ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হাতিরঝিল ঘুরে দেখা যাবে ৩০ টাকায়

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৫

হাতিরঝিল ঘুরে দেখা যাবে ৩০ টাকায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য সুখবর। মাত্র ৩০ টাকা দিলেই দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিল পুরোটাই ঘুরে বেড়ানো যাবে। অল্প সময়ের মধ্যেই মিটবে ভ্রমণ পিপাসা। আপাতত ২৭ আসনের চারটি মিনিবাস হাতিরঝিলের চারপাশের দশটি স্টপেজ থেকে যাত্রী তুলবে এবং নামিয়ে দেবে। টিকেট পাওয়া যাবে রামপুরা, মধুবাগ, এফডিসি মোড়, বৌবাজার, শুটিং ক্লাব ও মেরুল বাড্ডাসহ ছয় কাউন্টারে। বুধবার সকালে এই বাসসেবার উদ্বোধন করেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। এ সময় তিনি বলেন, ঢাকাবাসীর আনন্দ আয়োজনের কেন্দ্রবিন্দু হবে হাতিরঝিল। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ, হাতিরঝিলকে যেন ধীরে ধীরে আরও সৌন্দর্যম-িত করা হয়। এখানে তিনি একটি অপেরা হাউস দেখতে চেয়েছেন, সেটাও একদিন বাস্তবায়িত হবে। এই বাসসেবা পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়া এইচআর ট্রান্সপোর্ট লিমিটেডের কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, এক কাউন্টার থেকে আরেক কাউন্টারে সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা। রামপুরা থেকে কাওরানবাজার গেলে ১৫ টাকা লাগবে। আর বাসে করে পুরো হাতিরঝিল ঘুরলে দিতে হবে ৩০ টাকা। রাজউকের হাতিরঝিল প্রকল্পের পরিচালক জামাল আক্তার ভূঁইয়া জানান, এইচআর ট্রান্সপোর্ট লিমিটেড প্রতি মাসে রাজউককে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা দেবে। প্রকল্প উদ্বোধনের পর কোন পরিবহন সেবা চালু না হওয়ায় সম্প্রতি একটি অসাধু চক্র নিজস্ব উদ্যোগে মাইক্রোবাসে যাত্রী পরিবহন করে আসছিল। ১০টির বেশি অনুমোদনহীন মাইক্রোবাস ১০ টাকা ভাড়ায় যাত্রী টানত রামপুরা-কাওরানবাজার পর্যন্ত। এ নিয়ে দৈনিক জনকণ্ঠে স্বচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এক সময় পুরনো খাল নৌকায় পার হয়ে রামপুরার বাসিন্দারা এপারে তেজগাঁওয়ে আসতে পারতেন। সংস্কারকাজ শুরুর প্রায় ছয় বছর পর ২০১৩ সালে প্রকল্পটি উন্মুক্ত করা হলেও বৈধ গণপরিবহনের কোন ব্যবস্থা এতদিন ছিল না। অনুমোদনবিহীন মাইক্রোবাস চলত হাতিরঝিলে। গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর গত নবেম্বরে তা বন্ধ হয়ে গেলে পারাপারে বিপাকে পড়েন রামপুরা থেকে কাওরানবাজারগামী যাত্রীরা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, এ প্রকল্পের জন্য এলাকার মানুষ অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে। এখানে বসতি ছিল, মসজিদ ছিল, মাদ্রাসা ছিল। দায়িত্বে নিয়োজিত সেনা কর্মকর্তারা তাদের সফলভাবে স্থানান্তরে সক্ষম হয়েছেন। আগে রামপুরা থেকে কাওরানবাজারে যেতে যেখানে ৪০ মিনিটের বেশি সময় লাগত, সেখানে এখন হাতিরঝিল হয়ে বাসে করে ১০ মিনিটেই যাওয়া সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী। রাজধানীর পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি, যানজট ও জলাবদ্ধতা নিরসন এবং পরিবেশের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে ২০০৭ সালে হাতিরঝিল সংস্কার প্রকল্প শুরু হয়। পুরনো পয়ঃনিষ্কাশন খালের জায়গায় মাটি খনন করে তৈরি করা হয় লেক। ৩০২ একর জামির ওপর গড়ে ওঠা এ প্রকল্প এলাকায় মোট ১৬ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা এই নগরে হাতিরঝিল ঘিরে এক টুকরা খোলা জায়গা পরিণত হয়েছে নগরবাসীর অন্যতম বিনোদনকেন্দ্রে। পর্যায়ক্রমে হাতিরঝিলের সঙ্গে গুলশান, বারিধারা ও বনানী লেককেও যুক্ত করা হবে বলে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী অনুষ্ঠানে জানান। অন্যদের মধ্যে গণপূর্ত সচিব মঈনুদ্দিন আব্দুল্লাহ ও রাজউক চেয়ারম্যান জেএম জয়নাল আবেদিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এক মাসের মধ্যে আরও দুটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস এই বহরে যোগ হবে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের হাতিরঝিল প্রকল্পের পরিচালক জামাল আক্তার ভূঁইয়া বলেন, বাসের ন্যূনতম ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ টাকা। বাস ছাড়বে রামপুরা ব্রিজের গোড়া থেকে। সেখান থেকে মহানগর প্রজেক্ট ও মধুবাগ হয়ে হয়ে এফডিসি ক্রসিং পর্যন্ত ভাড়া ১৫ টাকা। আবার এফডিসি ক্রসিং থেকে বেগুনবাড়ি, কুনিপাড়া, পুলিশ প্লাজা এবং মেরুল বাড্ডা হয়ে রামপুরা পর্যন্ত একই ভাড়া কার্যকর হবে। যদি কোন যাত্রী রামপুরা ব্রিজ থেকে বৃত্তাকার পথ ঘুরে আবার রামপুরায় যেতে চান, তাহলে তাকে ৩০ টাকা দিতে হবে। সকাল ৭টা থেকে বিরতিহীনভাবে রাত ১১টা পর্যন্ত এই বাস সার্ভিস চালু থাকবে। রাজউক চেয়ারম্যান জানান, রামপুরা ব্রিজ থেকে কাওরানবাজার পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ওয়াটার ট্যাক্সি চালু হবে। প্রকল্প এলাকায় এমপি থিয়েটার ও পাবলিক টয়লেট স্থাপনের কথাও জানান তিনি। ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে হাতিরঝিলকে একটি আইকন প্রকল্প হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দেন রাজউক চেয়ারম্যান। প্রকল্পের সৌন্দর্য রক্ষায় সকলের সহযোগিতা চান তিনি।
×