ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আরও উঁচুতে জোকোভিচ

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

আরও উঁচুতে জোকোভিচ

আটকানো যাচ্ছে না কোনভাবেই, দুরন্ত গতিতে এগিয়ে চলেছেন একক আধিপত্য দেখিয়ে। সর্বশেষ ৫ গ্র্যান্ড সøামের চারটিতেই শিরোপা জিতেছেন। এবার বছর শুরু করলেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে দোর্দ- প্রতাপ দেখিয়েছেন। ফাইনালে ব্রিটিশ প্রতিপক্ষ বিশ্বের দুই নম্বর এ্যান্ডি মারে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়তে পারেননি। সরাসরি তিন সেট জিতে ষষ্ঠবারের মতো মেলবোর্ন পার্কের রড লেভার এ্যারেনায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে ছুঁয়ে ফেলেছেন রয় এ্যামারসনকে। এমনকি স্পর্শ করেছেন কিংবদন্তি রড লেভারকে তারই নামে হওয়া টেনিস কোর্টে। ক্যারিয়ারের ১১তম গ্র্যান্ড সøাম। ১১টি করে জিতেছেন বিখ্যাত বিয়র্ন বর্গ ও রড লেভারও। আর এসবই মাত্র ২৮ বছর বয়সে করে ফেলেছেন বিশ্বের এক নম্বর এ সার্বিয়ান তারকা। টানা তিন গ্র্যান্ড সøাম জেতা হয়ে গেছে জোকোভিচের। এবার আগামী জুনে বছরের দ্বিতীয় গ্র্যান্ড সøাম ফ্রেঞ্চ ওপেন জিতলেই মর্যাদার ‘ক্যারিয়ার সøাম’ জয়েল বৃত্তটা পূর্ণ হবে। ক্রমেই নিজেকে অন্যরকম এক উচ্চতায় নিজেকে নিয়ে চলেছেন জোকোভিচ। এবার নিজের রেকর্ডকে সমৃদ্ধ করার সুযোগ ফর্মের তুঙ্গে থাকা এ সার্বিয়ানের। এবার মেলবোর্ন পার্কে বড় চ্যালেঞ্জটা প্রথম এসেছিল সেমিফাইনালে বিশ্বের তিন নম্বর রজার ফেদেরারের বিরুদ্ধে। উভয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে ২২ ম্যাচে জিতেছেন আগে। এবার সেমিতে সেই ফেদেরারকেও হারিয়ে দিলেন। সাবেক বিশ্বসেরা এ সুইস তারকার বিরুদ্ধে জোকোভিচ এগিয়ে গেলেন ২৩-২২ ব্যবধানে। আবারও ফাইনালে ওঠার পর মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল শিরোপাটা জোকোভিচের হাতেই উঠছে। অবশ্য বিশ্বের দুই নম্বর মারে কঠিন প্রতিপক্ষ। তবে অতীত পরিসংখ্যানটা বলে জোকোভিচের কাছে মারের কোন পাত্তাই নেই। পূর্বের ৩০ মোকাবেলায় ২১টা জয় জোকোভিচের আর ৯টি মারের। এরচেয়ে বড় কথা অস্ট্রেলিয়ান ওপেন আর এই মেলবোর্ন পার্কের ভাগ্যটা কখনই মারের পক্ষে ছিল না। ৪ বার ফাইনালে উঠেছিলেন, একবারও শিরোপা ছুঁতে পারেননি। এর মধ্যে শুধু জোকোভিচের কাছেই তিনবার হেরে চ্যাম্পিয়ন হতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। এবারও অন্যথা হলো না। জোকোভিচের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়া দূরে থাক, তেমন কোন চ্যালেঞ্জই ছুড়তে পারেননি মারে। তাছাড়া তাঁর মাথার ভেতর তখন লন্ডনের চিন্তা। সেখানে তাঁর সন্তানসম্ভবা স্ত্রী কিম সিয়ার্স যে কোন সময় প্রথমবার পিতৃত্বের স্বাদ দিতে পারেন। এমনকি ফাইনালের দিন সম্ভাব্য তারিখ ছিল সন্তান প্রসবের, এ কারণে তিনি এমনকি ফাইনাল না খেলেই দেশে ফিরে যাওয়ার চিন্তাও করে রেখেছিলেন। আর সেজন্যই হয়ত ফাইনালটা এমন একপেশে হলো। মাত্র ২ ঘণ্টা ৫৩ মিনিটের লড়াইয়ে সরাসরি তিন সেটে জিতে গেলেন জোকোভিচ। এ নিয়ে ৫ বার অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনাল হারলেন মারে যার মধ্যে চারটিই জোকোভিচের বিরুদ্ধে। এমন রেকর্ড আছে আর একজনেরই। বিস্ময়করভাবে তিনি আবার মারেরই সাবেক কোচ ইভান লেন্ডল! তিনিও ৫টি গ্র্যান্ড সøাম ফাইনাল