ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রাহক চাহিদা

প্রকাশিত: ০৪:০১, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৫

গ্রাহক চাহিদা

মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলীলুল্লাহ মোবাইল ফোনের সহজলভ্যতা, সেলফোনের কলরেট সাধারণের একেবারেই হাতের নাগালে চলে আসায় এবং ই-মেইলের ব্যাপক প্রসারের কারণে মানুষ এখন চিঠিপত্র লেখে না বললেই চলে। তার মানে পোস্ট অফিসের প্রয়োজনীয়তা নেই- এ কথা বলা ঠিক হবে না। এখনও অফিস-আদালতের প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট পোস্ট অফিসের মাধ্যমেই আদান-প্রদান হয়। আমি পোস্ট অফিসের কেউ নই। কিন্তু এর সমসাময়িক উদ্যোগগুলো ঠিকই নজর কেড়েছে আমার। যার কারণে ঢালাওভাবে পোস্ট অফিসের অনুপযোগিতার কথা মেনে নিতে পারি না। অস্বীকার করা যাবে না এর কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উদাসীনতা, অনৈতিকতা এবং কর্তব্যের প্রতি অবহেলার সুযোগ নিয়েই কুরিয়ার সার্ভিসগুলো পোস্ট অফিসের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছিল, কিন্তু কুরিয়ার সার্ভিসের বিকল্পও এনেছিল পোস্ট অফিস। জিইপি (গ্যারান্টেড এক্সপ্রেস পোস্ট) নামের এই সার্ভিসটি কুরিয়ার সার্ভিসের উপযুক্ত বিকল্প হতে পারেনি মূলত পোস্ট অফিসের কর্মকর্তাদের ‘দায়সারা মনোভাবের’ কারণে। প্রাইভেট কোম্পানিগুলোকে হটিয়ে ডাকবিভাগের জিইপিকে দেশবাসীর কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য যে ব্যাপক প্রচারণার প্রয়োজন ছিল তা যথাযথ হয়নি। যার কারণে অনেক শিক্ষিত লোকও জিইপির সঙ্গে আজও পরিচিত নন! মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক টাকা-পয়সা আদান-প্রদানের প্রাইভেট যে সার্ভিসটি এখন খুবই জনপ্রিয় এবং সুপরিচিত, এ সার্ভিসটি যে ডাকবিভাগেরও আছে- এ কথা দেশের খুব বেশি মানুষ জানেনই না! ইএমও (ইলেক্ট্রনিক মানি অর্ডার) এবং এমএমও (মোবাইল মানি অর্ডার) সার্ভিস প্রেরকের টাকা তাৎক্ষণিকই শুধু দূর-দূরান্তে প্রাপকের হাতে পৌঁছেই দিচ্ছে না, বরং প্রেরককে প্রাইভেট কোম্পানির চাইতে মাসুল গুনতে হয় কম। প্রাইভেট কোম্পানিগুলো হাজারে ১৮ থেকে ২৫ টাকা মাসুল নিলেও পোস্ট অফিসের ইএমও/এমএমও প্রথম হাজারে ২৭ টাকা এবং পরবর্তী প্রতি হাজারে মাত্র ১০ টাকা মাসুল কেটে রাখে। তাছাড়া প্রাইভেট কোম্পানিগুলো প্রাপকের কাছ থেকে বাধ্যতামূলক (হাজারে) ৫ টাকা আদায় করলেও ডাকবিভাগে প্রাপকের কাছ থেকে কোন টাকা পয়সা কেটে রাখার বিধান নেই। এত চমৎকার সুযোগ থাকার পরও দেশবাসী নানা ধরনের মোবাইল ব্যাংকিং এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর প্রাইভেট কোম্পানির পেছন ছেড়ে আসছে না। ‘কেন?’ জবাব সোজা- অনেকেই জানেন না, অনেকে জানলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলে পোস্ট অফিসের শাখা না থাকায় এবং সপ্তাহের ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা সেবা না পাবার আশঙ্কায় (পোস্ট অফিস খোলা থাকে সপ্তাহে পাঁচদিন, সকাল ৯টা থেকে বিকেল পাঁচটা) ইচ্ছে থাকলেও অগত্যা প্রাইভেট কোম্পানির দ্বারস্থ হতে বাধ্য হন। তাই পোস্ট অফিসকে দুর্নামের বেড়াজাল হতে বেরিয়ে এসে গৌরবজনক অধ্যায়ে ফিরে আসতে হলে গ্রাহকের চাহিদাকে শতভাগ গুরুত্ব দিতে হবে। সময়ের চাহিদাকে সার্থক করে তুলতে হলে তা গুরুত্ব সহকারে মূল্যায়ন করতে হবে। না হলে অপ্রিয় হলেও স্বীকার করতে হবে- জাদুঘরেই স্থান হবে। মিরসরাই, চট্টগ্রাম থেকে
×