ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ;###;বাঙালী শান্তিপ্রিয় জাতি, সন্ত্রাস-সহিংসতায় বিশ্বাসী নয়

উন্নয়ন সোপানে দেশ ॥ সকলের মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এগিয়ে চলেছি

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ১৩ জানুয়ারি ২০১৬

উন্নয়ন সোপানে দেশ ॥ সকলের মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এগিয়ে চলেছি

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দল-মত ও বিভক্তির উর্ধে উঠে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। বিশ্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি আমরা। কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না। আমরা বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হবই। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলবই ইনশাল্লাহ। আর আশাবাদী ও আত্মবিশ্বাসী দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশে পরিণত করব। প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে দেশবাসীর সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় টানা দ্বিতীয়বারের ক্ষমতায় থাকা বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় বছরপূর্তি দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি কটাক্ষকারীদের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে ঐকমত্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কারও কোন কটাক্ষ সহ্য করা হবে না। এদের বিরুদ্ধে ঐকমত্য গড়ে তুলুন। আমরা আপনাদের পাশে আছি। আর কাউকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে দেয়া হবে না। বিপথগামীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং প্রয়োজনে আরও কঠোর হব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকলের মিলিত প্রচেষ্টায় দেশ যখন উন্নয়নের সোপানে এগিয়ে যাচ্ছে তখন মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির দোসররা আবারও অস্থিতিশীলতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছে। আমরা শান্তিপ্রিয় জাতি, সন্ত্রাস সহিংসতায় বাঙালী বিশ্বাসী নয়। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ, হাজার বছর ধরে সব ধর্মের মানুষ শান্তিতে বসবাস করছে। সবাই নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করছেন। এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হতে দেব না। বিএনপি-জামায়াত জোটের ভয়াল সহিংসতা ও নাশকতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অগ্নি-সন্ত্রাসীদের আটক করে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। তাদের বিচার কাজ চলছে। যারা আপনাদের (দেশবাসী) আপনজনকে কেড়ে নিয়েছে, জানমালের ক্ষতিসাধন করেছে সেই অপরাধীরা অবশ্যই শাস্তি পাবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তির আসল উদ্দেশ্য হলো জঙ্গীবাদ উস্কে দেয়া, যুদ্ধাপরাধী, গণহত্যাকারী, রাজাকার-আলবদরদের রক্ষা করা। আমাদের ওয়াদা ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার। আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি, রায় কার্যকর হচ্ছে, কেউই বিচার বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। তিনি বলেন, যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় না, জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। খালেদা জিয়ার নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, একটি দলের নেত্রী ও তার নেতারা মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মাহুতি দানকারী ৩০ লাখ শহীদের প্রতি কটাক্ষ করেছে, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের অপমান করেছে। আমি এই ঘৃণ্য বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এদেশের জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। যারা দেশের ইতিহাসকে বিকৃত করবে তারা ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। সদ্য সমাপ্ত পৌর নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত সপ্তাহে শান্তিপূর্ণভাবে ২২৩টি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় এই নির্বাচন ছিল অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ। নির্বাচনে আপনারা আপনাদের পছন্দের প্রার্থীদের বিজয়ী করেছেন, জঙ্গী ও পেট্রোল বোমাবাজদের প্রত্যাখ্যান করেছেন। সেজন্য আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। তিনি বলেন, আমি ২০০৮ সালে বলেছিলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করব। আমরা নিম্ন-মধ্যম দেশে উন্নীত হয়েছি। ইনশাল্লাহ ২০২১ সালের আগেই আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হব। তিনি বলেন, গ্যালোপের হোপ ইনডেস্কে এসেছে, সুইজারল্যান্ডের পরেই বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে আশাবাদী মানুষের দেশ। আশাবাদী ও আত্মবিশ্বাসী দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশে পরিণত করব। প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে দেশবাসীর সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেন। দেশবাসীকে ইংরেজী নববর্ষের শুভেচ্ছা এবং সরকারের দ্বিতীয় বছর পূর্তিতে দেশের সকল গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা টানা দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে ইতোমধ্যে জনগণকে দেয়া ওয়াদা পূরণে উন্নয়ন কর্মকা- ও অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছি। বিএনপি-জামায়াত জোটের ভয়াল নাশকতা-সহিংসতার কথা দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে বিএনপি-জামায়াত জোট সারাদেশে যে ঘৃণ্য ও পৈশাচিক সন্ত্রাস চালায় তা কোনদিন বিস্মৃত হওয়ার নয়। তাদের এই নৃশংসতা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী হায়েনা ও তাদের দোসরদের নির্মমতার সঙ্গেই কেবল তুলনা করা যায়। বিএনপি-জামায়াত জোটের সহিংসতায় যারা জীবন দিয়েছেন তাদেরকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগ ও পেট্রোল বোমার শিকার হয়ে নিরীহ বাসড্রাইভার, বাস-টেম্পো-সিএনজি যাত্রী, প্রিজাইডিং অফিসার, পুলিশ-বিজিবি-আনসার, সেনাবাহিনীর সদস্য, এমনকি স্কুলের শিক্ষক ও শিশুও নিহত হয়েছেন। অনেকে আগুনে দগ্ধ হয়েছেন, জীবনের তরে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি বলেন, সন্ত্রাস বোমাবাজি উপেক্ষা করে সেদিন আপনারা গণতন্ত্রকে বিজয়ী করেছিলেন। কিন্তু গণতন্ত্র ও উন্নয়ন বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্ব সহ্য করতে পারে না। মানুষ শান্তিতে থাকবে, হাসি মুখে জীবনযাপন করবে তা ওদের সহ্য হয় না। প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, সারাবিশ্বে বাংলাদেশ যখন উন্নয়নের রোলমডেল, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা যখন বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সুশাসন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ডিজিটাইজেশন, এমডিজির লক্ষ্যসমূহ অর্জন, জলবায়ুর প্রতিকূল প্রভাব মোকাবেলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি ও পুরস্কারে ভূষিত করছে, তখনই ২০১৫ সালের ৪ জানুয়ারি থেকে বিএনপি জামায়াত আবারও দেশে সন্ত্রাস, সহিংসতা শুরু করে। কিন্তু দেশবাসী তাদের অগ্নিসন্ত্রাস ঐক্যবদ্ধভাবে রূখে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী গত সাত বছরে তাঁর সরকারের উন্নয়ন, অগ্রগতি, অর্জন ও সফলতাগুলো দেশবাসীর সামনে তুলে ধরে বলেন, আপনাদের সহযোগিতায় দেশের আর্থ-সামাজিক খাতে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে। ২০০৯ সালে যখন সরকার গঠন করি তখন ছিল বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, চরম খাদ্যাভাব। বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসন. দুর্নীতি, সন্ত্রাস এবং পরের দুই বছরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দমননীতির ফলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল বিপর্যস্ত, বিশৃঙ্খলাপূর্ণ। আমরা দায়িত্বভার গ্রহণ করে সবক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনি। মানুষের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাস ফিরে আসে। তিনি বলেন, সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শেষ হয়েছে। এখন শুরু হয়েছে ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। বিশ্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন জিডিপি’র ভিত্তিতে বিশ্বে ৪৫তম এবং ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে ৩৩তম স্থান অধিকার করেছে। সেভ দ্যা চিলড্রেন-এর মাতৃসূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩০তম, ভারতের ১৪০ এবং পাকিস্তানের ১৪৯তম। অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস এ্যান্ড পিস-এর বিশ্বশান্তি প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান ৮৪তম, ভারতের ১৪৩তম এবং পাকিস্তানের ১৫৪তম। ইকোনমিস্ট-এর ইনটেলিজেন্স ইউনিট-এর গণতন্ত্র সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৫তম আর পাকিস্তানের অবস্থান ১০৮তম। দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা শীর্ষক তৃতীয় জাতিসংঘ বিশ্ব সম্মেলনে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন: ‘দুর্যোগ প্রস্তুতি ও ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ বিশ্বে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে’। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। এর আগের ৫ বছরে গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ২ শতাংশ। বিশ্ব অর্থনীতিতে অধিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিক থেকে পঞ্চম স্থানে বাংলাদেশ। বিশ্বের খুব কম দেশই একটানা এত দীর্ঘ সময় ধরে ৬ শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পেরেছে। অচিরেই প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের শেষ বছরে মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার। এখন বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৩১৪ মার্কিন ডলারে। ৫ কোটি মানুষ নিম্ন-আয়ের স্তর থেকে মধ্যম আয়ের স্তরে উন্নীত হয়েছে। দারিদ্র্যের হার ৪১.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২২.৪ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। দেশবাসীর উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, মানুষের আয় ও কর্মসংস্থান বেড়েছে। সরকারী ও বেসরকারীভাবে দেড় কোটি মানুষের চাকরি দিয়েছি। আমাদের সময়ে ৩৫ লাখ ৭৫ হাজার ৩৪৮ জন কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে। ২০০৬ সালে রেমিটেন্স আয় ছিল মাত্র ৪ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে। একই সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। রফতানি আয় ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এসে দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নিজস্ব অর্থায়নে দেশের ইতিহাসের বৃহত্তম নির্মাণ প্রকল্প পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ চলছে। ২০১৮ সালের মধ্যে পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে। তিনি বলেন, এই পদ্মা সেতু জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে শতকরা ১ দশমিক ২ ভাগ হারে অবদান রাখবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ শিল্প স্থাপনা বাড়বে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, মাওয়া, শিবচর ও জাজিরাকে ঘিরে আধুনিক স্যাটেলাইট শহর গড়ে তুলব। মাদারিপুর, শরীয়তপুর ও কেরানিগঞ্জ জেগে উঠবে নতুন উদ্যমে। প্রধানমন্ত্রী বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সঙ্গে বর্তমান সরকারের সময়ে উন্নয়ন ও অগ্রগতির তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে বাংলাদেশ ছিল খাদ্য ঘাটতির দেশ। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশ আবারও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩ কোটি ৮৪ লাখ ১৮ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য-শস্য উৎপাদন হয়েছে। মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ৪৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত। মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে চতুর্থ। আমরা এখন চাল রফতানি শুরু করেছি। তিনি বলেন, ২০০১-এ বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে শিক্ষার হার ৬৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪৪ শতাংশে এনেছিল। দেশের বর্তমানে শিক্ষার হার ৭১ শতাংশ। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে তার সরকারের সফলতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ৭ বছরে আমাদের নিরলস প্রচেষ্টায় ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। ৫ হাজার ২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ২০০ ধরনের ডিজিটাল সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এ খাতের উদ্যোক্তাদের মাসিক আয় ২০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। বাংলাদেশে এখন মোবাইল সিম গ্রাহকের সংখ্যা ১৩ কোটির বেশি। ইন্টারনেট গ্রাহক ৫ কোটি ৭ লাখ ৭ হাজারের বেশি। আশা করছি ২০১৬ সালেই মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করা হবে। তিনি বলেন, গত অর্থবছরে আইটি এবং আইটিএস খাত থেকে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এবারও লিঙ্গ সমতায় দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পদে নারীর অবস্থানের দিক থেকে বিশ্বে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় সংসদকে সকল কর্মকা-ের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছি। বিরোধী দলকে ধন্যবাদ, তারা বিভিন্ন বিষয়ে তাদের অভিমত দিচ্ছেন, আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন। তিনি বলেন, গণকর্মচারীদের অবসর গ্রহণের বয়স ৫৯ বছর এবং মুক্তিযোদ্ধা কর্মচারীদের ৬০ বছর করা হয়েছে। সামরিক-অসামরিক সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ১২৩ ভাগ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। পদমর্যাদা বৃদ্ধি ও ব্যাপক পদোন্নতির সুযোগ করে দিয়েছি। গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন বাড়িয়ে ৫ হাজার ৩০০ টাকা করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী করেছি। কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে। দুর্নীতি প্রতিরোধে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বাংলাদেশ ছিল বাক-স্বাধীনতা হরণের দেশ, সাংবাদিক নির্যাতনের দেশ। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশের মিডিয়া এখন সম্পূূর্ণ স্বাধীন। গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে সরকারের সমালোচনা করতে পারছে। সরকার নতুন বেসরকারী ৩২টি টেলিভিশন, ২২টি এফএম রেডিও এবং ৩২টি কমিউনিটি রেডিও চ্যানেলের অনুমোদন দিয়েছে। জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালাসহ তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন ও তথ্য কমিশন প্রতিষ্ঠা করেছে। বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেছি। সাংবাদিকদের সহায়তায় এ পর্যন্ত ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে গত বছরে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এমডিজি ১ থেকে ৬ অর্জন করেছি। বাংলাদেশ এমডিজি এ্যাওয়ার্ড, সাউথ-সাউথ এ্যাওয়ার্ড এবং আইটিউ-এর ‘ওয়ার্ল্ড সামিট অন ইনফরমেশন সোসাইটি’ পুরস্কার পেয়েছে। তিনি বলেন, এমডিজির মতো আমরা জাতিসংঘ গৃহীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি বাস্তবায়নে অঙ্গীকারাবদ্ধ। প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করায় জাতিসংঘ আমাকে পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ পুরস্কারে ভূষিত করেছে। তিনি এ সম্মান দেশবাসীকে উৎসর্গ করে বলেন, তথ্য প্রযুক্তি প্রসারের জন্য আইটিইউ আমাদের ‘আইসিটি সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট এ্যাওয়ার্ড- ২০১৫’ প্রদান করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ জাতিসংঘে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হয়েছে। ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটকে ‘ইউনেস্কো ক্যাটাগরি-২ ইনস্টিটিউট’-এর মর্যাদা দিয়েছে। বাংলাদেশ ইউনেস্কো সাধারণ পরিষদের সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কূটনৈতিক ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের সফলতা দেশবাসীর সামনে তুলে ধরে বলেন, আমরা শান্তি এবং সহ-অবস্থানে বিশ্বাসী। আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল বৈশিষ্ট্য ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’। এই মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন পথ রচনায় সক্ষম হয়েছি। দীর্ঘ ৪৪ বছর পর ২০১৫ সালে ভারতের পার্লামেন্টে স্থলসীমানা চুক্তি অনুমোদিত হয়। ফলে ৫২ হাজার ছিটমহলবাসীর ৬৮ বছরের মানবেতর জীবনের অবসান হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে আমরা ভারতের সঙ্গে স্থলসীমানা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করেছি। ছিটমহল বিনিময়ে ১০ হাজার ৫০ একর জমি বাংলাদেশের ভূখ-ে যোগ হয়েছে। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল-ভুটান এই চার দেশের মধ্যে মোটর ভেহিক্যাল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু সমুদ্রসীমা আইন করে যান। তারই ভিত্তিতে আমরা মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমার শান্তিপূর্ণ সমাধান করেছি। সমুদ্রে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার এলাকায় দেশের নিরঙ্কুশ অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি বলেন, এর ফলে বিশাল সমুদ্র এলাকায় সমুদ্রসম্পদ আহরণের পথ সুগম হয়েছে, যা জাতীয় অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখবে।
×