ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

পদ্মা সেতু ’১৮ সালের মধ্যে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

পদ্মা সেতু ’১৮ সালের মধ্যে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা সরকারের সকল উন্নয়ন কর্মকা-ে বরাদ্দকৃত প্রতিটি টাকা যথাযথভাবে জনগণের স্বার্থে খরচ হচ্ছে কিনা, তা তদন্ত করে দেখার জন্য সংসদ সদস্যদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সাহসী, স্বাধীনচেতা ও দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলেই কারও সাহায্য ছাড়াই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ যথাসময়ে শুরু করা সম্ভব হয়েছে। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সন্তোষজনকভাবে এগিয়ে চলেছে এবং ২০১৮ সাল নাগাদ এ সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া সম্ভব হবে। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমানের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে অন্য প্রকল্পগুলো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের কারণে অন্য প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে কোন সমস্যা হবে না। তবে প্রতি পাই পাই অর্থ যথাযথভাবে জনগণের স্বার্থে খরচ হচ্ছে কিনা, সেটা যদি সংসদ সদস্যরা তদন্ত করেন এবং যথাযথভাবে কাজ হচ্ছে কিনা তা দেখেন, তবে কোন সমস্যা হবে না। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত যতগুলো প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে তার সবই সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে বা হয়েছে; কোন কাজই অর্থের অভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে না। আমি মনে করি অন্য কোন প্রকল্পে কোন ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। আর বড় প্রকল্প নেয়ার মতো অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাংলাদেশ অর্জন করেছে। কাজেই অন্য কোন প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। ইনশা আল্লাহ আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। ঢাকা থেকে বরিশাল ট্রেন যাবে ॥ স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বরিশাল জেলাকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ভাঙ্গা হতে বরিশাল পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের সম্ভাব্যতা ও বিশদ ডিজাইনের জন্য একটি সমীক্ষা প্রস্তাব প্রণয়ন করা হচ্ছে। তিনি জানান, ভাঙ্গা হতে বরিশাল পর্যন্ত এবং বরিশাল হতে পায়রাবন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনার জন্য গত বছরের ২৬ এপ্রিল একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প এবং ভাঙ্গা হতে বরিশাল পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঢাকা-মাওয়া-বরিশাল রুটে ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা হবে। প্রধানমন্ত্রী জানান, বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু দিয়ে একই সময় গাড়ি ও ট্রেন চলাচল করবে। সেতুটি হবে দোতলা। নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন, উপর দিয়ে চলবে গাড়ি। রেল চলাচলের লক্ষ্যে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। ইতোমধ্যে চীন সরকারের অর্থায়নে জিটুজি ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য গত বছরের ২৮ জানুয়ারি চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড কোম্পানির সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়েছে। পদ্মা সেতুতে সড়ক পথে যানবাহন চলাচল শুরুর দিন হতে রেল চলাচলের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সংসদের চীফ হুইপ আ স ম ফিরোজের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমিও দক্ষিণাঞ্চলের পদ্মাপারের মানুষ। অতীতে সবসময় দক্ষিণাঞ্চল ছিল অবহেলিত। এ অঞ্চলের মানুষ নৌকায় ভোট দেয় বলে আওয়ামী লীগ ছাড়া যখনই যে সরকার এসেছে এ অঞ্চলকে বৈমাত্রীয় চোখে দেখেছে। তিনি বলেন, টাঙ্গাইলের মানুষ অতীতে কখনও ট্রেন লাইন দেখেনি। আমি বঙ্গবন্ধু সেতুতে রেললাইন সংযোগ দেয়ায় টাঙ্গাইলবাসী ট্রেনে যাতায়াত করছে। যেহেতু পদ্মা সেতু করছি, তাই বরিশালবাসীও ট্রেনলাইন পাবে। তিনি বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে সেনাবাহিনীর একটি ডিভিশন এবং কোস্টগার্ডের হেডকোয়ার্টার নির্মাণ হচ্ছে। আগে কুয়াকাটায় যেতে নৌপথ ছাড়া বিকল্প ছিল না। এখন একের পর এক সেতু নির্মাণ করছি। শীঘ্রই পায়রা নদীর ওপরও সেতু নির্মাণ করা হবে। এছাড়া দেশের প্রতিটি মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। জাসদের মঈনউদ্দিন খান বাদলের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নে সরকারের এতটুকু গাফিলতি নেই। চট্টগ্রামবাসী যা চায়নি, তারও বেশি দিয়েছি আমরা। আমরা ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছি। কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে ট্যানেল নির্মাণ করছি। এসব কাজ চলার সময় কালুরঘাটেও সেতু নির্মাণ করা হবে। পদ্মা সেতুর প্রতিটি রড-ইট-পাথর জনগণের টাকায় ॥ পীর ফজলুর রহমানের মূল প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষের অর্জিত টাকায় পদ্মা সেতু হচ্ছে। কারও সাহায্যে ছাড়াই সেতুর কাজ হচ্ছে। দক্ষিণ বাংলার মানুষের সঙ্গে সারাদেশের মানুষের যোগাযোগ সহজ করা এবং বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সড়ক নেটওয়ার্কে যুক্ত করার লক্ষ্যে নির্মাণাধীন এ প্রকল্পে ব্যয় হবে মোট ২৮ হাজার ২৯৩ কোটি ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। তিনি বলেন, এ প্রকল্পের সমুদয় টাকা বাংলাদেশের মানুষের অর্জিত অর্থ, কারও আর্থিক সাহায্য সহযোগিতা এতে নেই। এর প্রতিটি রড, ইট, পাথর, সিমেন্ট আমাদের জনগণের টাকায় কেনা। জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ হাতে নেয়। জনগণের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন হচ্ছেÑ পদ্মার ওপর সেতু নির্মাণ। তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাংকের আনীত অভিযোগের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে। দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে কথিত দুর্নীতি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়। পরবর্তীতে বিশ্বব্যাংক এক পর্যায়ে এ প্রকল্পে পুনরায় ফিরে আসার ঘোষণা দিলেও নতুন নতুন শর্ত আরোপ করে দীর্ঘসূত্রতার পথ অবলম্বন করায় আমরা দেশ ও জনগণের স্বার্থে তাদের ঋণ গ্রহণ না করে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কর্মসংস্থান এক কোটি লোকের ॥ সরকারী দলের সংসদ সদস্য দিদারুল আলমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০৩০ সালের মধ্যে সারাদেশে ৭৫ হাজার একর জমিতে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, এক কোটি লোকের কর্মসংস্থান এবং আরও ৪০ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় বৃদ্ধির উদ্দেশে বেজা কাজ করছে। তিনি জানান, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ এ পর্যন্ত মোট চারটি বেসরকারী অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য লাইসেন্স প্রদান করেছে। সেগুলো হচ্ছেÑ নরসিংদীর এ কে খান অর্থনৈতিক অঞ্চল, মুন্সীগঞ্জে আবদুল মোনেম অর্থনৈতিক অঞ্চল, নারায়ণগঞ্জে মেঘনা ইকোনমিক জোন এবং একই জেলায় মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোন। শিক্ষকরা বদলি হতে পারবেন না ॥ সরকারী দলের এস এম জগলুল হায়দারের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে সকল উপজেলায় সরকারী স্কুল বা কলেজ সরকারীকরণ করা হবে সেসব স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা কোথাও বদলি হতে পারবেন না। তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছিÑ আমরা যে সকল উপজেলায় একটিও সরকারী স্কুল বা কলেজ নেই, শুধু সে সকল উপজেলায় স্কুল বা কলেজ সরকারীকরণ করব। আর এই স্কুল-কলেজ যখন সরকারীকরণ করব, তখন সেখানকার শিক্ষকরা কোথাও বদলি হতে পারবেন না। তাদের স্ব স্ব স্কুল বা কলেজে থাকতে হবে।
×