ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জিয়া দালাল আইন বাতিল করে দ-িত যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দেয় ॥ কেএম শফিউল্লাহ

প্রকাশিত: ০৭:৫৮, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

জিয়া দালাল আইন বাতিল করে দ-িত যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দেয় ॥ কেএম শফিউল্লাহ

নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর, ৪ ফেব্রুয়ারি ॥ সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের চেয়ারম্যান, সাবেক সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল (অব) কেএম শফিউল্লাহ বীরউত্তম বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনও শেষ হয়নি। সকল যুদ্ধাপরাধীর বিচার করতে হবে। এ বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ শান্তি পাবে না। এ জন্য বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা যুদ্ধাপরাধীমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। তিনি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সেই সোহাগপুর বিধবাপল্লী সংলগ্ন কাকরকান্দি হাই স্কুল মাঠে আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্যদানকালে ওই কথা বলেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরার পরপরই যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হয়েছিল। ১৯৭২ সালে ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে ১২ জানুয়ারি দালাল আইন করেছিলেন। ওই দালাল আইনের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের শনাক্ত করে তাদের বিচার কাজ শুরু হয়েছিল। অনেকেই সে সময় বলেছিল, যারা নাকি শনাক্ত হয়েছিল তাদের মধ্যে অনেকেই অপরাধ করেনি। তাই বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আরও একটি কমিশন গঠন করে তাদের যাচাই-বাছাই করে ২৬ হাজার লোক বাদ দিয়ে ১১৭৫২ জন লোককে শনাক্ত করে বিচারের সম্মুখীন করা হয়েছিল। সেই বিচারে ২২ জনের মৃত্যুদ- ও ফাঁসির আদেশ হয়েছিল। কিন্তু ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ৩১ ডিসেম্বর জিয়াউর রহমার যখন ক্ষমতায় এলো তখন দালাল আইন বাতিল করা হয়েছিল। দালাল আইন বাতিল করাতে সাজাপ্রাপ্ত সবাইকে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। কেএম শফিউল্লাহ জামায়াতে ইসলামকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমরা যখন যুদ্ধ করেছি তখন তারা পাকিস্তানের পক্ষে আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। এই সংগঠনের লোক কখনও বাঙালী হতে পারে না। আমরা তাদের নাগরিকত্ব চাই না। আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। এদেশে আমরা থাকব, পাকিস্তানপন্থি কেউ থাকতে পারবে না। তিনি বলেন, যাদের রক্তে দেশ স্বাধীন হয়েছে, আমরা একটি স্বাধীন ভুখ- পেয়েছি, তাদের রক্তে রঞ্জিত পবিত্র এ ভূমি বিধবাপল্লী হতে পারে না। এখানকার সবাই বীরকন্যা। আজ থেকে আর বিধবাপল্লী নয়। এখন থেকে সোহাগপুর গণহত্যাস্থলের নতুন নাম হবে বীরকন্যা পল্লী। সমাবেশে সেক্টর কমান্ডাস ফোরামের মহাসচিব হারুন হাবিব বলেন, দুঃখের সঙ্গে বলছি বাংলাদেশের কিছু নেতানেত্রী পাকিস্তান যেভাবে কথা বলেছে, ঠিক তারা সেভাবেই কথা বলছে। তারা নতুন করে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক তুলছে। আমরা সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের পক্ষ থেকে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বলতে চাই যারা পাকিস্তান সরকারের পক্ষ হয়ে এদেশে নতুন করে কথা বলার চেষ্টা করছে, মুক্তিযুদ্ধকে কটাক্ষ করছে, তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সময় এসেছে। তিনি পাকিস্তানীদের অবিলম্বে বাংলাদেশের মানুষের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তারা যদি ক্ষমা চাইতে ব্যর্থ হয় তাহলে সরকারের কাছে দাবি জানাব অবিলম্বে পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ফোরামের ভাইস-চেয়ারম্যান, সাবেক সেনাপ্রধান লে জে. (অব) হারুন অর রশিদ, মহাসচিব মুক্তিযোদ্ধা লেখক-কলামিস্ট হারুন হাবীব ও যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক একে আজাদ পাটোয়ারি। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সভাপতি আমজাদ হোসেন। ওইসময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান, জেলা ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সদস্য সচিব হারেজ আলী, মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মাওলা, ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুল্লাহ তালুকদার মুকুল প্রমুখ। ওইসময় শেরপুর, জামালপুর ও নালিতাবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয় প্রগতিশীল সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে বিকেলে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম নেতৃবৃন্দ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত সেই সোহাগপুর বিধবাপল্লী পরিদর্শন করেন এবং শহীদ জায়া, বীরাঙ্গনাসহ পরিবারের অন্যদের মধ্যে একটি করে কম্বল, শাড়ি ও কিছু নগদ টাকা তুলে দেন। ওই সময় তারা শহীদ স্মৃতি ফলকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। ওইসময় তারা সোহাগপুরের বিধবাদের সঙ্গে ৪৪ বছর পর দেখা করার জন্য বিধবা মায়েদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম তাদের পাশে থাকবে বলেও ঘোষণা দেন নেতৃবৃন্দ। উল্লেখ্য, ১৯৭১ সনে ২৫ জুলাই এ দেশীয় দোসরদের সহায়তায় পাকহানাদার বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সীমান্তবর্তী নিভৃতপল্লী সোহাগপুরে। সেদিন ১৮৭ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যাসহ নারীদের পাশবিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে এলাকাটি বিধবাপল্লী হিসেবে পরিচিতি পায়। অন্যদিকে ওই ঘটনার দায়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতা আলবদর প্রধান মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসি হয়।
×