ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যুত ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর গ্যাস ক্ষেত্র পরিদর্শন

হরিপুর ও টেংরাটিলায় গ্যাস উদ্গিরণে জনমনে আতঙ্ক

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

হরিপুর ও টেংরাটিলায় গ্যাস উদ্গিরণে জনমনে আতঙ্ক

সালাম মশরুর, সিলেট অফিস ॥ সিলেটের হরিপুর ও সুনামগঞ্জের টেংরাটিলা গ্যাস ফিল্ডের মহামূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ প্রতিদিন মাটির নিচ থেকে আপনা-আপনি বের হয়ে হাওয়ায় মিশে বিনষ্ট হচ্ছে। মাটির ফাটল দিয়ে বেরিয়ে আসা এই প্রাকৃতিক গ্যাস জানমালের ব্যাপক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্যাসের বুদবুদ থেকে যত্রতত্র আগুন জ্বলছে। বছরের পর বছর টেংরাটিলা গ্যাস ফিল্ড এলাকায় ভূগর্ভস্থ গ্যাস বিভিন্ন স্থানে মাটির ফাটল দিয়ে বের হচ্ছে। গত ক’দিন ধরে সিলেটের হরিপুর গ্যাস ফিল্ড এলাকায় মাটিতে ফাটল সৃষ্টি হয়ে একই অবস্থায় গ্যাস উদ্গিরণ হচ্ছে। ঝুঁকির মুখে পড়েছে জনবসতি। এদিকে, শুক্রবার দুপুরে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার ক্ষতিগ্রস্ত টেংরাটিলা গ্যাস ফিল্ড পরিদর্শন করেছেন বিদ্যুত ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। জানা গেছে, তেল কোম্পানি নাইকো গ্যাস উত্তোলনের জন্য টেংরাটিলা গ্যাস ফিল্ডে ২০০৫ সালে খনন কাজ শুরু করে। এক পর্যায়ে খননকালে ওই বছরের ৭ জানুয়ারি ও ২৪ জুন দু’দফা বিস্ফোরণ ঘটে। এতে খনন কাজ বন্ধ হয়ে যায়। দু’দফা অগ্নিকান্ডে ৩ বিসিক গ্যাস পুড়ে যায় এবং কমপক্ষে ৫২ বিসিক রিজার্ভ গ্যাস ধ্বংসসহ টেংরাটিলা গ্রাম ও বাজার, আজবপুর, শান্তিপুর, কৈয়াজুরি ও গিরিশনগর গ্রামের ঘরবাড়ি, গাছপালা ও ফসলাদির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বিস্ফোরণের পর থেকে এলাকার রাস্তাঘাট, স্কুল, বাজার, ফসলের জমির ফাটল ও নলকূপ দিয়ে নিয়মিত গ্যাস উদ্গিরণ হচ্ছে। এদিকে দু’দফা ব্লো-আউটের পর ক্ষতিপূরণ নিয়ে নাইকো ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা শুরু হয়। বাপেক্স ও পেট্রোবাংলার পক্ষে মেমোরিয়াল তৈরির জন্য মামলা দু’টি পরিচালনার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক কাউন্সিল প্রতিষ্ঠান আমেরিকার ওয়াশিংটনের ‘ফোলি হগ এলএলপি’র ৭ সদস্যের প্রতিনিধি দল ৩ ফেব্রুয়ারি টেংরাটিলা পরিদর্শনে আসেন। তারা গ্যাসকূপ খননকালে দু’দফা ব্লো-আউটের ফলে দুর্দশাগ্রস্ত এলাকাবাসীর সাক্ষাতকার গ্রহণ এবং প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত ও গ্যাসফিল্ডের ছবি সংগ্রহের কাজ করছেন। ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিনিধি দল সেখানে অবস্থান করার কথা রয়েছে। আরবিট্রেশন ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক নির্ধারিত সিডিউল অনুযায়ী বাপেক্স ও পেট্রোবাংলাকে আগামী ২৫ মার্চের মধে ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ সংবলিত কাগজপত্র দাখিল করতে বলা হয়েছে। ২০০৫ সালের পর টেংরাটিলা এলাকায় নতুন করে আর কূপ খনন হয়নি। এদিকে সিলেটের হরিপুর গ্যাসফিল্ডের উতলারপার এলাকায় একটি পরিত্যক্ত গ্যাস কূপের পাশে নতুন করে ফাটল দেখা দিয়েছে। সেই ফাটল দিয়ে প্রাকৃতিক গ্যাস ছড়িয়ে পড়ায় এলাকার জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। ম্যাচের কাঠিতে টোকা পড়লেই যত্রতত্র জ্বলে উঠছে আগুন। এ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে গ্যাসফিল্ড কর্তৃপক্ষ এলাকায় ‘বিপজ্জনক’ সতর্কবার্তা জারি করেছেন। জানা গেছে, সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের হরিপুর উতলারপার এলাকায় ১৯৫৬ সালে গ্যাস অনুসন্ধানের লক্ষ্যে প্রথম কূপ খননকালে বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটে। এ সময় অনুসন্ধানে ব্যবহৃত সকল যন্ত্রপাতি ভূগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। পরবর্তীতে এ স্থানে আর কূপ খনন করা সম্ভব হয়নি। বিস্ফোণের পর ভূমিধসে সেখানে একটি গভীর পুকুর সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে পানিতে সর্বদা বুদ্বুদ দেখা যায়। যেখানে দিয়াসলাইয়ের কাঠি জ্বালালেইে পানিতে আগুন ধরে যায়। পুকুরের পাশে অবস্থিতি একটি টিলাভূমিও পোড়ামাটির আকার ধারণ করে আছে। সে টিলায় ৫০ বছরেও কোন লতাপাতা গজায়নি। ওই স্থানে মাটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে এবং ওই ফাটল দিয়েই গ্যাস উদ্গীরণ হচ্ছে, যা আশপাশে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে। নিজস্ব সংবাদদাতা সুনামগঞ্জ থেকে জানান, জ্বালানি ও বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, নাইকো দুর্নীতির জড়িতরা কানাডিয়ান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। সেখানে তারা বলেছেন, দুর্নীতির মাধ্যমে তারা চুক্তি করেছিলেন। খালেদা জিয়ার সময় তৎকালীন জ্বালানিমন্ত্রী মোশারফ তার ব্যাপারে তারা আদালতে সাক্ষী দিয়েছেন এবং কানাডার আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। শুক্রবার দুপুরে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার টেংরাটিলা গ্যাস ফিল্ডের বিদেশী বিশেষজ্ঞ দলের ক্ষয়ক্ষতির জরিপ কার্যক্রম পরিদর্শনকালে তিনি এসব কথা বলেন। পরে তিনি স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তদের গণশুনানিতে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় দোয়ারাবাজার উপজেলা চেয়ারম্যান ইদ্রিছ আলী বীরপ্রতীক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুনজুর মোহম্মদ শাহরিয়ার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম, এডিশনাল এসপি আব্দুল মোমেন ও দোয়ারাবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ সেলিম রেজাসহ নাইকো কোম্পানির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
×