ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৯ মার্চ কাউন্সিল করলে আপত্তি নেই গণপূর্ত বিভাগের

কাউন্সিলের জন্য বিএনপি এখনও ডিএমপির অনুমতি পায়নি

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

কাউন্সিলের জন্য বিএনপি এখনও ডিএমপির অনুমতি পায়নি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ১৯ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় কাউন্সিলের জন্য গণপূর্ত বিভাগের অনুমতি পেল বিএনপি। শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ কথা জানান। তবে তিনি জানান, গণপূর্ত বিভাগের অনুমতি পাওয়া গেলেও এখনও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অনুমতি মেলেনি। সংবাদ সম্মেলনে রিজভী জানান, ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল উপলক্ষে সারাদেশের বিভিন্ন শাখা থেকে কাউন্সিলরের নাম চেয়েছে বিএনপি। একই সঙ্গে শাখাগুলো থেকে আন্দোলন-সংগ্রামে নিহতদের নামের তালিকাও চাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের আগেই ১৯ মার্চ জাতীয় কাউন্সিল করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। তিনটি স্থানের নাম দিয়ে এ আয়োজনের জন্য গণপূর্ত বিভাগ ও পুলিশের অনুমতিও চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে কাউন্সিল করার জন্য গণপূর্ত বিভাগ বলেছে, তাদের আপত্তি নেই, এটা এখন পুলিশের অনুমোদনের বিষয়। রিজভী বলেন, আমরা জাতীয় কাউন্সিলের প্রস্তুতির লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে কাউন্সিলরদের যে ক্যাটাগরি আছে- যেমন জেলার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা, থানা ও পৌরসভার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা আমাদের কাউন্সিলর। এর বাইরে জেলা কমিটিগুলো দুজন মহিলা প্রতিনিধির নাম কাউন্সিলর হিসেবে কেন্দ্রে সুপারিশ করে পাঠাবে। সেজন্য চিঠি দিয়েছি। এছাড়া জেলা ও মহানগর কমিটিগুলো পুনর্গঠনে কেন্দ্রীয় নেতাদের জেলা সফরসংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে। রিজভী বলেন, জাতীয় কাউন্সিলে শোক প্রস্তাবের মধ্যে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে যারা বিগত আন্দোলনসহ সরকারের নির্যাতনে এবং বিভিন্ন সময়ে মারা গেছেন, তাদের নামের সর্বশেষ তালিকা ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পাঠানোর জন্য আরেকটি চিঠি দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি কমিটি গঠন এখন প্রক্রিয়াধীন। তা হলেই গণমাধ্যমকে জানানো হবে। বেশকিছু সাম্প্রতিক ঘটনায় পুলিশের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনে রিজভী বলেন, ভোটারবিহীন গদি আটকে রাখা শাসকগোষ্ঠী দেশকে চরম অরাজকতার লীলাভূমিতে পরিণত করেছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে বিরোধী দল নির্মূল অভিযানে লেলিয়ে দিয়ে সরকার তাদের বুকের মাপটা বড় করে দিয়েছে। দেশে এখন আইনের রক্ষকরা ভক্ষকে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, গোটা দেশ এখন অগ্নিগর্ভ। যদি জনগণের মনের কথা, বেদনার কথা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী উপলব্ধি করতে না পারে, তাহলে জনগণের ক্ষোভ যে কোন মুহূর্তে সুনামির ন্যায় আছড়ে পড়ে দস্যু দলের ন্যায় আচরণকারী বর্তমান সরকারকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। রিজভী বলেন, গত কয়েক বছর বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের সঙ্গে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এখন বিবেকহীন অবিশ্বাস্য রকম বেপরোয়া ‘আউট ল’ তে পরিণত হয়েছে। সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সদা তৎপর র‌্যাব-পুলিশ এখন সাধারণ মানুষকে নানাভাবে হয়রানি করছে। চাঁদাবাজি, জুলুম, প্রহার, নিরীহ মানুষকে আটক করে পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে মামলা দেয়া বা ভয় দেখানো, ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, আদায় না হলে হত্যা করাসহ পৈশাচিক অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সদস্যরা। রিজভী বলেন, চাঁদা না দেয়ায় বৃহস্পতিবার মিরপুরের চা দোকানি বাবুল মাতব্বরের শরীরে পুলিশ আগুন দিয়ে হত্যা করেছে। আমরা এ ঘটনার নিন্দা জানাই এবং দলের পক্ষ থেকে তার রুহের মাগফেরাত কামনা করি। একই সঙ্গে এ ঘটনায় দোষীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। রিজভী বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে দেশে ন্যায়, সভ্যতা, সুবিচারবোধ বলে কিছু নেই। কারণ, জবাবদিহিহীন সরকারের কোন নৈতিকতাবোধ থাকে না। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর বেআইনী ও দায়িত্বহীন আচরণের কারণে জানুয়ারি মাসে গড়ে প্রায় প্রতিদিন একজন করে শিশু নিহত হয়েছে। তিনি বলেন, বাইসাইকেল যেমন বিড়াল হতে পারে না তেমনি জোর করে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা কোন সরকার কখনই জনকল্যাণ ও জনগণকে শান্তি এবং স্থিতি দিতে পারে না। অপরিণামদর্শী অপকর্মই এ সরকারের প্রধান বৈশিষ্ট্য। এরা গোটা দেশটাকে অপরাধ জগতে পরিণত করেছে। এদের কাছে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মানবিক অধিকার, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের কোন মূল্য নেই। এরা নিজেদের ক্ষমতায় থাকতে প্রয়োজনে দেশের স্বাধীনতাকে বিকিয়ে দিতেও দ্বিধা করে না। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক কাজী আসাদুজ্জামান, স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সহ-তথ্যগবেষণা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, সহ-শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম, সহ-প্রচার সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি, আসাদুল করীম শাহিন প্রমুখ। যত বাধাই আসুক কাউন্সিল যথাসময়েই- মাহবুব ॥ বিএনপির কাউন্সিল নিয়ে সরকার বাধা সৃষ্টি করছে অভিযোগ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব) মাহবুবুর রহমান বলেছেন, যত বাধাই আসুক জাতীয় কাউন্সিল যথাসময়েই হবে। শুক্রবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে গণতান্ত্রিক সংসদ নামক একটি সংগঠন আয়োজিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আর এ গনির স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, পুলিশ এখন বন্ধুর বেশে শত্রুর মতো আচরণ করছে। মাহবুবুর রহমান বলেন, দলের জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে আমরা গণতান্ত্রিক চর্চা করছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় এটা নিয়ে সরকার সাংঘাতিক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, দুর্নীতি আর সঙ্কট আজ গোটা দেশকে গ্রাস করে ফেলেছে। ভাগ-ভাটোয়ারার সংস্কৃতির কারণে গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি ঘটেছে। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি চৌধুরী রাজীব হাসান রিপনের সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জিয়া নাগরিক ফোরামের সভাপতি মিয়া মোহাম্মদ আনোয়ার প্রমুখ।
×