হেরেছিলেন ইউএস ওপেনে। জোকোভিচ অবশ্য সর্বশেষ ৫ গ্র্যান্ড সøামের চারটিতেই জিতে গেলেন। টানা তিনটি হয়ে গেছে। জুনে ফ্রেঞ্চ ওপেন জিতলে ক্যারিয়ার গ্র্যান্ড সøাম পূর্ণ হবে তাঁর। ১১ গ্র্যান্ড সøাম জিতে তিনি এখন লেভার ও বর্গের সমকক্ষ। ফাইনাল খেলেই মারে লন্ডনে ফিরে গেছেন তাঁর স্ত্রীর কাছে। যাওয়ার আগে প্রতিক্রিয়ায় বলে গেছেন, ‘দুঃখিত আবার আমি শেষটা ভাল করতে পারলাম না। আমাকে এতদূর পর্যন্ত নিয়ে আসার জন্য টিমের সবাই অনেক সমর্থন ছিল। আমার স্ত্রী কিম বাড়িতে অপেক্ষা করছে আমাকে দেখার জন্য। আমার মনে হয় এক কিংবদন্তির জন্ম দেবে সে।’ পুরুষ টেনিসে সর্বাধিক ১৭ গ্র্যান্ড সøাম জিতেছেন ফেদেরার। সর্বাধিক সøাম জয়ের রেকর্ডে এখন যৌথভাবে পঞ্চম স্থানে জোকোভিচ। তবে যে গতিতে তিনি গ্র্যান্ড সøাম জিতে চলেছেন তাতে করে অচিরেই ফেদেরার পেছনে পড়ে যাবেন হয়ত। কারণ ২০১২ সালের পর আর কোন গ্র্যান্ড সøাম জিততে পারেননি ৩৪ বছর বয়সী ফেদেরার। ইতোমধ্যেই জোকোভিচ তার মূল তিন প্রতিপক্ষ মারে, ফেদেরার ও নাদালের চেয়ে নিজেকে অনেক দূরে ভিন্ন এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তবে জোকোভিচ এমনটা কখনও চিন্তাও করেন না। তিনি এ বিষয়ে বলেন, ‘আমি নিজের মনটাকে কখনও এমন কোন ফ্রেমে বন্দী করতে চাই না। কারণ তেমনটা ভাবতে শুরু করলে ওই ব্যক্তিগুলো আমার বিরুদ্ধে আরও বেশি উদ্ধত হয়ে উঠবে। একইসঙ্গে বিধাতাও আমাকে কঠিন চপেটাঘাত করে নিচে নামিয়ে দেবেন। আমি সেসব চাই না। আমি এখনও আগের মতোই জীবনযাপন চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। সময়সূচীটাও রাখতে চাই অপরিবর্তিত। কারণ এতদিন যেভাবে চলেছি সেটাই আমাকে আজ এ অবস্থানে এনেছে। আমার ধারণা এ ধরনের মনোভাব আমাকে সহায়তা করবে যেখানে আমি পৌঁছুতে চাই সেখানে নিয়ে যেতে।’ দারুণ এক অর্জন হাতছানি দিচ্ছে জোকোভিচকে। আজ পর্যন্ত টেনিসের ইতিহাসে কেউ ‘গোল্ডেন সøাম’ জিততে পারেননি। কিন্তু ফ্রেঞ্চ ওপেন জিততে পারলে প্রথমবার ক্যারিয়ার সøাম হয়ে যাবে জোকোভিচের। এর কিছুদিন পরই অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জিতলেই এই অনন্য ইতিহাস গড়তে পারবেন এ সার্বিয়ান তারকা। ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ঘাটতি হিসেবে জোকোভিচ দেখছেন ফ্রেঞ্চ ওপেনকেই। কারণ এখন পর্যন্ত ফরাসী ওপেনের শিরোপা ঘরে তুলতে পারেননি। এবার সেটা জিতে ক্যারিয়ার সøাম পূর্ণ করতে চান। তবে গোল্ডেন সøামের বিষয়টিও চিন্তায় আছে তাঁর। জোকোভিচ এ বিষয়ে বলেন, ‘আমি আসলে একটি সুন্দর অর্জনের কথা শুনলাম। কিন্তু এটা কোন নেকড়ের জন্যই সবচেয়ে সহজ যারা পাহাড় বেয়ে উঠতে এবং দৌড়ে পর্বত ডিঙ্গাতে দারুণ পারঙ্গম। পাহাড়ের চূড়ায় আগে থেকেই অবস্থান করা নেকড়েটার চেয়েও সে বেশি ক্ষুধার্ত। একইভাবে যারা এখন টেনিস খেলছেন সবাই প্রতি সপ্তাহে নিজের উন্নতির জন্য সচেষ্ট। সবাই ক্ষুধার্ত নম্বর ওয়ানকে হটানোর জন্য এবং তাঁকে পরাজিত করার জন্য। সে কারণে আমি নিজেকে কখনও আরামে রাখতে চাই না কিংবা উপভোগের মধ্যে থেকে গা-ছাড়া ভাব দেখাতে চাই না। হ্যাঁ, অবশ্যই আমি আনন্দ-উল্লাস করব, সেটা সীমিত পর্যায়ে মাত্র কয়েকদিনের জন্য। কিন্তু সবসময়ই আমার চিন্তা, চেষ্টা এবং কাজ হবে বাকি টুর্নামেন্টগুলো কিভাবে জেতা যায় সেটার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার প্রতি।’
×