ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আরও নিরাপদ মাতৃত্ব, মা ও শিশুর দিকে বাড়তি নজর

এসডিজি সামনে রেখে বড় হচ্ছে প্রজন্মের উত্তরাধিকার

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ১ জানুয়ারি ২০১৬

এসডিজি সামনে রেখে বড় হচ্ছে প্রজন্মের উত্তরাধিকার

সমুদ্র হক ॥ দেশের মা-শিশু স্বাস্থ্যসেবায় উন্নয়নে বেড়ে উঠছে নতুন প্রজন্ম। একই সঙ্গে ইউএসএই আইভির সহায়তায় সূর্যের হাসির প্রসূতি সেবায় লাল পতাকার তিনদিনের পাহারায় শিশু ও মাতৃ মৃত্যুহার অনেক কমেছে। বাংলাদেশ জাতিসংঘ ঘোষিত মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলের (এমডিজি) দারিদ্র্য দূরীকরণ, সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা, শিশু মৃত্যুহার কমানো, মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়ন তথা নিরাপদ মাতৃত্বে লক্ষ্যমাত্রা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই অর্জন করেছে। কেবলই ফেলে আসা বছরে (২০১৫) জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) যে কয়টি বিষয় আগামী ১৫ বছরের মধ্যে পূরণের টার্গেট দিয়েছে বাংলাদেশ তা পূরণে এগিয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগ আশা করছে এসডিজিও নির্দিষ্ট সময়ের আগেই পূরণ করা যাবে। মা ও শিশু স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকারী বেসরকারী সকল কর্মসূচী দ্রুত বাস্তবায়িত হচ্ছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে প্রতি এক লাখ শিশু জন্মের সময় ১৭০ প্রসূতি মারা যান। দেশে প্রতিবছর ৩১ লাখ শিশু জন্মগ্রহণ করে। প্রতি ৬শ’ শিশু ভূমিষ্ঠের সময় একজন মা মারা যান। নিরাপদ মাতৃত্বে নবজাতকের জন্মে মা ও শিশু কেউ যেন মারা না যায় সেই লক্ষ্যেই স্বাস্থ্য বিভাগ কাজ করছে। এই ক্ষেত্রে এগিয়ে এসেছে মার্কিন জনগণের পক্ষে ইউএসআইডি। তারা দেশজুড়ে এ পর্যন্ত প্রায় ৪শ’ সূর্যের হাসি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করেছে। যেখানে দরিদ্র পরিবারের প্রসূতিকে নিরাপদ সন্তান প্রসবে ২৪ ঘণ্টা সার্বক্ষণিক সেবা ও পরামর্শ দেয়া হয়। বগুড়া তিলোত্তমা নামের একটি সূর্যের হাসি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায় বয়ঃসন্ধিক্ষণের পরামর্শ থেকে শুরু করে বিয়ের পর গর্ভধারণের প্রস্ততিমূলক সকল কার্যক্রম সেখানে পরিচালিত হয়। দরিদ্র ও স্বল্পআয়ের পরিবারের সদস্যদের মাত্র ৩০ টাকার বিনিময়ে একটি কার্ড করলে পরিবারের অন্তত ৭ জন সদস্য নিরাপদ মাতৃত্বসহ সকল স্বাস্থ্য সেবা পায়। গর্ভবতী মায়ের সন্তান প্রসবের সময় হলেই সেই বাড়িতে একটি লাল পতাকা উড়িয়ে দেয়া হয়। যাতে এলাকার লোকজন জেনে সতর্ক থাকে সেই বাড়িতে একজন প্রসূতি আছে। আসছে নতুন অতিথি যে কোন সময় মায়ের প্রসব বেদনা শুরু হতে পারে। তিন থেকে ৭ দিন পড়শিরা পাহারায় থাকে যেন কিছু ঘটলে অতি দ্রুত হাসপাতালে নিতে পারে। এভাবে তারা মা নবজাতকের সুরক্ষা নিশ্চিত করেছে। প্রয়োজনে জটিল সিজারিয়ানে এ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়। দরিদ্র পরিবারের সন্তান সম্ভবা (অন্তঃসত্ত্বা) নারীর হাতে একটি প্লাস্টিকের ব্যাংক দিয়ে বলা হয় প্রতিদিন যেন এর মধ্যে কিছু কিছু অর্থ রাখে। সন্তান ভূমিষ্ঠের সময় এবং পরে নবজাতকের জন্য এই অর্থ কাজে দেবে। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের এই সেবার পাশাপাশি সরকারী হাসপাতালগুলোর গাইনি ওয়ার্ডেও মা ও শিশু রক্ষায় সর্বাধিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, এখনও দেশে মাত্র ৪২ শতাংশ শিশু জন্ম নেয় গাইনি চিকিৎসকের হাতে। বাকিদের সিংহভাগ শিশু জন্মে নিজেদের বাড়িতে অপ্রশিক্ষিত ধাত্রীদের হাতে। কখনও প্রবীণ আত্মীয়ের হাতে নবজাতক ভূমিষ্ঠ হয়। উভয় ক্ষেত্রেই মা ও শিশুর মৃত্যু ঝুঁকি রয়েই যায়। এই অবস্থার অবসানে সরকার মাঠ পর্যায়ে প্রসূতি সেবা ও প্রশিক্ষিত ধাত্রীদের সংখ্যা বাড়াতে নতুন পরিকল্পনা নিয়েছে। এই বিষয়ে এক গাইনোকোলজিস্ট জানান, ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে সন্তান ধারণ উপযুক্ত সময়। বিশ বছরের কম এবং ৩৫ বছরের বেশিতে সন্তান ধারণ করলে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। এমনিতেই গর্ভধারণের পর হেমোরেজ, একলাম্পশিয়া ও প্রেসনেন্সি ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা থাকে তারওপর প্রসূতির নিয়মমতো পরিচর্যা না হলে মা ও শিশুর জীবনে নানা ধকল আসতে পারে। তবে দেশে বর্তমানে চারদিক থেকে যে ভাবে মা শিশু স্বাস্থ্য সেবার দিকে দৃষ্টি দেয়া হচ্ছে তা চলমান প্রক্রিয়ায় ধরে রাখা গেলে এই অনকাক্সিক্ষত মৃত্যু হার এসডিজির টার্গেট পূরণের আগেই শূন্যের ঘরে নেমে আসবে। তবে এ জন্য পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে সচেতন হওয়া দরকার। মাঠ পর্যায়ের একজন স্বাস্থ্যকর্মী জানান, মা ও শিশু মৃত্যুর অন্যতম একটি কারণ হলো বালিকাদের বধূ হওয়া। কম বয়সে গর্ভধারণের নানা জটিলতা তিনি লক্ষ্য করেছেন। আরেক সূত্রের মতে এখনও দেশে ৬৩ শতাংশ বালিকার বিয়ে হয় যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে। তারা ওরাল বা এক্সটারনাল কোন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করে না। নির্দিষ্ট বয়সে বিয়ের পর নব দম্পতির প্রায় ৬৩ শতাংশ যে কোন জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করে। এর বাইরে আরেকটি কারণে মা শিশুর জীবন বিপন্ন হয় তা হলো সামাজিক নির্যাতন। নারীর ওপর সহিংসতার বলিও হচ্ছে মা ও নবজাতক। আইনমন্ত্রীর সন্তোষ স্টাফ রিপোর্টার ॥ ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যাকা-ের রায় দ্রুত হওয়ায় দেশে ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, ব্লগার হত্যাকা-ের ঘটনায় এখনও যেসব মামলা বিচারাধীন সেগুলোরও দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে। মন্ত্রী আরও বলেন, কোন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সন্ত্রাসী বা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করা হলেও দল বা সংগঠন হিসেবে কোন রাজনৈতিক দলের বিচার করা হয়নি। মানবতাবিরোধী অপরাধে রাজনৈতিক দলের বিচারের জন্য সংশোধিত আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনের খসড়া আগামী মার্চ মাসে মন্ত্রিসভায় তোলা হবে বলেও জানান তিনি। এর আগে আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক সংসদে এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একাধিকবার বলেছেন, আইনটির সংশোধনীর খসড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা দেয়া হয়েছে। সেখান থেকে অনুমোদন পেলেই যাবে মন্ত্রিসভায়। এরপর মন্ত্রিসভা বিলটিতে অনুমোদন দিলে পাসের জন্য সংসদে যাবে।
×