ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠছে বগুড়া

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ৯ জানুয়ারি ২০১৬

অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠছে বগুড়া

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ দিনে দিনে বগুড়া শহর নগরীতে পরিণত হচ্ছে অথচ বাড়ছে না নাগরিক সুবিধা। উল্টো বেড়েছে নাগরিক ভোগান্তি। কোন নিয়ম নীতি না মেনে বহুতল ভবন যেমন গড়ে উঠছে তেমনই ভূকম্পন প্রতিরোধ ও অগ্নি নির্বাপণের সুযোগ-সুবিধা গড়ে তোলা হয়নি। নগরীর রাস্তাঘাটগুলো আজও চওড়া নয়। উত্তরে মাটিডালি থেকে দক্ষিণে বনানী ও শহরের কেন্দ্রস্থল সাতমাথা থেকে স্টেশন রোড হয়ে বাইপাস মহাসড়ক লিংক রোডটি অনেকটা চওড়া করে নির্মিত হয়েছে ঠিকই তবে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা ও ব্যাটারি চালিত থ্রি হুইলারে রাস্তার দুইধারে বেশিরভাগ জায়গা দখল করে থাকে। দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থার ধকল ও ভোগান্তি দুইই সামলাতে হয় নগরবাসীকে। নগরায়ন প্রক্রিয়ায় অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠছে এই নগরী। বগুড়া শহর বলতে পৌর এলাকা এবং সংলগ্ন শহরতলীই ছিল বড় কাঠামো। ১৪ দশমিক ৭৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের পৌরসভা বছর দশেক আগে ২ হাজার ৫ সালে কলমের এক খোঁচায় প্রায় পাঁচগুণ বাড়িয়ে প্রায় ৭০ বর্গকিলোমিটারে টেনে নিলে ইউনিয়ন পরিষদও শহর এলাকর মধ্যে ঢুকে পড়ে। শহরের ১২টি ওয়ার্ড বেড়ে সংখ্যার উল্টোটিতে অর্থাৎ ২১ এ চলে যায়। অজ পাড়াগাঁগুলো নগরীর মধ্যে পড়ে যাওয়ায় গ্রামের লোকও বুঝতে পারে না তারা গ্রামবাসী না নগরবাসী। এদিকে শোরুম, শপিংমল, আধুনিক হোটেল ও মার্কেট কেন্দ্রিক বগুড়া নগরীর বাড়িঘর আকাশচুম্বী হতে থাকে। যে শহরে সর্বোচ্চ ৬ তলা পর্যন্ত বহুতল ভবন নির্মাণের অনুমতি দেয়ার কথা সেখানে বিশেষ ব্যবস্থায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ অনুমতিতে দশতলা ও তারও বেশি উঁচু ভবন নির্মিত হচ্ছে। এসব ভবনের বেশিরভাগেই বিল্ডিং কোড তো মানা হয়ই না বড় ধরনের আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের প্রবেশ পথের ফিডার রোডও সঙ্কুচিত হয়ে থাকে। বগুড়া শহরের বনানী থেকে মাটিডালি ও স্টেশন রোড হয়ে তিনমাথা বাস টার্মিনাল পর্যন্ত ১১ দশমিক ৯০ কিলোমিটার দুই লেনের সড়ক ৬০ ফুট চওড়া করে নির্মিত হয়। এরপর আর কোন সড়ক চওড়া হয়নি। এই চওড়া সড়কের দুই ধারের প্রায় অর্ধেকটা জায়গাজুড়ে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা ও ব্যাটারিচালিত থ্রিগুইলারগুলো। এর সঙ্গে বাড়তি রিক্সা তো আছেই। হালে এই রিক্সাতেও মোটর এঁেট দ্রুতগামী করা হয়েছে। নগরীর চওড়া বড় সড়কেও দিনভর জট লেগেই থাকে। বিশেষ করে সাতমাথা থেকে কাজী নজরুল ইসলাম সড়কের পুরোটাই, ঝাউতলা এলাকা, বড়গোলা, দত্তবাড়ি এলাকা, শেরপুর রোডের ইয়াকুবিয়ার মোড় হতে স্যামসং শোররুম পর্যন্ত, কখনও পার্করোডের পুরো এলাকা জটে যানবাহন আটকে থাকে অনেকটা সময় ধরে। এ তো গেল চওড়া সড়কের বেহাল চিত্র। এবার দেখা যাক শহরে পাড়া মহল্লার ফিডার রোডের কি অবস্থা- সরু রাস্তার দুইধারে নিয়মের তোয়াক্কা না করে গড়ে উঠছে বহুতল ভবন। ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা বললেন বাড়িঘরগুলো এমনভাবে নির্মিত হচ্ছে যে কোন এলাকায় বড় আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে না। বাইরে পানিবাহী গাড়ি রেখে পাইপ টেনে আগুন নেভানোর সময় যদি পানি শেষ হয়ে যায় তাহলে কাছে এমন কোন পুকুর ও পানির আধার নেই যে আগুন নেভানো যাবে। কোন পাড়া মহল্লার কাছে করতোয়া নদী থাকলেও তাও শুকিয়ে গিয়েছে। বহু শহরে পানির আধার (ওয়াটার হাইড্রেন্ট) নির্মাণের কথা বারবার তোলা হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। ফায়ার সার্ভিসের অনুমতি না নিয়েই পুকুরগুলোও ভরাট করে বহুতল ভবন গড়ে তোলা হয়। সরু পথের ধারে নির্মিত এইসব বহুতল ভবন মাঝারি ভূকম্পনেই বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। শহর বর্ধিতকরণের পর দুটি ইউনিয়নের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়। এই ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে আজও কাঁচা সড়ক রয়েছে। কোন রাস্তায় ইট বিছানো হলেও তার আর পাকা হয়নি। বর্ধিত এলাকার বাড়িঘরের কিছুটা উন্নতি হয়েছে ঠিকই তবে শহুরে জীবনের সুবিধা পৌঁছেনি। স্ট্রিট লাইট নেই, ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। গ্যাস লাইন পৌঁছেনি, পানি সরবরাহ ব্যবস্থা নেই। শহরের মধ্যে প্রধান সড়কেই ড্রেনেজ ব্যবস্থার এমন বেহাল অবস্থা যে সামান্য বৃষ্টিতেই জলজটে পরিণত হয়। কখনও বৃষ্টি ছাড়াই ড্রেন ভরে গেলে পানির সঙ্গে নোংরা ময়লা রাস্তার ওপর উপচে পড়ে। এ সময় পথচারীদের ও যানবাহন চলা কঠিন হয়ে যায়। বলা হয়েছিল জলজট নিরসনে করতোয়া নদীর সঙ্গে ড্রেনের একটা লিঙ্কেজ রাখা হবে তা আর হয়নি। সব মিলিয়ে নগরায়ন প্রক্রিয়ায় যেভাবে বগুড়া নগরী অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠছে তাতে বছর কয়েক পর রাজধানী ঢাকার মতো বগুড়াও পরিবেশসম্মতভাবে বাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে।
×