ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তরায় হিজড়াদের হামলায় এক হিজড়া গুলিবিদ্ধ ॥ গ্রেফতার ৬

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

উত্তরায় হিজড়াদের হামলায় এক হিজড়া গুলিবিদ্ধ ॥ গ্রেফতার ৬

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর উত্তরায় দোকান থেকে টাকা তোলার সময় মোটরসাইকেলযোগে ফিল্মি স্টাইলে হিজড়াদের হামলায় এক হিজড়া গুলিবিদ্ধ হয়েছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই হিজড়া আশঙ্কামুক্ত। এ ঘটনায় ৬ হিজড়াকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। হামলাকারীরা নকল হিজড়া বলে অভিযোগ করেছে হামলার শিকার হওয়া হিজড়ারা। হিজড়াদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র থাকার বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করছে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে বারোটায় রাজধানীর উত্তরার সাত নম্বর সেক্টরে রাজউক মার্কেটে ঘটনাটি ঘটে। ঘটনার সময় কয়েক হিজড়া মিলে দোকান থেকে টাকা তুলছিল। এ সময় দুই মোটরসাইকেলযোগে কয়েক হিজড়া সেখানে হাজির হয়। কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই মোটরসাইকেলযোগে আসা হিজড়ারা গুলি চালায়। এতে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে ভর্তি করা হয়। আহত হিজড়া আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত চিকিৎসকরা। হাসপাতালে আহত হিজড়ার সহযোগী রিনা সাংবাদিকদের বলেন, আহত হিজড়ার নাম সেজুতি ওরফে মানিক (৩৫)। তারা নিয়মমাফিক ওইদিন সেখানে বিভিন্ন দোকান থেকে টাকা তুলছিলেন। এ সময় হঠাৎ করেই সীমা, কচি, স্বপ্নাসহ কয়েক হিজড়া দুটো মোটরসাইকেলে করে সেখানে হাজির হয়। কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা আমাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে সেজুতি গুলিবিদ্ধ হয়। সেজুতির পিঠ ও পেটে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। সেজুতির সহযোগী হিজড়া মাসুমা বলছিলেন, স্বপ্না ওরফে খায়রুল মূলত পুরুষ। কিন্তু সে নিজেকে হিজড়া সাজিয়ে রাখে। হিজড়া সেজে নানা অপরাধমূলক কর্মকা- চালায়। গুলশান ও বনানীসহ ঢাকার অভিজাত এলাকায় অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে গ্রেফতারের বাইরে থাকতেই সে হিজড়া সেজে থাকে। খায়রুলের একটি নিজস্ব দল রয়েছে। দলটি বিভিন্ন দোকান থেকে মোটা অঙ্কের টাকা জোরপূর্বক আদায় করে থাকে। আমরা টাকা তুলতে যাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে খায়রুল ও তার সহযোগীরা ঘটনাটি ঘটায়। স্থানীয়রা জানান, প্রথমে তারা ছিনতাই বা ডাকাতি হচ্ছে বলে ধারণা করেছেন। পরে হিজড়াদের গুলি চালানোর দৃশ্য দেখে সত্যিই অবাক হয়ে যান। এ সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তেই আশপাশের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। লোকজন ভয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে থাকেন। হিজড়াদের প্রকাশ্যে গুলি চালানোর ঘটনা ইতোপূর্বে শোনা যায়নি। এমন ঘটনায় পুরোপুরি অবাক হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সেখানে উপস্থিত লোকজন। গুলি চালিয়ে পালানোর সময় পুলিশ, জনতা ও ব্যবসায়ীরা ধাওয়া করে সরূপা (৩৩), পায়েল (৩৮), কচি (৩৫), সোনালী (৩৪), জোনাকী (৩২) ও মল্লিকাকে (৩৭) নামে ৬ হিজড়াকে ধরে ফেলে। পরে তাদের কড়া পাহারায় থানা হেফাজতে নেয়া হয়। এ ব্যাপারে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে জানিয়ে উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি আলী হোসেন খান জনকণ্ঠকে বলেন, গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে কোন অস্ত্র, গোলাবারুদ উদ্ধার হয়নি। অস্ত্র, গোলাবারুদের উৎস সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তবে জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা এ সম্পর্কে কোন তথ্য দেয়নি। এদিকে ছয় হিজড়াকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে শতাধিক হিজড়া থানা ঘেরাও করেছিল। হালে হিজড়ারা বেপরোয়া হারে চাঁদাবাজি করে জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। দুই বছর আগে এমন চাঁদাবাজিকালেই গ্রেফতারকৃত কচি গ্রুপের হিজড়াদের ওপর আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে তুরাগ থানা এলাকায় হামলার ঘটনা ঘটেছিল। হামলার সঙ্গে গ্রেফতারকৃতরা জড়িত নয় বলে জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেছে। উল্টো গ্রেফতারকৃতরা আহত হিজড়া দলটি কর্তৃক হামলার শিকার হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছে। তাদের ফাঁসিয়ে দিতেই হামলার পর আহত হওয়ার ভান করে হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হয়েছে হিজড়া সেজুতি।
×