ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দলীয় প্রতীকে ইউপি নির্বাচন

প্রকাশিত: ০৫:১২, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

দলীয় প্রতীকে ইউপি নির্বাচন

স্থানীয় সরকারের প্রাথমিক স্তর হলো ইউনিয়ন পরিষদ। শুক্রবার স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। পৌরসভা নির্বাচনের মতো এই স্তরের নির্বাচনেও দলীয় ভিত্তিতে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য পদে প্রার্থী হবেন নির্দলীয়। জানা গেছে, ছয় ধাপে ভোট সম্পন্ন হবে। ২২ মার্চ প্রথম ধাপে ৭৫২ ইউপিতে। ৩১ মার্চ দ্বিতীয় ধাপে ৭১০টি। ২৩ এপ্রিল তৃতীয় ধাপে ৭১১টি। ৭ মে চতুর্থ ধাপে ৭২৮টি, ২৮ মে পঞ্চম ধাপে ৭১৪টি এবং ৪ জুন ষষ্ঠ ধাপে ৬৬০টি ইউপিতে ভোট হবে। মনোনয়ন জমা দেয়ার শেষ সময় ২২ ফেব্রুয়ারি এবং প্রত্যাহারের শেষ সময় ২ মার্চ। দেশে ৪ হাজার ২৭৫টি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পদে নিবন্ধিত ৪০টি দল প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারবে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ারও সুযোগ থাকছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে কোন ভোটারের স্বাক্ষর জমা দেয়া লাগবে না। তবে রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দলের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক বা সমমর্যাদার ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়ন থাকতে হবে। গত ডিসেম্বর মাসে কয়েক দফায় প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনেকটা উৎসবমুখর পরিবেশেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল দেশের ২৩৪টি পৌরসভার নির্বাচন। যেহেতু দলীয় প্রতীক তাই সাধারণ মানুষের মধ্যে ওই নির্বাচনে জাতীয় নির্বাচনের মতো ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। বলা চলে নির্বাচনী উত্তাপ-উত্তেজনা ছিল সর্বত্রই। নিবন্ধিত প্রায় সব রাজনৈতিক দলই ওই নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। পৌরসভা নির্বাচন সুষ্ঠু ও সংঘাতমুক্তভাবে সম্পন্ন হওয়ায় সবার প্রত্যাশা ইউপি নির্বাচনেও এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। অতীতে ইউপির মতো স্থানীয় সরকারের এই স্তরে নির্দলীয়ভাবে নির্বাচন হলেও পরোক্ষভাবে প্রতিটি রাজনৈতিক দলই প্রার্থী মনোনয়ন দিত। দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে তৃণমূল পর্যায়ে রাজনৈতিক দলগুলো উন্নয়ন কাজে অংশ নিতে পারবে। অনেক সময় স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এই ক্ষেত্রে প্রতিনিধির দলীয় পরিচয় থাকলে দলকে নজরদারির আওতায় রাখা সহজ হবে। স্থানীয় নির্বাচনে বরাবরই মুক্ত-গণতন্ত্র বিরাজ করে। এ সময় মানুষের মধ্যে এক ধরনের সৌহার্দ্য-প্রীতির সম্পর্ক বিরাজ করে। তারপরও যেহেতু প্রথমবারের মতো এই স্তরে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন তাই নানা শঙ্কাও কাজ করে। দেখতে হবে দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীকে নির্বাচন যেন সংঘাত বা জোরজবরদস্তির পর্যায়ে না পৌঁছে। গ্রাম পর্যায়ে মানুষের মধ্যে যে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি রয়েছে তা যেন দলীয় বিদ্বেষে আক্রান্ত না হয়। সেটা হলে তা হবে খুবই দুঃখজনক। স্থানীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে অনেক অদলীয় সৎ ও সমাজহিতৈষী ব্যক্তি নির্বাচিত হয় এবং স্থানীয় উন্নয়নে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ পায়। দলীয় মনোনয়নের কারণে সেই পথ যেন বন্ধ হয়ে না যায় সেদিকেও খেয়াল রাখা দরকার। প্রতিটি দলেরই উদ্দেশ্য যখন মানুষের কল্যাণ, তখন মানুষকে তার অধিকার আদায়ের প্রশ্নেই দেশে উৎসবমুখর ভোটগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন আগামীর পথচলার শিক্ষা গ্রহণ করবে। তাতে আগামী নির্বাচনগুলোকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে কমিশন আরও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে। গণতন্ত্রমনা মানুষ মনে করে গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় এই নির্বাচন দৃষ্টান্ত হিসেবে কাজ করবে। স্থানীয় নির্বাচন সর্বতোভাবে গণতান্ত্রিক ও অহিংসভাবে অনুষ্ঠিত হবে, এটাই সবার প্রত্যাশা।
×