ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জেএমবি ও আইএস নিয়ে দু’দেশের গোয়েন্দা সংস্থা নতুন করে আলোচনার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে

জঙ্গী তৎপরতা নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত গোয়েন্দা মতবিনিময়

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২২ ডিসেম্বর ২০১৫

জঙ্গী তৎপরতা নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত গোয়েন্দা মতবিনিময়

শংকর কুমার দে ॥ বাংলাদেশ ও ভারত- দুই দেশেই পালিয়ে বেড়াচ্ছে জঙ্গী সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) দুই দেশেরই মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গীরা। এক দেশে ধাওয়া দিলে অপর দেশে গিয়ে আত্মগোপন করে আবার তৎপর হয়ে ওঠে। এরমধ্যে ভারতের ভূখ-ে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) হুমকির আলামত দেখা যাচ্ছে। এটা বাংলাদেশের জন্যও হুমকি হয়ে উঠতে পারে। জঙ্গী তৎপরতার এ ধরনের বিপজ্জনক অশনি সঙ্কেতের আশঙ্কা করা হচ্ছে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে। এজন্য এসব বিষয়ে আলোচনার জন্য আগামী সপ্তাহে আবারও ঢাকায় আসছে ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ। উদ্দেশ্য জঙ্গী সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) তৎপরতা ও তালিকা বিনিময় এবং ভারতের ভূখ-ে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) তৎপরতার হুমকির ওপর আলোচনা। এর আগেও এনআইএ’র টিম ঢাকায় এসেছিল এবং বাংলাদেশের গোয়েন্দা টিম কলকাতায় গিয়েছিল। তখন দুই দেশই জঙ্গী ও শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা বিনিময় ও আলোচনায় মিলিত হয়। কিন্তু এবারের আলোচনার প্রেক্ষাপট ভিন্নতর হতে পারে ভারতের ভূখ-ে আইএস হুমকির কারণে। বাংলাদেশ ও ভারত- দুই দেশের গোয়েন্দা প্রতিনিধি দলের সদস্যদের আলোচনায় জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদের আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ হতে পারে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, চলতি মাসে ঢাকায় একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন পাঠায় দিল্লী। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে জেএমবির অবস্থান, তালিকা, তৎপরতা বিষয়ে জঙ্গীদের তালিকা রয়েছে। এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাতের চক্রান্তের বিষয়ও আছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বোমা বিস্ফোরণের যে ঘটনাটি ঘটেছে তা ছিল বাংলাদেশবিরোধী চক্রান্তের বহির্প্রকাশ। তারপরই গত শুক্রবার গুজরাটে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে ভারতীয় পুলিশের মহাপরিচালক-মহাপরিদর্শকের সম্মেলনে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গীবাদী সংগঠন আইএস ভারতের প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানে তৎপরতা জোরদার করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। ভারতেও আইএসের কর্মকা-ের কিছু নমুনা দেখা গেছে বলে উল্লেখ করেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। জঙ্গী তৎপরতার এই প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখেই ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ ঢাকায় আসছে বলে জানা গেছে। চলতি বছরের মে মাসে ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ ঢাকায় আসে এবং ঢাকার গোয়েন্দা প্রতিনিধি দল কলকাতায় গিয়ে আলোচনা করে জঙ্গী তৎপরতার বিষয়ে। তখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের খাগড়াগড়ের বোমা বিস্ফোরণে জেএমবির জঙ্গীদের তালিকা ও গ্রেফতার প্রসঙ্গ নিয়ে। তারপর গত সেপ্টেম্বরে আরেক দফা ঢাকায় আসে ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ। তখন ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ যে ১১ জনের তালিকা দিয়েছিল তাদের গ্রেফতারের জন্য খোঁজ করছে বাংলাদেশের গোয়েন্দারা। ১১ জঙ্গী হলো- পশ্চিমবঙ্গের মাওলানা ইউসুফ শেখ, রেজাউল করিম, আমজাদ আলী শেখ, আবুল কালাম, বুরহান শেখ, হাবিবুর রহমান শেখ, জহিরুল শেখ, নসরুল্লাহ, আসামের বাসিন্দা শাহিনুর আলম, কাওসার ও তালহা শেখ। তাদের ধরিয়ে দেয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছে ভারত। ভারতের এনআইএ টিমের দেয়া তালিকা অনুযায়ী গ্রেফতারের জন্য খোঁজ করছে বাংলাদেশের গোয়েন্দারা। কিন্তু তালিকার দেয়া নামের সঙ্গে বাংলাদেশের জঙ্গীদের নামের গরমিল পাওয়া যাচ্ছে। গোয়েন্দাদের ধারণা, বাংলাদেশের জঙ্গীরা ভারতে গিয়ে তাদের নাম বদল করে ফেলেছে। নারায়ণগঞ্জের বন্দরের ফরাজীকান্দার মাসুদ রানা ওরফে মাসুম কলকাতায় গিয়ে যেভাবে সাজিদ ওরফে রহমতউল্লাহ শেখ নাম নিয়ে গ্রেফতার হয়েছে। অপরপক্ষে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে গোয়েন্দারা ১০ জঙ্গীর তালিকা হস্তান্তর করেছে ভারতের গোয়েন্দা টিম এনআইএকে। এই তালিকার মধ্যে হরকত-উল-জিহাদের (হুজি) চার জঙ্গী ও জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) ৬ জঙ্গী রয়েছে। এরমধ্যে হুজির যে চার জঙ্গী রয়েছে তার মধ্যে মাওলানা তাজউদ্দিন, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মুফতি শফিকুর রহমান ও মুফতি আবদুল হাই রয়েছে। এই চার জঙ্গী মৃত্যুদ-াদেশপ্রাপ্ত ফাঁসির আসামি। এছাড়াও জেএমবির ৬ জঙ্গী হলো- জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য আবু সাঈদ শেখ, তরিকুল ইসলাম, সোহেল মাহফুজ, আনোয়ারুল ইসলাম ও শাখাওয়াত।
×