ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আবারও তাগিদ দেবে সংসদীয় কমিটি

সুন্দরবনে নৌযান চলাচলে কোন সুপারিশই আমলে নেয়া হয়নি

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২০ মার্চ ২০১৬

সুন্দরবনে নৌযান চলাচলে কোন সুপারিশই আমলে নেয়া হয়নি

নাজনীন আখতার ॥ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে নৌযান চলাচলে জাতিসংঘ-বাংলাদেশ যৌথ মিশন ও সংসদীয় কমিটির কোন সুপারিশই আমলে নেয়া হয়নি। শ্যালা নদীতে তেলবাহী নৌযান দুর্ঘটনার পর বিভিন্ন মহল থেকে তেলবাহী নৌযানগুলোর ক্ষেত্রে পরিবেশ ছাড়পত্র নেয়া বাধ্যতামূলক করার ওপর বার বার জোর দেয়া হলেও তা নিয়ে কার্যকর কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। আগামীতে এ ধরনের নৌযান দুর্ঘটনার আশঙ্কা মাথায় রেখে সুন্দরবনকে বাঁচাতে সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়কে আবারও তাগিদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। আজ রবিবার জাতীয় সংসদে অনুষ্ঠিতব্য কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সংসদীয় কমিটির সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে জ্বালানি তেলবাহী নৌযান দুর্ঘটনার ফলে সুন্দরবনের পরিবেশ ও প্রতিবেশের ওপর দীর্ঘমেয়াদী কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে সে বিষয়ে বাংলাদেশ-জাতিসংঘ যৌথ বিশেষজ্ঞ দলের কর্মরতদের সঙ্গে খুলনা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি বিভাগকে সম্পৃক্ত করে একটি সমীক্ষা চালানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। সমীক্ষা চালানোর ওপর একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যৌথ মিশন সে সময় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে বেশ কিছু সুপারিশও করে। তবে পরবর্তীতে এ নিয়ে আর কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এ বিষয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. হাছান মাহমুদ শনিবার জনকণ্ঠকে বলেন, শ্যালা নদীতে দুর্ঘটনার পর সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের বিষয়টি আলোচনায় আসে। জাতিসংঘ-বাংলাদেশ যৌথ মিশন একটি সুপারিশ প্রতিবেদনও দিয়েছে। তবে এর কোন সুপারিশই বাস্তবায়ন করা হয়নি। এটা আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বিষয়, একা কোন মন্ত্রণালয় বা বন বিভাগের পক্ষে সুপারিশ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, দুর্ঘটনার পর সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে তেলবাহী নৌযানগুলোকে সুন্দরবন দিয়ে চলতে পরিবেশ ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক করার ওপর জোর দেয়া হয়। সেই সুপারিশও বাস্তবায়ন করা হয়নি। বর্তমানে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি নিয়ে নৌযানগুলো চলাচল করছে। অথচ এটা তো বুঝতে হবে যে, সাধারণ নৌযান দুর্ঘটনার চেয়ে তেলবাহী নৌযানগুলো দুর্ঘটনায় পড়লে সেখানে পরিবেশের ওপর কতটা মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তিনি বলেন, রবিবার সংসদীয় কমিটির বৈঠকে পরিবেশ ছাড়পত্রসহ অন্যান্য সুপারিশ বাস্তবায়নের ওপর আবারও জোর তাগিদ দেয়া হবে। এদিকে সংসদীয় কমিটির আগের একটি বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, বন ও পরিবেশ সচিব পরিবেশ ছাড়পত্র দেয়ার ক্ষেত্রে আইন সংশোধনের জটিলতা তুলে ধরেন। তবে কমিটির সভাপতি ড. হাছান মাহমুদ এর বিরোধিতা করেন। পরিবেশ সচিব বলেন, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) ১২ (১) ধারায় সব ধরনের শিল্প স্থাপন ও প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে পরিবেশগত ছাড়পত্র গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ১৯৯৭ এ জাহাজ ও নৌযান চলাচলের ক্ষেত্রে পরিবেশগত ছাড়পত্র দেয়ার কোন প্রবিধান রাখা হয়নি। অভ্যন্তরীণ নৌপথে চলাচলকারী তেলবাহী নৌযানগুলোকে পরিবেশগত ছাড়পত্র দেয়ার আওতায় আনতে হলে আইন ও বিধিমালায় সংশোধন আনতে হবে। সে সময় হাছান মাহমুদ বলেন, অভ্যন্তরীণ নৌপথে চলাচলকারী তেলবাহী নৌযানগুলোকে পরিবেশগত ছাড়পত্রের আওতায় আনতে হলে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন সংশোধনের প্রয়োজন হবে এটা সঠিক নয়। বিধিমালা আর আইন এক কথা নয়। আইনের ভিত্তিতে বিধিমালা প্রণীত হয়। সেক্ষেত্রে বিধিতে কিছু না থাকলে তা সংযোজন করা যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, পরিবেশ আইন অনুযায়ী এ বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারাধীন। পরিবেশ আইন বাস্তবায়নের দায়িত্ব হচ্ছে পরিবেশ অধিদফতরের। এ আইন অনুযায়ী, যেখানে পরিবেশ বিপর্যয় বা পরিবেশ ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে সেখানে বিধিমালার আলোকে পরিবেশ অধিদফতর ক্ষমতাবলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে। এদিকে যৌথ বিশেষজ্ঞ দল প্রাথমিক কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে সংসদীয় কমিটিকে দেয়া প্রতিবেদনে জানিয়েছে, শ্যালা নদীতে তেলবাহী নৌযান দুর্ঘটনায় প্রায় ৩ দশমিক ৮ লাখ লিটার ফার্নেস অয়েল ছড়িয়ে পড়ায় তেলের প্রভাবে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ প্রজাতির উদ্ভিদ, মাটি, পানি, মৎস্য ও জলজ প্রাণী এবং বণ্য প্রাণীর ওপর কোন প্রভাব পড়েছে কী না বা কী ধরনের প্রভাব পড়েছে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সুন্দরবনের শ্যালা নদী, মূল খাল ও শাখা খালে ১২টি করে ৩৬টি নমুনা প্লট স্থাপন করা হবে। বন বিভাগের সহায়তায় ওই প্লটগুলো ৩ বছরব্যাপী পরিদর্শন করে পর্যবেক্ষণ করা হবে। যৌথ মিশনের সুপারিশে বলা হয়, অভ্যন্তরীণ নদ-নদীগুলোর নৌ চলাচল ব্যবস্থার উন্নতি করতে হবে। সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচলের জন্য ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে জাহাজ চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বিশেষ করে রাতে, কুয়াচ্ছান্ন দিনের বেলা জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখতে হবে। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বনের মধ্যে জাহাজ নোঙর করা যাবে না। ডাবল হল কার্গো ছাড়া কোন নৌযানে তেল পরিবহন করা যাবে না। অয়েল পলিউশন রেসপন্স বিশ্বমানের হতে হবে। এ বিষয়ে সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষ, কোস্টগার্ড, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ এবং পরিবেশ অধিদফতরের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা যেতে পারে। এছাড়া তেল পরিবহনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সব আইনের যথাযথ প্রয়োগের ওপর জোর দেয়া হয় সুপারিশ প্রতিবেদনে।
×