ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

আলতাফ মাহমুদের জীবনী ‘সুরের বরপুত্রের’ মোড়ক উন্মোচন

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৫

আলতাফ মাহমুদের জীবনী ‘সুরের বরপুত্রের’ মোড়ক উন্মোচন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের বাইরে থেকে মাইকে শোনা যাচ্ছে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’, ‘ঘুমের দেশে ঘুম ভাঙাতে ঘুমিয়ে গেল যারা’, ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন করলিরে বাঙালী তোরা ঢাকার শহর রক্তে ভাসাইলি’সহ একুশে ফেব্রুয়ারির বেশ কিছু কালজয়ী গান। প্রবেশ করেই দেখা গেল পুরো আঙিনাজুড়ে দর্শক নিমগ্নচিত্তে মঞ্চকুসুমের কণ্ঠে শুনছেন এসব গানের অংশবিশেষ। গান তখনও চলছে। তিনি একের পর এক গাইলেন ‘এই ঝন্ঝা মোরা রুখব এই বন্যা মোরা রুখব’, ‘আমি ভাই খ্যাপা বাউল’ ও ‘জয় সত্যের জয়-জয় প্রেমের জয়’। এসব গানের সুরকার শিল্পী শহীদ আলতাফ মাহমুদ। যিনি ঝিলু নামেই অনেকের কাছে পরিচিত ছিলেন। গীতিকার হিসেবেও সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের গানের মাধ্যমে উজ্জীবিত করতে গান রেকর্ড করে স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রচারের জন্য পাঠাতেন। কিন্তু পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী এ দেশীয় দোসরদের সহায়তায় ১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট ঢাকার রাজারবাগের আউটার সার্কুলার রোডের বাসা থেকে চোখ বেঁধে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। শিল্পী শিমুল ইউসুফ খুব ছোটবেলায় আলতাফ মাহমুদের কোলে বসে এসব গান শিখেছিলেন। গানের ফাঁকে তিনি ছোটবেলার সেই স্মৃতির কথা তুলে ধরেন। বুধবার সন্ধ্যায় অমর সুরস্রষ্টা আলতাফ মাহমুদের সংগ্রামী ও সৃষ্টিশীল জীবন নিয়ে প্রকাশিত ‘সুরের বরপুত্র’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের শুরুটা ছিল এমন। বইটি রচনা করেছেন দিনু বিল্লাহ। আলতাফ মাহমুদের ৮২তম জন্মদিন উপলক্ষে এ প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বইটির প্রকাশক মনিরুল হক। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ, ডাঃ সারওয়ার আলী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ, লেখক দিনু বিল্লাহ ও অনন্যা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মনিরুল হক। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, যেসব ব্যক্তিদের চর্চার মধ্যদিয়ে বাঙালীর আত্মপরিচয়ের অনুসন্ধান করি, আলতাফ মাহমুদ তাদের একজন। ষাটের দশকে বাম রাজনীতি বিভাজিত হয়। কিন্তু আলতাফ মাহমুদ কোন বিভাজনে ছিলেন না। তবে এই বিভাজন নিয়ে আলতাফ মাহমুদের দুঃখও ছিল। অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ ‘সুরের বরপুত্র’ বই প্রসঙ্গে বলেন, স্বাভাবিকভাবে গ্রন্থটি একজনের জীবনী মনে হলেও আসলে এতে আমাদের সাংস্কৃতিক জীবনের ইতিহাস গ্রন্থবদ্ধ আছে। আলতাফ মাহমুদ চর্চার মধ্য দিয়ে আমরা নিজেদের জানতে পারি। জানতে পারি আমাদের পায়ের নিচে কোন মাটি আছে। নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বলেন, এখনও পর্যন্ত আলতাফ মাহমুদকে নিয়ে বড় আয়োজনে কোন উৎসব হয়নি। আমরা ভাবছি, বছরে অন্তত একবার তাকে নিয়ে বড় আয়োজন করতে। ‘মধুর আমার মায়ের হাসি’ তথ্যচিত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন ॥ শহীদ জননী জাহানারা ইমাম একাধারে লেখিকা ও শিক্ষাবিদ। একাত্তরের ঘাতক দালালবিরোধী আন্দোলনের নেত্রী। একাত্তরে তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র শফি ইমাম রুমী দেশের মুক্তিসংগ্রামে সফল গেরিলা অপারেশনের পর পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন এবং পরবর্তীতে নির্মমভাবে শহীদ হন। রুমীর শহীদ হওয়ার সূত্রেই তিনি শহীদ জননীর মযার্দায় ভূষিত হন। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের জীবনী নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘মধুর আমার মায়ের হাসি’ নামের একটি তথ্যচিত্র। নির্মাণ করেছেন সেন্টু রায়। জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে বুধবার সন্ধ্যায় ছবিটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়। উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।
×