই তো জাবির শিক্ষার্থীরা আদর করে এর নাম দিয়েছে ‘জানবিবি’। বসন্তের এই অপরূপ সাজ আর মাতাল করা দখিনা বাতাসে হঠাৎ করেই কিসের যেন গুঞ্জন শোনা গেল। দখিনা বাতাসে গাছের সবুজ কচি পাতাগুলো পরস্পরকে ছুঁয়ে দিয়ে কিসের যেন কানাকানি আর ফিসফিসানির সুর তুলে চলল অবিরাম। আকাশের মায়াবী নীলচে রং হয়ে উঠল আরও উজ্জ্বল। কেমন যেন একটা চাপা উল্লাসে ভরে উঠল ক্যাম্পাসের আকাশ বাতাস। ঠিক যেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ম্যাচ জেতার আগ মুহূর্তে উল্লাসে ফেটে পড়ার অপেক্ষা। হ্যাঁ অবশেষে রহস্যোদ্ধার হলো। দেখতে দেখতে চলে এলো ২৯ ফাল্গুন ১৪২২ বঙ্গাব্দ। ১২ মার্চ ২০১৬ খ্রিস্টাব্দ। ঋতুর রাজা বসন্ত যেন এ দিনটিতেই প্রকৃত অর্থে পূর্ণতা পেল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। কেননা এদিনটিতেই শীতের সকালে যেমন হাজার হাজার অতিথি পাখির কিচির মিচির কলকাকলিতে ঘুম ভাঙ্গে জাবির অধিবাসীদের ঠিক তেমনি করেই জাবির আকাশ বাতাস মুখরিত করে ক্যাম্পাসের সবুজ আঙ্গিনায় পা রাখল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫তম ব্যাচের নবীন শিক্ষার্থীরা। তাদের উৎসবমুখর পদচারণায় আবার নতুন করে জেগে উঠল অমর একুশে, শহীদ মিনার, মুক্তমঞ্চ, বটতলা, ক্যাফেটারিয়াসহ ৬৯৭.৫৬ একরের প্রতিটি প্রান্তর। পরিবারে নতুন কোন সদস্য এলে পরিবারের অন্য সদস্যরা যেমন আনন্দে আটখানা হয়ে ওঠে। একের পর এক চলতে থাকে মিষ্টিমুখ করার পর্ব। নতুন সদস্যটিকে নিয়ে যেমন আনন্দের কোন সীমা পরিসীমা থাকে না তেমনিভাবে জাবি পরিবারের এই নবীন সদস্যদের নিয়েও আনন্দ উৎসবে মেতে উঠল এর প্রবীণ সদস্যরা। বিশেষ করে যারা এই নবীন শিক্ষার্থীদের আগমনের আগের দিনটি পর্যন্ত ক্যাম্পাসের সবচেয়ে জুনিয়র শিক্ষার্থী ছিল অর্থাৎ ৪৪তম ব্যাচ তাদের আনন্দটাই বোধহয় সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে। যদিও ক্যাম্পাসের সবচেয়ে জুনিয়র শিক্ষার্থীর তকমাটা হারিয়ে ফেলায় তারা আগের দিন পেছনে ফেলে আসা একটি বছরের স্মৃতিময় দিনগুলোকে মনে করে একটু নস্টালজিক হয়ে পড়ে। দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে ভাবতে থাকে এইতো সেদিন মাত্র ক্যাম্পাসে এলাম। আর এরই মধ্যে একটা বছর পার হয়ে গেল। অনেকেই আবার আবেগী হয়ে ফেইসবুকের নিউজ ফিড ভরিয়ে তোলে একের পর এক আবেগময়ী স্ট্যাটাসে। যাই হোক এরই মধ্যে আবার তারা ব্যস্ত হয়ে পড়ে তাদের পরিবারের নবীনতম সদস্যটিকে সাদরে বরণ করে নেয়ার জন্য। প্রতিটি বিভাগে সাজ সাজ রব পড়ে যায় তাদের শুভাগমনকে উপলক্ষ করে। জাবির সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের প্রবীণদেরকেও এদিন দেখা গেল বেশ ব্যস্ত হয়ে ছুটোছুটি করতে। কেউ বুকের বাতাস দিয়ে একের পর এক বেলুন ফুলিয়ে চলেছে। কেউ ব্যস্ত ব্যানার টাঙানো নিয়ে। কেউবা আবার রঙিন জড়ি কাপড় দিয়ে গেট সাজানোয় ব্যস্ত। নবীনদের জন্য উপহার কেনা, কেক তৈরি করা, ফুল দিয়ে রুম সাজানো। ব্যস্ততা আর ব্যস্ততা। তারপরও পরিবারের নতুন সদস্যদের বরণ করে নেয়ার জন্য এই ব্যস্ততাতেই যেন বুকের ভিতর লুকিয়ে ছিল নাম না জানা এক আনন্দময় অনুভূতি। অতঃপর বিভাগটির সম্মানিত শিক্ষক মহোদয়দের ব্যাজ পরিয়ে এবং ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়ার পর ৪৪তম আবর্তনের শিক্ষার্থীরা একই কায়দায় ব্যাজ পরিয়ে আর ফুল দিয়ে বরণ করে নিল তাদের পরিবারের নবীনতম সদস্যদের। