ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আমানতের সুদ কমে ৭ শতাংশে দাঁড়াল

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ঋণ সুদের হার ১৪ শতাংশ নির্ধারণ

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ঋণ সুদের হার ১৪ শতাংশ নির্ধারণ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে ঋণের সুদ হার সর্বোচ্চ ১৪ শতাংশ নির্ধারণ করেছে দেশে কার্যরত রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো। পাশাপাশি মেয়াদী আমানতের সুদ হারও এক শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে এনেছে ব্যাংকগুলো। এসব ব্যাংক থেকে আমানতকারীরা এখন সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ সুদ পাবেন। এর আগে সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ সুদ দিত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক, বিডিবিএল ও কৃষি ব্যাংকে ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকে নতুন এ সুদ হার কার্যকর করা হয়েছে। জানা গেছে, ব্যবসা করা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে অভিযোগ করে উদ্যোক্তারা দীর্ঘদিন ধরেই ব্যাংক ঋণের সুদ হার কমানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এ প্রেক্ষাপটে গেল জানুয়ারিতে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা এক বৈঠকে সুদ হার কমানোর সিদ্ধান্ত নেন। ওই বৈঠকেই সর্বোচ্চ সুদ হার ১৪ শতাংশ ঠিক করে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে তা কার্যকরের সিদ্ধান্ত হয়। নতুন সুদ হারে উদ্যোক্তারা মেয়াদী ঋণ পাবেন ১৩ শতাংশ সুদে, চলতি মূলধন ১৪ শতাংশে, বাণিজ্যিক সাধারণ ঋণ ১৩ থেকে ১৪ শতাংশ, এসএমই খাতে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ১৪ শতাংশ এবং নারী উদ্যোক্তা হলে ১০ শতাংশ, আমদানি ঋণ ১৪ শতাংশ, স্বীকৃত বিলের বিপরীতে সৃষ্ট ফোর্সড ঋণে ১৪ শতাংশ, নগদ সহায়তার বিপরীতে আগাম ঋণে ১৪ শতাংশ, আইবিপি ১৪ শতাংশ হারে। আগে এ ব্যাংকগুলো ১৬ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নিচ্ছিল এসব ঋণে। পাশাপাশি মেয়াদী আমানতের সুদ হারও এক শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনে ব্যাংকগুলো। এসব ব্যাংক থেকে আমানতকারীরা এখন সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ সুদ পাবেন। এর আগে সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ সুদ দিত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। এ প্রসঙ্গে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম ফরিদ উদ্দিন বলেন, বিভিন্ন কারণেই ঋণের সুদ হার কমানো হয়েছে। প্রথমত বিনিয়োগে উৎসাহিত করা। বড় বড় বিনিয়োগকারীরা অনেক দিন ধরে বলে আসছেন, আমাদের সুদ হার বেশি হওয়ায় বিনিয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে না। এখন আমরা কমিয়েছি, আশা করি বিনিয়োগকারীরা আসবেন। এছাড়া আমাদের হাতেও বিনিয়োগযোগ্য তহবিল রয়েছে। সেগুলো বিনিয়োগে যাওয়া দরকার। আর সুদ হার কমানোর ফলে এখন থেকে ঋণ খেলাপীও কম হবে বলে তিনি জানান। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ৫৩ হাজার ৭৫ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে এই সাত ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ এক লাখ ২১ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২১ দশমিক ৯০ শতাংশ। স্প্রেড বেড়েছে ডিসেম্বরে ॥ ব্যাংকিং খাতে ঋণ ও আমানতের সুদ ব্যবধান (স্প্রেড) আবারও বেড়েছে। ডিসেম্বর মাসে গড় স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৮৪ শতাংশীয় পয়েন্ট, যা নবেম্বর মাসে ছিল ৪ দশমিক ৮১ শতাংশীয় পয়েন্ট। আমানতের চেয়ে ঋণের সুদহার কম হারে কমায় স্প্রেড বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। এদিকে সার্বিক ব্যাংকিং খাতে গড় স্প্রেড ৫ শতাংশীয় পয়েন্টের নিচে থাকলেও বেসরকারী ও বিদেশী খাতের ব্যাংকগুলোর স্প্রেড এখনও ৫ শতাংশীয় পয়েন্টের ওপরে রয়েছে। এছাড়া ডিসেম্বরে স্প্রেড বেশি রয়েছে এমন ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২টি। এর মধ্যে ৬টি বিদেশী ও ১৫টি বেসরকারী ব্যাংক। এ মাসে সবচেয়ে বেশি স্প্রেড রয়েছে বিদেশী খাতের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের। এরপর রয়েছে বেসরকারী খাতের ব্র্যাক ব্যাংক। বিনিয়োগের মন্থরগতির কারণে দীর্ঘদিন ধরেই আমানতের পাশাপাশি ঋণের সুদও কমছে। তবে আমানতের সুদহার যে হারে কমছে, সে হারে ঋণের সুদ কমাচ্ছে না ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, কোন ব্যাংকের ঋণ ও আমানতের সুদ ব্যবধান ৫ শতাংশীয় পয়েন্টের বেশি হতে পারবে না। কিন্তু অনেক ব্যাংকই অতি মুনাফা প্রবণতার কারণে প্রত্যাশিতহারে ঋণের সুদ কমাচ্ছে না। অন্যদিকে তহবিল ব্যয় কমানোর অজুহাতে তারা আমানতের সুদ কমিয়ে দিচ্ছে। এদিকে সুলভ বিনিয়োগ পরিবেশ নিশ্চিতে দীর্ঘদিন ধরেই ব্যবসায়ীরা ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়ে আসছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ডিসেম্বর মাসে ব্যাংকিং খাতে গড় ঋণের সুদ দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ১৮ শতাংশ, যা নবেম্বরে ছিল ১১ দশমিক ২৭ শতাংশ। অন্যদিকে ডিসেম্বরে এ খাতে আমানতের গড় সুদহার কমে হয়েছে ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ, যা নবেম্বরে ছিল ৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ। দেখা যাচ্ছে, এক মাসের ব্যবধানে আমানতের গড় সুদ কমেছে দশমিক ১২ শতাংশ। অন্যদিকে ঋণের সুদ কমেছে দশমিক ০৯ শতাংশ। এর প্রভাবে কমতির দিকে থাকা স্প্রেডও বেড়ে গেছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, এ মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ঋণের ক্ষেত্রে ১০ দশমিক ০৮ শতাংশ হারে সুদ আদায় করেছে। আমানতের বিপরীতে দিয়েছে ৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ সুদ। স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৭০ শতাংশীয় পয়েন্ট। এ মাসে বিশেষায়িত ব্যাংকের স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৭৮ শতাংশীয় পয়েন্ট। তারা আমানতের বিপরীতে দিয়েছে ৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ সুদ। আর ঋণের ক্ষেত্রে আদায় করেছে ৯ দশমিক ৬২ শতাংশ সুদ। ডিসেম্বর মাসে বেসরকারী ব্যাংকগুলো ঋণের ক্ষেত্রে ১১ দশমিক ৬৫ শতাংশ হারে সুদ আদায় করেছে।
×