ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অধিনায়ক মামুনুলের আজ শেষ ম্যাচ

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫

অধিনায়ক মামুনুলের আজ শেষ ম্যাচ

স্পোর্টস রিপোর্টার, ত্রিভানদ্রাম, কেরল থেকে ॥ পথ যতই হোক বন্ধুর ও অমৃসণ, লক্ষ্য যতই হোক কঠিনÑ সেটা হাসিল করার জন্য যদি না থাকে প্রয়োজনীয় রসদ, নির্দিষ্ট করে বললে সুদৃঢ় মনোবল, তাহলে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হওয়ার সম্ভাবনা-আশঙ্কাই বেশি। আর তেমনটাই হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের বেলায়। শনিবার গ্রুপের খেলায় মালদ্বীপের কাছে হেরে তারা ছিটকে পড়েছে সাফ সুজুকি কাপের আসর থেকে। এ নিয়ে টানা তিন আসরেই একই ফলের পুনরাবৃত্তি। এই ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে এবং দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে ইতোমধ্যেই দলের প্রধান কোচ মারুফুল হক পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। এবার জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর আগাম ঘোষণা দিলেন দলের অধিনায়ক-মিডফিল্ডার মামুনুল ইসলামও! রবিবার কেরলের তাজ হোটেলে গিয়ে দেখা যায় সেখানকার সুইমিং পুলে বাংলাদেশ দলের সব ফুটবলার সাঁতার কাটছেন। অথচ মামুনুল প্যান্ট-শার্ট পড়ে ঘুরছেন! মুখে রাজ্যের অন্ধকার। সাংবাদিকদের সঙ্গে কোন কথাই বলতে চাইলেন না। শেষে অনেক জোরাজুরি করার পর দিলেন সেই ঘোষণা, ‘ভুটানের সঙ্গে ম্যাচ খেলেই ক্যাপ্টেন্সি থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি আমি!’ আগের সাফ ফুটবল আসরেও দলের অধিনায়ক ছিলেন মামুনুল। সেবারও গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছিল বাংলাদেশ। নিয়েছে এবারও। তবে এবারের ফল ছাড়িয়ে গেছে আগের সব আসরকেই। এত জঘন্য পারফর্মেন্স এর আগে দেখা যায়নি বাংলাদেশের বেলায়। প্রথম দুই ম্যাচে সাত গোল হজম করেছে, দিয়েছে মোটে একটি! (আফগানিস্তানের কাছে ০-৪, মালদ্বীপের কাছে ১-৩)। প্রশ্ন ওঠে মামুনুলের নৈপুণ্য, দলের প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়ে। বিতর্ক থেকে বাঁচতে অবশেষে স্বেচ্ছায়ই সরে দাঁড়াচ্ছেন তিনি অধিনায়কের পদ থেকে। আজ ভুটানের বিপক্ষে গ্রুপ ম্যাচে বাংলাদেশ তাদের শেষ ম্যাচটি খেলবে। এই ম্যাচেই অধিনায়কের বাহুবদ্ধনীতে দেখা যাবে মামুনুলকে শেষবারের মতো। অধিনায়কত্ব ছাড়লেও আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ খেলবেন মামুনুল। কেননা, বয়স তার পক্ষে। ভাল ফুটবলার হওয়ার তার স্বপ্ন ছিল শৈশব থেকেই। বিকেএসপির সাবেক শিক্ষার্থী (হতে চেয়েছিলেন এ্যাথলেট) পরে বনে যান দেশসেরা মিডফিল্ডার। ২০০০ সালে বিকেএসপিতে ভর্তি হন মামুনুল। ২০০৩ সালে অনুর্ধ ১৭, ২০০৫ সালে অনুর্ধ ১৯ ও ২০০৬ সালে অনুর্ধ ২৩ জাতীয় দলের হয়ে অংশগ্রহণ করেন বিভিন্ন প্রতিযোগিতায়। জাতীয় দলে অভিষেক ২০০৭ সালে। পেশাদার লীগে প্রথম দল ব্রাদার্স ইউনিয়ন। মামুনুল ২০১৪ আইএফএ শিল্ডে খেলে ভারতীয় ফ্যানদের মুগ্ধ করেন, ফলে অনেক ভারতীয় ক্লাব তাকে কেনার আগ্রহ প্রকাশ করে। এর কিছুদিন পরেই কলকাতার ফ্র্যাঞ্চাইজি ফুটবল ক্লাব এ্যাটলেটিকো ডি কলকাতায় খেলার জন্য সেখানে উড়ে যান। যদিও কোন ম্যাচেই খেলানো হয়নি তাকে। পেশাদার লীগে তিনি ব্রাদার্স ইউনিয়ন, শেখ রাসেল ও শেখ জামালের হয়ে খেলেছেন। ক’দিন আগেই তিনি পান ‘বাংলাদেশ ক্রীড়ালেখক সমিতির বর্ষসেরা ফুটবলার’-এর পুরস্কার। সাফে ভারত যাওয়ার আগে দেশবাসীকে একযুগ পর সাফের ট্রফি এনে দেয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলেন। সেই অঙ্গীকার আর হয়ে গেছে ছারখার। উজ্জ্বল ক্যারিয়ারে মামুনুলের এই অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঘটনাটি নিশ্চয়ই এক কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে তার জন্য। এখন দেখার বিষয়, মামুনুলের পর দলের অধিনায়করা হয় কাকে?
×