ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিষ্ঠুরতা!

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

নিষ্ঠুরতা!

রাজধানীর ফুটপাথের চা-দোকানি মধ্যবয়সী বাবুলের মর্মান্তিক মৃত্যু স্থানীয় পুলিশ সদস্যদের অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। যে কেরোসিন চুলায় চা বানিয়ে বাবুল জীবিকা নির্বাহ করত, সেই চুলার আগুনে পুড়েই সে মারা গেল। অভিযোগ উঠেছে পুলিশ সদস্যরা তার কাছ থেকে চাঁদা না পেয়ে জ্বলন্ত চুলায় লাথি মারে। তাতে তার শরীরে আগুন ধরে যায়। পরে ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে তার মৃত্যু হয়। বাবুলের শরীরের পঁচানব্বই শতাংশই দগ্ধ হয়। শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে পুলিশের ওপর সমাজ নির্ভরশীল। বিশেষ করে জনগণের জানমালের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। পুলিশের ওপর সাধারণ নাগরিকরা যেমন ভরসা করেন, তেমনি পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগেরও অন্ত নেই। পুলিশের দায়িত্বহীনতা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা প্রশ্ন তোলা হয়ে থাকে। পুলিশের ভাল কাজ ছাপিয়ে তার দুর্নীতি ও কিছু গর্হিত অপরাধের কথা ফলাও করে প্রচারিত হওয়ার সংস্কৃতি থেকে সমাজ বেরিয়ে আসতে পারেনি। ফলে এটাও সত্য সমাজে পুলিশের যে ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছে তা মোটেই সম্মানজনক নয়। সাধারণ মানুষের মনে পুলিশ সম্বন্ধে এক মিশ্র অনুভূতি কাজ করে। পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থার জায়গাটি এখনও প্রশ্নবিদ্ধ। পুলিশের সোর্সও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। তারা পুলিশের অনৈতিক কর্মকা-ের সহযোগীর ভূমিকায় নেমেছে। তবে একতরফাভাবে কেবল পুলিশের দোষ দেয়া সমীচীন নয়। পুলিশের সীমাবদ্ধতা ও প্রতিবন্ধকতার বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে। তবে দুষ্টের দমনে যে বাহিনীর কাজ করার কথা তারা যদি নিজেরাই দুষ্টচক্র হয়ে ওঠে তাহলে বিষয়টি দাঁড়ায় রক্ষক হয়ে ভক্ষকের সমতুল্য। পুলিশের উৎকোচ গ্রহণের প্রবণতা এবং উৎপীড়কের ভুমিকাটি বহুল উচ্চারিত। যদিও সামাজিকভাবে দুর্নামের ঢোলই বেশি বাজে; প্রশংসনীয় ভূমিকা চাপা পড়ে যায়। নিকট অতীতে অপরাধ দমনে পুলিশের চ্যালেঞ্জ বহুলাংশে বেড়ে গেছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পুলিশ অপরাধীর পেছনে ছোটে- পুলিশের পেশার এই বৈশিষ্ট্যের দিকে সমাজের সহানুভূতির দৃষ্টি তেমন নেই। পুলিশের সদাচরণ ও সেবার মান বৃদ্ধি এবং মানসিকতা পরিবর্তনের মাধ্যমে সুনাম বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা আমরা বার বার বলে আসছি। আমাদের প্রত্যাশা, পুলিশ হয়ে উঠুক সমাজবান্ধব। প্রসঙ্গত, রাস্তার ফুটপাথ দখল করে ছোটখাটো ব্যবসাপাতি বিষয়ে আমাদের নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। উপয়ান্তর না পেয়েই দরিদ্র মানুষ রাজধানীতে ছুটে আসছে, এটা সত্য। এমন একটা ধারণা প্রতিষ্ঠিত যে একবার ঢাকায় চলে যেতে পারলে রোজগারের একটা না একটা ব্যবস্থা হবেই। সেটা বৈধ নাকি অবৈধ, নিয়মের অধীন নাকি অনিয়মের বৃত্তে বন্দী- এই বিবেচনাটি আর বড় হয়ে উঠছে না। ঢাকার বাইরে রয়েছে গোটা দেশ। সমাধানের এমন একটি পথ অবশ্যই আমাদের খুঁজে বের করতে হবে যাতে করে গ্রাম বা মফস্বল শহরের মানুষকে বাধ্য হয়ে ঢাকায় এসে যেনতেন উপায়ে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি না করতে হয়। অনিয়ম ও অবৈধ কারবারের সমান্তরালে চলছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অনেক সদস্যের অনিয়মতান্ত্রিক উপায়ে অর্থোপার্জনের অপতৎপরতা। ভীতি প্রদর্শন করে অর্থ সংগ্রহ, চাঁদাবাজির সংস্কৃতি থেকে না বেরুতে পারলে দেশে সত্যিকারার্থে আইনের প্রয়োগ সুসম্পন্ন হবে না। চা-দোকানির মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের প্রত্যাহার করে নেয়ার মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হলো যে, সংশ্লিষ্ট বাহিনী অপরাধ সংঘটনকারীর ব্যাপারে কঠোর। মানুষ আশা করছে বাবুলের মর্মান্তিক মৃত্যুর জন্য দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিচারের সম্মুখীন করা হবে। সেইসঙ্গে এটাও মানুষের চাওয়া যে, জনসাধারণের সঙ্গে আচরণে পুলিশ মানবিক হবে। এ জাতীয় নিষ্ঠুরতার পুনরাবৃত্তি রোধে পুলিশকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।
×