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মন খোলা আলোচনায় উঠে এল অফুরন্ত ভালবাসা আর হাতে হাত রেখে আরও সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়। ‘প্রত্যেকটা নতুন ব্যাচের শিক্ষার্থীরাই অনেক আশা আর স্বপ্ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পা রাখে যার মধ্য দিয়ে তারা দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের একজন দায়িত্বশীল নাগরিকে পরিণত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এসে যে অবাধ স্বাধীনতা তারা পায় সেটা যেন তাদের বিপথগামী না করে বরং ভাল কিছু করার প্রেরণা যোগায় সেটাই দেশ ও জাতি তাদের কাছে সর্বদা প্রত্যাশা করে। আর বিশেষ করে আমরা যারা তোমাদের ইমিডিয়েট সিনিয়র তোমরা ক্যাম্পাসে আসার সঙ্গে সঙ্গে তোমাদের প্রতি আমাদের মধ্যেও তৈরি হয় দায়িত্ববোধ।’ এভাবেই ৪৪তম ব্যাচের মাঈনুদ্দিন শামসুজ্জামানের কথায় উন্মোচিত হয় নবীনদের নিয়ে প্রবীণদের ভাবনার জগত। এবার তাহলে ৪৫তম ব্যাচের নবীন শিক্ষার্থীদের কাছেই শোনা যাক তাদের অনুভূতির কথা। কথা হলো সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের আফসানা ইয়াসমীন মোনালিসার সঙ্গে। ‘জাবি ক্যাম্পাসে দিনের একেক সময় একেক রকম অভাবনীয় পরিবেশ তৈরি হয়। নতুন শিক্ষার্থী হিসেবে নতুন নতুন বন্ধুদের সঙ্গে জীবনের নতুন এই অধ্যায়ের শুরুটা বলতে গেলে সত্যিই অনেক চমৎকার। আমরা একেকজন দেশের একেকটা প্রান্ত থেকে এসেছি কিন্তু আমাদের মধ্যে অতি অল্প সময়ের মধ্যে ঐক্য আর ভ্রাতৃত্বের যে বন্ধন গড়ে উঠেছে তা আমাদের আগামী দিনের পথচলাকে আরও মসৃণ আর উজ্জ্বল করবে বলেই আশা প্রকাশ করছি।’ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে নবীনদের জন্য অনেক আনন্দময় ঘটনার একটি হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেয়া প্রবেশিকা অনুষ্ঠান। সেই প্রবেশিকা অনুষ্ঠানে নবীনদের পক্ষ থেকে তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে ইংরেজী বিভাগের অংশুমান রশিদ বললেন, ‘জাহাঙ্গীরনগরের মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ আমাদের মধ্যে যে মুগ্ধতা তৈরি করেছে তা কখনও কমবে বলে মনে হচ্ছে না। ক্যাম্পাসে এসে সবার মধ্যে যে প্রাণের স্ফুরণ আর সহযোগিতার মনোভাব লক্ষ্য করছি তাতে আমরা সত্যিই অভিভূত। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ধারণা এতদিন আমরা অন্তরে লালন করেছি, যে স্বপ্ন আমাদের এখানে নিয়ে এসেছে। এই বিশাল ক্যাম্পাসের নৈস্বর্গিক সৌন্দর্য আর জাবি পরিবারের সকলের সান্নিধ্যে আমাদের সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ লাভ করবে এটাই আমাদের নবীনদের প্রত্যাশা।’ নবীনদের প্রাণবন্ত আড্ডা, গান, পড়াশোনা, সেলফি তোলা আর উচ্ছ্বল খুনসুটিতে আবারও ভরে উঠুক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পথপ্রান্তর। আলোকিত হয়ে উঠুক তাদের ভবিষ্যত পথচলা। জানবিবির সকল নবীনদের জন্য রইল অনেক অনেক শুভকামনা। শরিফুল ইসলাম সীমান্ত
×