ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নাইরোবির ডব্লিউটিও বৈঠক সম্পর্কে জানালেন তোফায়েল

এলডিসির শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা নিশ্চিত

প্রকাশিত: ০৫:১০, ২২ ডিসেম্বর ২০১৫

এলডিসির শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা নিশ্চিত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার দশম মিনিস্ট্রিয়াল বৈঠকে স্বচ্ছ রুলস অব অরিজিন প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারবে স্বল্পোন্নত দেশগুলো। এর ফলে পণ্য রফতানিতে ৭৫ শতাংশ আউটসোর্সিং সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। এছাড়া সেবা খাতে বাণিজ্য বৃদ্ধিতে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা পাবে স্বল্পোন্নত (এলডিসি) দেশগুলো। এ লক্ষ্যে ওয়েভারের (স্বত্বত্যাগ) মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এতে করে মানবসম্পদ নির্ভর সেবা খাতের বাণিজ্যের উজ্জ্বল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানি বাড়বে। এছাড়া গার্মেন্টস, কেমিক্যাল, প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রফতানিতে সিঙ্গল ট্রান্সফরমেশন সুবিধা পাওয়া যাবে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নাইরোবি ঘোষণায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এতে এলডিসির বেশিরভাগ দেশের দাবি পূরণ হয়েছে বলে মনে করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। সোমবার সচিবালয়ে নাইরোবিতে অনুষ্ঠিত ১৫-১৮ ডিসেম্বর ডব্লিউটিওর মিনিস্ট্রিয়াল বৈঠকের অর্জন নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর সমন্বয়ক ও মুখপাত্র হিসেবে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, দীর্ঘ আলোচনা ও দরকষাকষিতে সম্মেলনের শেষ দিন পর্যন্ত সমাধান হয়নি। পরে একদিন বাড়িয়ে এলডিসির দাবি অনুযায়ী শেষ পর্যন্ত সমঝোতা হয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দাবি আদায়ে এবার এলডিসি ঐক্যবদ্ধ ছিল। এ কারণে কঠোর অবস্থানে থেকে দাবি জানানো হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলো পণ্যের উৎসবিধি ও সেবা বাণিজ্যে ছাড় পাবে। এছাড়া ডব্লিউটিও সমঝোতা অনুযায়ী, এলডিসির ইস্যু অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাধানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওষুধের ক্ষেত্রে মেধাস্বত্ব সংক্রান্ত অব্যাহতির মেয়াদ ’৩৩ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর বিষয়ে মন্ত্রীপর্যায়ের সম্মেলনে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। পাশাপাশি উন্নত বিশ্ব এখনই কৃষিপণ্য রফতানিতে ভর্তুকি তুলে নেবে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো ’২৩ সাল শেষে তা তুলে নেবে। তবে এলডিসির জন্য এ সুবিধা বেশি দেয়া হয়েছে। এলডিসি কৃষি পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ পরিবহনে ’৩০ সাল পর্যন্ত ভর্তুকি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এলডিসি সমন্বয়ক তোফায়েল আহমেদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র টিপিপিসহ আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি করছে। কিন্তু এতদিন এতে ডব্লিউটিও বাধা দেয়নি। দেশটি নিজের মতো করে করেছে। আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি বিশ^ বাণিজ্যে ব্যত্যয় না ঘটায় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এলডিসির শতভাগ শুল্কমুক্ত রফতানির অঙ্গীকার না পাওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, অনেক দেশ এ সুবিধা দিলেও কিছু উন্নত দেশ দেয়নি। তবে এ সুবিধা না দিলেও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। সেবা খাতে বাণিজ্য সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ারসহ উন্নত সেবা রফতানির জন্য আরও উপযোগী করে তৈরি করা হবে। তিনি বলেন, এবারের সম্মেলনে বাংলাদেশের উন্নয়নের গল্প শুনিয়ে এসেছি। আত্মসম্মানবোধের কারণে মন্ত্রীপর্যায়ের ওই সম্মেলনে জিএসপি সুবিধার প্রসঙ্গ তুলিনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশের মধ্যে অনেক পার্থক্য। সিঙ্গাপুরে বাজার সুবিধা প্রস্তাব আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে করেছিলাম। যারা সেদিন বিরোধিতা করেছিল, তারা ঘোষণাপত্রে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল। সেই সব দেশ, পৃথিবীর বহু দেশ আমাদের বাজার প্রবেশাধিকার দিয়েছে। সম্মেলনে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর নেতৃত্ব দেয়া তোফায়েল আহমেদ নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশের সন্তান হিসেবে আমি পরিষ্কারভাবে বলেছি, আমরা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আছি। ভবিষ্যতেও দাঁড়াব। আমরা অন্যের দ্বারস্থ হব না। এ কারণেই আমরা বাংলাদেশ বাংলাদেশ করিনি। জিএসপি সুবিধা না দেয়া বা স্থগিতের কথা সম্মেলনে তোলেননি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, কারণ আমি মন্ত্রী হিসেবে সম্মানিত একটা জাতির প্রতিনিধিত্ব করি। বলেছি, আমাদের অর্থনীতি ভাল হচ্ছে। তোমাদের দেশেও আমরা বেশি পণ্য রফতানি করছি। এই বছর এটা ছয় বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। তোমাদের দেশে আমাদের সবচেয়ে বেশি পণ্য যায়। বাংলাদেশের অবস্থা এই মুহূর্তে পৃথিবীর যে কোন দেশের চেয়ে ভাল দাবি করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ভানুয়াতুর লোকসংখ্যা হয়ত এক লাখ হবে। মালদ্বীপের লোকসংখ্যা ৫ লাখও হবে না। বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বলেন, ডাক্তার-প্রকৌশলী পাঠাতে আমাদের আরও প্রস্তুত হতে হবে। ১৯ দেশ থেকে এ বিষয়ে সুবিধা পাওয়ার আশ্বাস পেয়েছি। ১৬২ দেশ রাজি হলেই একটি সিদ্ধান্তে রাজি হতে হবে। এটি বাণিজ্যিক বিষয়, আবেগের নয়। আমাদের চিকিৎসকদের যোগ্যতা-দক্ষতা ইউরোপে গ্রহণযোগ্যতা পেতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে ইন্ট্যারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, নাইরোবিতে এলডিসির নেতৃত্বে ক্ষেত্রে বাণিজ্যমন্ত্রীর কঠোর অবস্থানে স্বল্পোন্নত দেশের অর্জন সম্ভব হয়েছে। এতে বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলো লাভবান হবে। ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান আব্দুল মুক্তাদির বলেন, ওষুধে মেধাস্বত্বের অব্যাহতির মেয়াদ বাড়ানো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বড় অর্জন। এর ফলে দেশের মানুষ সুলভ মূল্যে দীর্ঘদিন ওষুধ কিনতে পারবে। এমসিসিআই সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, এলডিসি আলোচনায় নেতৃত্বে থাকা বাংলাদেশের কঠোর অবস্থানের কারণে এবার বড় অর্জন হয়েছে। এলডিসির সঙ্গে শেষ বৈঠকে আলোচনায় নেয়া সিদ্ধান্ত কোন কিছু পরিবর্তন না করেই নাইরোবি ঘোষণা এসেছে। বিজিএমইএর সহ-সভাপতি আসলাম সানি বলেন, পোশাক খাত প্রতিকূলতার মধ্যে থাকলেও ভাল করছে। এ মাসে এ খাতে রফতানি প্রবৃদ্ধি হবে ১৫ শতাংশ। এ বছরে গড়ে ১০ শতাংশ হারে রফতানি প্রবৃদ্ধি হবে। তবে দেশের বাণিজ্য প্রসারে ডব্লিউটিও রুলস অব অরিজিনের ক্ষেত্রে বড় অর্জন হয়েছে। পোশাক শ্রমিকের নিরাপত্তা নিয়ে প্রকাশিত সংবাদ সঠিক নয় ॥ বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ আরও বলেছেন, কয়েকটি পত্রিকা সম্প্রতি ৩০ লাখ পোশাক শ্রমিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলে যে প্রতিবেদন করেছে, তা সর্বৈব মিথ্যা। যে সংগঠনের নামে এটা প্রকাশ করা হয়েছে, তিনি জীবনেও সেটির নাম শোনেননি।
×