ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

চারদিনের কারুমেলা শুরু ॥ চার শিল্পীকে সম্মাননা

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

চারদিনের কারুমেলা শুরু ॥ চার শিল্পীকে সম্মাননা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ উন্মুক্ত আঙিনায় শোভা পাচ্ছে শোলার তৈরি রকমারি সব কারুশিল্প। শোলার ছাঁচ ও রঙের প্রলেপে গড়া ময়ূরটি মেলে ধরেছে সুদৃশ্য পেখম। ময়ূরটির সঙ্গে এক টেবিলে শোভা পাচ্ছে কবুতর, দোয়েল পাখিসহ নানা কিছু। শোলার তৈরি এমন নানা কিছুর পাশেই দেখা মেলে মাটির তৈরি পুতুলে সাজানো এক খ- আবহমান গ্রাম বাংলা। ঢেঁকিতে ধান ভানছে পল্লীবধূ, লাঙ্গলের সাহায্যে ফসলের মাঠে চলছে কৃষকের চাষাবাদ কিংবা জল সংগ্রহে কলসি কাঁখে নদীর পানে ছুটছে গাঁয়ের বধূÑ এমন সব দৃশ্যের দেখা মেলে এই আঙিনায়। দর্শনার্থীরাও যেন মুগ্ধ হয়ে আপন শিকড়কে অবলোকনের সুযোগটি পেয়ে যান এই আয়োজনে। লোকজশিল্পের এই মনকাড়া সম্ভারে এখন সেজে উঠেছে ধানম-ির ৭/এ সড়কের জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক বিদ্যাপীঠ। বৃহস্পতিবার থেকে এখানে শুরু হলো পাঁচ দিনের কারুমেলা ১৪২২। মাঘের বিকেলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চার শ্রেষ্ঠ কারুশিল্পীকে জানানো হয় সম্মাননা। প্রদান করা হয় পুরস্কার। যৌথভাবে কারুমেলা ও কারুশিল্পীদের পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদ ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। এ দেশের হারিয়ে যাওয়া হস্ত ও কারুশিল্প অন্বেষণ, ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার এবং কারুশিল্পীদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ২০১০ সাল থেকে প্রতিষ্ঠান দুটি সম্মিলিতভাবে এ আয়োজন করে আসছে। এ বছরের আয়োজনে শ্রেষ্ঠ কারুশিল্পী পুরস্কার ১৪২২ প্রদান করা হয় চার শিল্পীকে। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন টাঙ্গাইলের বয়নশিল্পী রাজ্জাক। পটুয়া কামরুল হাসান স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন ঢাকার শাঁখারীবাজারের শঙ্খশিল্পী অনুপ নাগ। শিল্পী রশীদ চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন কুড়িগ্রামের শোলাশিল্পী নিত্য মালাকার। অধ্যক্ষ তোফায়েল আহমদ স্মৃতি পুরস্কার দেয়া হয়েছে রাজশাহীর পুতুলশিল্পী বিজলী রানী পালকে। পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রত্যেককে সম্মননা স্মারক, প্রশংসাপত্র ছাড়াও নগদ ৫০ হাজার টাকা করে অর্থ পুরস্কার দেয়া হয়। যৌথভাবে মেলা উদ্বোধন করেন মানবাধিকার কর্মী এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল এবং লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরের পরিচালক রবীন্দ্রগোপ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চাকমা বয়নশিল্পের কারুশিল্পী শরতমালা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের লিটু ও জাতীয় কারুশিল্প পরিষদের সভাপতি চন্দ্রশেখর সাহা। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী কারুশিল্পী পুরস্কার ও কারুমেলার প্রেক্ষাপট নিয়ে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন। বক্তব্য রাখেন কারুশিল্প পরিষদের মনিরা ইমদাদ। এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, এ ধরনের আয়োজন নতুন করে নিজেদের চিনতে শেখায়। কারুশিল্পীরা বাঙালীর শিকড়ের পরিচয়কে তুলে ধরেছেন তাদের সৃষ্ট শিল্পের মাধ্যমে। উন্মোচন করেছেন আত্মোপলব্ধি আত্মপরিচয়ের জায়গাটি। উপস্থাপন করেছেন হাজার বছরের গ্রাম বাংলার সংস্কৃতিকে। কারুশিল্পীরা তাদের সৃজনে, সৃষ্টিশীলতায় সচেষ্ট আছেন, বিশ্বকর্মার প্রতিভু হয়ে তারা আমাদের শিকড়ের পরিচয় বার বারই আমাদের সামনে তুলে ধরছেন। রবীন্দ্র গোপ বলেন, আমাদের কারুশিল্পীরা কাজ করছেন সত্য ও সুন্দরের আবাহনে। তারা প্রত্যেকেই কাজের মাধ্যমে রূপ দিচ্ছেন তাদের স্বপ্নকে। আজ যেন রাজধানীর একটি কারুশিল্প বাগানে হাজির হয়েছেন সারা দেশের কারুশিল্পীরা। এই শিল্পীরা কেউ বাঁশ/বেত দিয়ে, কেউবা সুতোয় সুতোয় কাঁথা সেলাই করতে আবার কেউ শাঁখায় তার কারুকর্মটি ফুটিয়ে তোলেন, পুষ্পিত করে তোলেন তার উপস্থাপন দিয়ে। চাকমা বয়নশিল্পের কারুশিল্পী শরৎমালা বলেন, আমি রাঙ্গামটি থেকে এ আয়োজনে আসতে পেরে আনন্দিত বোধ করছি। আমি একজন কারুশিল্পী, এখনও কোমরতাঁত এ কাপড় বুনি, আমার জন্য আশীর্বাদ করবেন আপনারা। মনিরা ইমদাদ বলেন, পুরস্কার বিতরণের জন্য প্রকৃত কারুশিল্পী