ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বার্সিলোনার গোলবন্যায় ভেসে গেল ভ্যালেন্সিয়া

প্রকাশিত: ০৭:২৩, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

বার্সিলোনার গোলবন্যায় ভেসে গেল ভ্যালেন্সিয়া

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ রেকর্ডের পাতা ওলট-পালট করা নিত্য ঘটনা বার্সিলোনার। লিওনেল মেসি, লুইস সুয়ারেজ, নেইমারদের কল্যাণে সম্প্রতি আরও রেকর্ড ভাঙ্গা গড়ার খেলায় মেতেছে কাতালানরা। এই যেমন বুধবার রাতে একাধিক রেকর্ড নতুন করে গড়েছে বার্সা ও দলটির তারকা ফুটবলাররা। স্প্যানিশ কোপা ডেল রে ফুটবলের সেমিফাইনালের প্রথম লেগের ম্যাচে ভ্যালেন্সিয়াকে ৭-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছে বার্সিলোনা। ন্যুক্যাম্পে স্বাগতিক বার্সার হয়ে হ্যাটট্রিকসহ চার গোল করেন উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার লুইস সুয়ারেজ। হ্যাটট্রিক করেন মেসিও। তিনি করেন তিন গোল। এই জয়ে আসরের ফাইনাল অনেকটাই নিশ্চিত করে ফেলেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বার্সা। ১০ ফেব্রুয়ারি সেমির দ্বিতীয় লেগে আনুষ্ঠানিকতার ম্যাচ খেলবে দু’দল। আরেক সুপারস্টার নেইমার পেনাল্টি থেকে গোল করার সহজ সুযোগ নষ্ট না করলে বার্সার জয়ের ব্যবধান আরও বড় হতে পারত। হাঁটুর চোটের কারণে মেসি ম্যাচটি খেলবেন কি না, তা নিয়ে কিছুটা সংশয় ছিল। তবে সব সন্দেহ সংশয় উড়িয়ে দিয়ে মাঠে নামেন আর্জেন্টাইন তারকা। শুধু মাঠে নামাই নয়, দারুণ এক হ্যাটট্রিক করে দলের বিশাল জয়ে নেতৃত্ব দেন। নিজেদের মাঠে ম্যাচের সপ্তম ও ১২ মিনিটে দুই গোল করে সূচনাটা দারুণ করেন সুয়ারেজ। ২৯ মিনিটে মেসি করেন নিজের প্রথম গোল। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার আগমুহূর্তে পেনাল্টি বক্সের মধ্যে মেসিকে ট্যাকল করার দায়ে সরাসরি লালকার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন ভ্যালেন্সিয়ার ডিফেন্ডার সোরডান মুস্তাফি। তবে পেনাল্টি থেকে গোল করার সহজ সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন ব্রাজিলিয়ান অধিনায়ক নেইমার। বিরতির পর শুরু থেকেই ভ্যালেন্সিয়াকে খেলতে হয় ১০ জনের দল নিয়ে। আর এ সুযোগে প্রতিপক্ষের ওপর আরও চড়াও হন ‘এমএসএন’ ত্রয়ী। ৫৮ ও ৭৪ মিনিটে দুই গোল করে মেসিই আগে পূর্ণ করেন হ্যাটট্রিক। সুয়ারেজের গোলক্ষুধা তখনও মেটেনি। ৮৩ ও ৮৮ মিনিটে আরও দুইবার প্রতিপক্ষের জালে বল জড়িয়ে উল্লাসে ফেটে পড়েন সাবেক লিভারপুল তারকা। এই ম্যাচে অনেক নাটকীয় ঘটনা ও রেকর্ড ভাঙ্গা গড়া হয়েছে। দারুণ কাকতালীয় ঘটনার জন্ম দিয়েছেন সুয়ারেজ। এক ম্যাচে চার গোল করে সুয়ারেজ ফিরিয়ে এনেছেন ১৯৫৬ সালের স্মৃতি। অবাক করার মতো বিষয় হলো ১৯৫৬ সালে লা লিগায় বার্সিলোনার সাত গোলের ম্যাচে চার গোল করেছিলেন আরেক স্ট্রাইকার। তার নামও ছিল লুইস সুয়ারেজ। পরশু ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের সঙ্গে অনেক মিল পাওয়া যায় ১৯৫৬ সালে এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে সেই লা লিগার ম্যাচের। সেই পুরনো সুয়ারেজ ছিলেন স্প্যানিশ মিডফিল্ডার। বার্সিলোনায় খেলেছেন ১৯৫৫ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত। দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়ে ১৯৬০ সালের ব্যালন ডি’অরও জিতেছিলেন এই স্প্যানিশ সুয়ারেজ। এই সময়ের সুয়ারেজ গড়েছেন দারুণ এক রেকর্ড। ইউরোপের সেরা পাঁচটি লীগের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে মৌসুমের তিন প্রধান প্রতিযোগিতায় (লা লিগা, কোপা ডেল’রে ও চ্যাম্পিয়ন্স লীগ) হ্যাটট্রিক করার অনন্য কৃতিত্ব অর্জন করেছেন উরুগুয়ের এই স্ট্রাইকার। হ্যাটট্রিক করে লিওনেল মেসিও স্পর্শ করেছেন দারুণ এক মাইলফলক। পেশাদার ফুটবল ক্যারিয়ারে সব মিলিয়ে করেছেন ৫০০ গোল। ৪৯৮ গোল নিয়ে খেলতে নেমেছিলেন বার্সা ডায়মন্ড। বর্তমানে তার গোলসংখ্যা ৫০১। এর মধ্যে বার্সিলোনার হয়েই করেছেন ৪৩৬ গোল। আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের জার্সি গায়ে ৪৯ ও যুব দলের হয়ে করেছেন বাকি ১৬ গোল। বার্সিলোনাও ছুঁয়েছে একটি মাইলফলক। এবারের মৌসুমে এখন পর্যন্ত কাতালানরা করেছে ১০০ গোল। এর মধ্যে ৭৫টিই এসেছে মেসি, সুয়ারেজ ও নেইমারের কল্যাণে। সুয়ারেজ এখন পর্যন্ত করেছেন সর্বোচ্চ ৩৩ গোল। মেসি ও নেইমার ২১টি করে। দুর্দান্ত একটি ম্যাচ শেষে সুয়ারেজ বলেন, এটা এ মৌসুমে আমাদের সম্পূর্ণ ম্যাচগুলোর একটি ছিল। আমাদের সব পরিকল্পনাই কাজ করেছে। সম্ভাব্য সেরা খেলাটা খেলতে আপনি সব সময়ই সাধ্যমতো সব কিছু করেন। কিন্তু এই রাতটি সব পাওয়ার রাতগুলোর একটি ছিল। এর কৃতিত্ব পুরো দলের।
×