ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শুল্ক বাড়ার প্রতিক্রিয়া

চিনির বাজার অস্থির, কেজিতে দাম বেড়েছে ১৫ টাকা

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

চিনির বাজার অস্থির, কেজিতে দাম বেড়েছে ১৫ টাকা

কাওসার রহমান ॥ সরকারী সিদ্ধান্তের কারণেই দেশের চিনির বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। শুল্ক বৃদ্ধির পর সরকারী প্রতিষ্ঠান দাম বাড়িয়ে দেয়ায় চিনির বাজারে সৃষ্টি হয়েছে এ অস্থিরতার। পাইকারি বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিকেজি চিনির দাম বেড়েছে ৮ থেকে ১০ টাকা। খুচরা বাজার ভেদে পণ্যটির দাম বেড়েছে ১৫ টাকা পর্যন্ত। সরকারী মিলে পরিশোধিত চিনির দাম বাড়ায় পণ্যটির দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। দেশের বাজারে সাধারণত সরকারী মিলের লালচে দানার চিনি ও বেসরকারী মিলের সাদা দানার চিনি পাওয়া যায়। বর্তমানে উভয় ধরনের চিনির দামই বেড়েছে। রাজধানীর কওরান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী ইব্রাহিম বলেন, ২০-২৫ দিন আগে প্রতিবস্তা (৫০ কেজি) চিনির দাম ছিল এক হাজার ৭০০ টাকা থেকে এক হাজার ৭৫০ টাকা। অর্থাৎ প্রতিকেজির দাম ছিল ৩৪-৩৫ টাকা। গত সপ্তাহে প্রতিবস্তা চিনির পাইকারি দাম ছিল দুই হাজার ২০০ থেকে দুই হাজার ২৫০ টাকা। আর প্রতি কেজি চিনির দাম পড়ছে ৪৪-৪৫ টাকা। বর্তমানে প্রতিবস্তা সাদা চিনির দাম দুই হাজার ১৫০ টাকা ও প্রতিবস্থা লাল দানার চিনির দাম দুই হাজার ২০০ টাকা। অর্থাৎ প্রতিকেজি চিনির দাম পড়ছে ৪৩ থেকে ৪৪ টাকা। ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে মিলগেটে প্রতিকেজি চিনির দাম ৪৪ টাকা। রেশনের চিনি খোলাবাজারে বিক্রি হওয়ায় সরকারী চিনির দাম কিছুটা কম। এ প্রসঙ্গে চিনি ব্যবসায়ী আনোয়ার হাবিব বলেন, সরকার চিনির দাম কেজিতে আট টাকা বাড়িয়েছে। ফলে বেসরকারী মিল মালিকরাও চিনির দাম বাড়িয়েছেন। সরকারী গুদামে অনেক চিনি জমে আছে বললেও এখন তার পরিমাণ কমেছে। জানা যায, দেশীয় চিনির চাহিদা বাড়াতে ও আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। সরকার প্রতিকেজি চিনিতে দাম বাড়িয়েছে আট টাকা। এ কারণে বেসরকারী চিনির দামও বেড়েছে। বর্তমানে পাইকারি বাজারে সাদা চিনি প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৪ টাকা। আর লাল দানার চিনি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৪ টাকা ৫০ পয়সা। বর্তমানে রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতিকেজি খোলা চিনি ৪৮ টাকা বিক্রি হয়। বর্তমানে দেশের চাহিদার সিংহ ভাগ চিনি সরবরাহ করে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ১৯টি চিনি কল। ফলে তারা দাম বাড়ালে তার প্রভাব বাজারে পড়বেই। সরকার চিনির দাম না কমালে চিনির দাম কমবে না বলেই মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর হাতিরপুল বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম বলেন, পাইকারি বাজারে যা দাম বেড়েছে, তার চেয়ে তিন-চার টাকা বাড়িয়ে খুচরা বাজারে চিনি বিক্রি করা হচ্ছে। আমরা বেশি দামে কিনলে বেশি দামে বিক্রি করি। এ প্রসঙ্গে মৌলভী বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজি গোলাম মাওলা বলেন, এখন চিনির দাম বাড়ার সময় না। সরকারের স্টকে অনেক চিনি মজুদ রয়েছে। কিছুদিন পর নতুন চিনি আসবে। স্টক কমানোর জন্যই মূলত আমদানি কমানোর চিন্তা করেছে সরকার। এ কারণে আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। আর স্টকের চিনির দামও বাড়িয়েছে। আর আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে চিনির দাম সমন্বয় করতেও পণ্যটির দাম বাড়ানো হতে পারে। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার (ফাও) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত চার মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম কমেছে। সবচেয়ে বেশি কমেছে চিনি ও গুঁড়া দুধের দাম। এফএও এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৫ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে দর পতনের তালিকায় শীর্ষে আছে চিনি এবং দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্য। গত ডিসেম্বরের তুলনায় জানুয়ারিতে চিনি মূল্যসূচক ৪ দশমিক ১ শতাংশ কমেছে। গত ৪ মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো চিনির দাম কমেছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ব্রাজিলে চিনির উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে বিশ্বেব্যাপী এই পণ্যের সরবরাহ অনেক বেড়েছে। ফলে কমেছে এর দাম। বর্তমানে দেশের বার্ষিক চিনির চাহিদা প্রায় ১৫ থেকে ১৬ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমানে চালু থাকা ৫টি রিফাইনারি ও সরকারী ১৫টি চিনিকল এই চিনির চাহিদা পূরণ করছে। সরকারী চিনিকলগুলোতে বছরে প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার টন চিনি উৎপাদিত হয়। বাকিটা বিদেশ থেকে অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে রিফাইনারিগুলোতে পরিশোধনের মাধ্যমে পূরণ করা হচ্ছে। অর্থাৎ দেশের চিনির মোট চাহিদার প্রায় ৯০ ভাগ রিফাইনারিগুলোর মাধ্যমে পূরণ করা হচ্ছে। বাকি ১০ ভাগ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন ও আমদানিকারকরা পূরণ করে থাকে।
×