খুঁজে বের করা বেশ কষ্টসাধ্য ছিল। কারণ, পুরস্কৃৃতরা কোনভাবেই কোন ব্র্যান্ড বা কোন বুটিক হাউসের সঙ্গে যুক্ত নয়, তারা নিজের কাজ নিজের তো করেই করে। পণ্যের মার্কেটিং বিষয়ে ধারণাও তাদের নেই বললেই চলে। তাই এসব কারুশিল্পীকে পরিচিত হওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে প্রচারমাধ্যম। পুরস্কারপ্রাপ্ত চারটি মাধ্যমসহ মেলায় ১১টি মাধ্যমে কারুপণ্য বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শিত হচ্ছে। মাধ্যমগুলো হলোÑ শঙ্খ, শোলা, চিত্রিত মাটির পুতুল, তাঁতের শাড়ি, আদিবাসী কারুশিল্প, পাটজাত শিল্প, কাঁথাশিল্প, গামছা ও লুঙ্গি, ধাতবশিল্প, বাঁশজাত শিল্প ও হাতে আঁকা পটচিত্র। জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক বিদ্যাপীঠের নিচতলার খোলা আঙিনায় সাজানো হয়েছে এই মেলা। পাঁচ দিনের এই মেলা চলবে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এই আয়োজনে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে কারুশিল্পীদের বাছাই করে, কারুমেলায় অংশগ্রহণের জন্য তাঁদের ঢাকায় এনে নগরীর বিপণন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করা হয়। বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদ ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে প্রায় ছয় মাস আগে জরিপ চালিয়ে সারাদেশে ঐতিহ্যবাহী অথচ প্রায়-বিলীন শিল্পমাধ্যমগুলোকে চিহ্নিত করা হয়। বাজারের আকর্ষণে যাঁরা নিজের কাজের মান বা শিল্পগুণ কখনও খাটো করেননি, বংশপরম্পরায় প্রাপ্ত প্রশিক্ষণ ও শিল্পবোধকে ম্লান হতে দেননি অথচ পরিবর্তিত সামাজিক-অর্থনৈতিক আবহে যাদের জন্য টিকে থাকা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদেরই খুঁজে বের করে পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন করা হয়। এনএনআইডির সমাপনী ও অভিষেক পার্বণ ॥ নাট্যচর্চায় নিরন্তর কাজ করছে নাগরিক নাট্যাঙ্গন ইনস্টিটিউট অব ড্রামা (এনএনআইডি)। মঞ্চে নতুন প্রযোজনা নিয়ে আসার পাশাপাশি তৈরি করছে নতুন নাট্যকর্মী। সেই সুবাদে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হলো নাট্যদলটির ২০তম ব্যাচের সমাপনী ও ২১তম ব্যাচের অভিষেক পার্বণ। শীতের সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ-এর উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী। প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও লেখক অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ। সভাপতিত্ব করেন ইনস্টিউটের অধ্যক্ষ ড. ইনামুল হক। সব শেষে মঞ্চস্থ হয় ২০তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত নাটক অপারেশন জ্যাকপট। ড. তানভীর আহমেদ সিডনির রচনায় প্রযোজনাটির নির্দেশনা দিয়েছেন ড. শাহাদাৎ হোসেন নীপু। নাটকের কাহিনীতে দেখা যায়, একদল নৌ মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ নেয় ভারতে। পরবর্তীতে তারা আসে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে অপারেশনের জন্য। এ জন্য তাদের পাড়ি দিতে পাকবাহিনী ও রাজাকার-আলবদর অধ্যুষিত এলাকা। যাত্রাপথে শঙ্কা থাকলেও দলটি সহায়তা পায় স্থানীয় বাঙালীদের। মুক্তিযোদ্ধাদের মনে তখন জাগরূক বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণ। এক যোদ্ধার প্রাণে ফেনিয়ে ওঠে বাবার মৃত্যু শোক। আরেক যোদ্ধার স্ত্রী হানাদার বাহিনীর লালসার শিকার হয়ে আলিঙ্গন করেন মৃত্যুকে। সকল ক্ষোভের প্রশমন ঘটিয়ে দলটি পুড়িয়ে বন্দরের জাহাজ, পা বাড়ায় স্বাধীনতার পথে। নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন তৌহিদুল ইসলাম রাজীব, শাহরিয়ার ফায়সাল আহমেদ, ড্যানিয়েল রহমান ধ্রুব, সারোয়ার জাহান, শরীফ হোসেন, মিহিন কনা, আসমা ত্রিশি, এনামুল হক প্রমুখ। মঞ্চস্থ আয়না বিবির পালা ॥ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হয় ময়মনসিংহ গীতিকা অবলম্বনে নাট্যধারার নাটক ‘আয়না বিবির পালা’। প্রযোজনাটির নাট্যরূপ ও নির্দেশনা দিয়েছেন রবিউল আলম। লোকসাহিত্য সংকলন ময়মনসিংহ গীতিকার আয়না বিবির পালা প্রাচীন নারীদের প্রতি সমাজের অমানবিকতার একটি বাজে দৃষ্টান্ত। অমানবিকতার এই দৃষ্টান্ত আধুনিক নারীদেরও স্থাপন করতে হয় প্রতিদিন। তবুও কিছু নারী হয় ওঠে প্রতিবাদী। শৃঙ্খল ভাঙ্গা প্রতিবাদী এক নারীর গল্প নিয়ে আবর্তিত হয়েছে নাটকের কাহিনী। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন সব্যসাচী চঞ্চল, পলাশ মাহমুদ, কাজী উজ্জ্বল, বিউটি আক্তার, ববি ও মুক্তা।
×