ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কক্সবাজারে এমপি বদির অবরুদ্ধ নাটক নিয়ে কানাঘুষা

প্রকাশিত: ০১:০৫, ১৯ মার্চ ২০১৬

কক্সবাজারে এমপি বদির অবরুদ্ধ নাটক নিয়ে কানাঘুষা

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ উখিয়া-টেকনাফের সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি আবারও আলোচনার শিরোনাম হয়ে উঠেছেন। ইতোপূর্বে বিভিন্ন ভাবে বিতর্কিত ও বহুল আলোচিত এমপি বদিকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে অনেক। অতীতে বিভিন্নজনকে মারধরের কারণে খবরের কাগজে শিরোনাম হলেও এবার কিন্তু তার উল্টো। তিনি এবার কাউকে পেটাননি। নাজেহালও করেননি কাউকে। জেলা ছাত্রলীগের পক্ষে অবাঞ্চিত ঘোষণা এবং তাকে (বদি) অবরোধ করা নাটকের বিষয়কে ঘিরে কক্সবাজারের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেন আবদুর রহমান বদি এমপি। এদিকে হঠাৎ করে এমপি আব্দুর রহমান বদি নিজ এলাকায় অবরুদ্ধ হওয়ার ঘটনা নিয়ে চলছে নানা রাজনৈতিক মেরুকরণ। অবরোধ নাটকের পেছনে কী রহস্য লুকিয়ে রয়েছে-তা খতিয়ে দেখতে দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী এবং সাধারণ সম্পাদকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয় আ’লীগের নেতা-কর্মীরা। সাংগঠনিকভাবে যাছাই বাছাই করা হচ্ছে তিনি অবরুদ্ধ হয়েছেন, নাকি কোন প্রার্থীর স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য স্বেচ্ছায় অবরোধের নাটক সৃষ্টি করেছেন। স্থানীয়ভাবে এ বিষয়ে বলাবলি শুরু হলে জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ইতোমধ্যে এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছেন বলে একাধিক সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে। জানা যায়, বৃহস্পতিবার স্থানীয় আ’লীগ আয়োজিত শাহপরীরদ্বীপে ছিল জেলা আওয়ামী লীগের নব নির্বাচিত সভাপতি এ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তাফা ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের গণ সংবর্ধনা। ওই অনুষ্টানে জেলা নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি আমন্ত্রিত ছিলেন উখিয়া টেকনাফের সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি। জেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা কোন বাঁধা ছাড়া শাহপরীরদ্বীপ সংবর্ধনাস্থলে পৌছে গেলেও কিন্তু আব্দুর রহমান বদি নাকি সাবরাং এলাকায় শত শত নেতা-কর্মীর অবরোধের মুখে পড়েন। যারা ওই অবরোধে অংশ নেন, তারা হচ্ছে টেকনাফ যুবলীগের বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী নুর হোসেনের সমর্থক। তারাই মুলত আব্দুর রহমান বদিকে ঘন্টাকয়েক ধরে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে সংবর্ধনা অনুষ্টান শেষ হলে অবরোধ তুলে নেয়া হয়। অর্থ্যাৎ ওই অনুষ্টানে এমপি বদি অংশ গ্রহন করতে পারেননি এবং নৌকার প্রার্থী সোনা আলীর পক্ষে ভোট চাইতেও হয়নি তাকে। এখানে মজার বিষয় হচ্ছে- অনুষ্টানে যাওয়ার আগে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান আব্দুর রহমান বদিকে ফোন দিলে তিনি টেকনাফ আছেন বলে জানান। পরে টেকনাফ পৌঁছে মুজিবুর রহমান বদির সঙ্গে দেখা করলে তিনি তাকে রওনা দিয়ে পিছনে পিছনে যাওয়ার কথা দেন। অল্পক্ষণ পর এমপি বদির অবরোধ নাটকের আভাস পায় জেলা আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা। জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি সাধারণ সম্পাদককে অবরোধ করেননি সাবরাং এর মানুষ। অথচ প্রতিদিন যিনি যাওয়া আসা করেন, সেই এমপি আব্দুর রহমান বদিকেই অবরোধ করে রাখেন তারা। এ নিয়ে টেকনাফে ও পুরো জেলায় হাসিঠাট্টার খোরাক হয়েছে। কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান বলেন, আব্দুর রহমান বদি সংবর্ধনা অনুষ্টানে না যাওয়ার জন্যই মুলত অবরোধ নাটকটি করেছেন। তিনি বলেন, এমপি বদি নৌকার প্রতিকের বিরুদ্ধে কাজ করছেন। তিনি সরাসরি দল এবং সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তাফা বলেন, এমপি বদি দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থানের বিষয়টি প্রমাণিত। বিষয়টি কেন্দ্রে জানানো হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেয়ার কথাও জানান জেলা সভাপতি। এ ব্যাপারে এমপির মুঠোফোনে কল করেও রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এর আগে সাংসদ আব্দুর রহমান বদিকে কক্সবাজার জেলায় অবাঞ্চিত করার হুমকি দিয়েছেন কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ জয় ও সাধারণ সম্পাদক ইমরুল হাসান রাশেদ। বৃহস্পতিবার কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরুল হাসান রাশেদ ফেসবুক স্ট্যাটাসে ‘হাইব্রীড’ আওয়ামীলীগ উল্লেখ করে এমপি বদিকে ছাত্রলীগের যে কোন অনুষ্ঠান থেকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেন। পরে সাধারণ সম্পাদকের সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানিয়ে এমপি বদিকে লাল কার্ড দেখিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ জয়। তাঁরা ভবিষ্যতে এমপি বদিকে পুরো কক্সবাজার থেকে অবাঞ্চিত করার মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে জানান। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ জয় বলেন- এমপি বদি আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে কোন রকম যোগাযোগ রক্ষা করেন না। দলীয় কর্মীরা অন্য দুই সাংসদকে কাছে পেলেও এমপি বদি থাকেন দূরে দূরে। আসন্ন স্থানীয় নির্বাচনে এমপি বদির বিতর্কিত ও রহস্যজনক ভূমিকা রয়েছে। টেকনাফের সাবরাং’য়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা করলেও এমপি বদির রহস্যজনক ভূমিকায় সেখানকার মানুষ আজ দ্বিধা-দ্বন্দ্বে। সাবরাং’য়ে এমপি বদি বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ইসমাঈল মেম্বারের পক্ষে গোপনে কাজ করছেন। টেকনাফ সদর ইউনিয়নে সাবেক ছাত্রনেতা ও বর্তমান চেয়ারম্যান নুরুল আলমের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে এমপি বদি বিতর্কিত শাহজাহানের পক্ষে কাজ করছেন। টেকনাফের হোয়াইক্যং এ সাবেক ছাত্রনেতা ফরিদুল আলম জুয়েলের বিপক্ষে গিয়ে এমপি বদি বিএনপি-জামাত সমর্থিত প্রার্থী মৌলানা নুর আহম্মদ আনোয়ারীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এছাড়াও টেকনাফে আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে কোনভাবেই কাজ করছেন না এমপি বদি এমনটা অভিযোগ জেলা ছাত্রলীগ সভাপতির। তিনি আরও বলেন- যদি স্থানীয় নির্বাচনে টেকনাফে আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থীরা কোন কারণে হেরে যান তাহলে এমপি বদিকে পুরো কক্সবাজার থেকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হবে।
×