ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আবুল মাল আবদুল মুহিত

ছেলেবেলা ও ছাত্রজীবন

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৫

ছেলেবেলা ও ছাত্রজীবন

ছাত্রজীবনের অবসান (২২ ডিসেম্বরের পর) সিএসএস পরীক্ষায় আমি সারা পাকিস্তানে ১৩ নম্বর সফল প্রার্থী হিসেবে উত্তীর্ণ হই। এত নিচে আমার অবস্থানের জন্য শুধু প্রবন্ধ লেখার কম মার্কই দায়ী ছিল না। আমি কোনদিনই ভেবে পাই না যে, কেন্দ্রীয় পাবলিক সার্ভিস কমিশন কেন আমাকে মৌখিক পরীক্ষায় ৩০০ নম্বরের মধ্যে মাত্র ১২০ নম্বর প্রদান করে। ঢাকা কেন্দ্রে আমার মোটেই সমকক্ষ নন এই রকম অনেক প্রার্থী আড়াই শ’ নম্বর পর্যন্ত পান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের একজন প্রার্থী ২৮৫ নম্বর পান। অবশ্য সুখের বিষয় হলো, সিএসপি হিসেবে আমাদের প্রশিক্ষণ যখন শেষ হলো তখন আমি জ্যেষ্ঠতার তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে আসি। আমার উর্ধতন দু’জনই তাদের সময়ে আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রেষ্ঠ ছাত্র হিসেবে গণ্য ছিলেন। আমাদের তালিকায় প্রথম নম্বরে ছিলেন কাজী ফজলুর রহমান (যিনি আমাদের সঙ্গে সিএসএস পরীক্ষায় প্রথম হন)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাতত্ত্ব বিভাগের তিনি ছিলেন একজন নামকরা ছাত্র এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি দুই বছর শিক্ষকতাও করেন। তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন সালাহউদ্দিন আহমেদ (যিনি আমার পূর্ববর্তী বছরে প্রবেশিকা ও ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় প্রথম হন)। তিনি অবশ্য ভুল পছন্দের কারণে পদার্থবিজ্ঞানে সম্মান বিভাগে ভর্তি হন এবং কোনদিনই পরীক্ষা দিতে ইচ্ছুক ছিলেন না। শুধু সিএসএস পরীক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যেই তিনি অবশেষে ১৯৫৫ সালে কোনমতে বিএসসি পাস করেন। তারা দু’জনেই দেশের মধ্যে মেধাসম্পন্ন ছাত্র হিসেবে শীর্ষস্থানে ছিলেন। আমাদের সময়ে সারা পাকিস্তানে সিএসপিদের মধ্যে প্রথম তিনজনই ছিলাম বাঙালী। ১৯৫৬ সালের ১৬ জানুয়ারি শুরু হলো আমার সামান্য সময়ের জন্য শিক্ষক জীবন এবং ১০ এপ্রিল পর্যন্ত এই পদে বহাল থাকি। তবে সব পরীক্ষা এবং ছুটি শেষ হলে আবার আগস্ট মাসে এক মাসের জন্য নিয়মিত শিক্ষক হিসেবে হরগঙ্গা কলেজেই কাজ করি। আমার জন্য শিক্ষকদের হোস্টেলে একটি কামরা বরাদ্দ করা হয়। সেখানে আমি আমার পরবর্তী ভাই আবদুল মুবদি শেলীকে নিয়ে যাই। সে সিলেটে পড়াশোনা তেমন করত না, সাংস্কৃতিক কর্মকা- নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাত। সে তখন আইএসসির ছাত্র ছিল। আমি সপ্তাহে দু’দিন সকাল ৭টার দিকে সাইকেল করে হৃষিকেষ দাস লেনে জ্যোতির্ময় বাবুর বাড়িতে গিয়ে আমার সাইকেলটি রাখতাম। তারপর কয়েক গজ হেঁটে একটি নারায়ণগঞ্জগামী ট্যাক্সিতে আরোহণ করতাম। সচরাচর ট্যাক্সির যাত্রী হতো ৪ জন এবং ভাড়া ছিল মাত্র আট আনা। ট্যাক্সি আমাকে নারায়ণগঞ্জের জাহাজ স্টেশনের কাছে নামিয়ে দিত। সেখানে কোনদিন স্টিমারে আর স্টিমার না পেলে লঞ্চে মুন্সীগঞ্জ যেতাম প্রায় পৌনে এক ঘণ্টায়। মুন্সীগঞ্জে গিয়ে কয়েক পা হেঁটে একটি রিক্সায় চড়ে হরগঙ্গা কলেজের কাছে উপস্থিত হতাম। সেখান থেকে একটি সেতু দিয়ে হেঁটে কলেজে পৌঁছতে মিনিট পাঁচেক লাগত। কলেজে আমাকে একটার পর আর একটা ক্লাস নিতে হতো প্রায় ১০টা থেকে শুরু করে আড়াইটা বা তিনটা পর্যন্ত। তারপর আবার ফেরতযাত্রা শুরু হতো। কয়েকদিনের মধ্যেই বুঝতে পারলাম, আমার ক্লাসে খুব বেশি ছাত্র সমাগম হয় এবং সময়মতো ক্লাস শেষ করলে ছাত্রদেরও তৃপ্তি প্রকাশ পেত। চলবে...
×