ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পাঁচ মাসে ঋণ নেয়ার চেয়ে পরিশোধ বেশি

সরকারের ব্যাংক ঋণ কমছে

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ২২ ডিসেম্বর ২০১৫

সরকারের ব্যাংক ঋণ কমছে

রহিম শেখ ॥ চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে সরকারের ব্যাংকনির্ভরতা অস্বাভাবিক হারে কমে গেছে। ফলে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে সরকার যত টাকা ঋণ নিচ্ছে তার চেয়ে বেশি শোধ করছে। এতে সরকারের নিট ঋণও ঋণাত্মক ধারায় নেমে গেছে। চলতি অর্থবছরের নবেম্বর শেষে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার যে পরিমাণ ঋণ করেছে তার চেয়ে বেশি পরিশোধ করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সঞ্চয়পত্র বিক্রি বৃদ্ধি ও বৈদেশিক সহায়তা ছাড়ে গতি আসায় ঘাটতি অর্থায়নে সরকারের ব্যাংকনির্ভরতা কমেছে। পাশাপাশি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়নে ধীরগতির জন্যও সরকারের বাংক ঋণের চাহিদা কম হচ্ছে। জাতীয় সঞ্চয় পরিদফতরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর এই চার মাসে ৯ হাজার ৩৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৬০ শতাংশ সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। গেল অর্থবছরের চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) মাসে সঞ্চয়পত্রে নিট বিক্রি আসে ৯ হাজার ৭৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এদিকে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বৈদেশিক সহায়তা ৪২ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। যা গেল অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ কোটি ৪১ লাখ ডলার বা সাড়ে ১৪ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ১৭ শতাংশ। অথচ গেল অর্থবছরের একই সময়ে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ২০ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের শুরুতে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে বড় অঙ্কের ঋণ করে সরকার। মাত্র নয় দিনেই প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার মতো ঋণ করে সরকার। ওই সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও ঋণ নিয়েছিল সরকার। বাজেট ঘাটতি মেটাতে চলতি অর্থবছরে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৩৮ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, অর্থবছরের শুরুতে সরকারের আয় কম থাকে। এজন্য প্রতিবছরই সরকার এ সময়ে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে বড় অঙ্কের ঋণ নিয়ে থাকে। যা পরবর্তীতে আবার কমে যায়। সাধারণত ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার বেশি ঋণ নিলে বেসরকারী খাত নিরুৎসাহিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু দীর্ঘ বিনিয়োগ মন্দার কারণে ব্যাংকিং খাতে প্রচুর উদ্বৃত্ত তারল্য জমলেও এবার সরকারী ও বেসরকারী খাতে ব্যাংকঋণের চাহিদা কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার নীটব্যাংক ঋণ দাঁড়িয়েছে (-) ঋণাত্মক ১১১ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়েও সরকারের নীট ব্যাংকঋণ ঋণাত্মক ধারায় ছিল। এ সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের নেয়া ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে নেয়া সরকারের ঋণ ছিল প্রায় ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এ হিসাবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের নেয়া ব্যাংকঋণ সামান্য বেড়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ সময়ে কোন ঋণ করেনি সরকার। আগের নেয়া ঋণের ৩ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা শোধ দেখানোয় সরকারের সার্বিক নীট ব্যাংকঋণ ঋণাত্মক ধারায় রয়েছে। বিদায়ী অর্থবছরেও সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে উল্টো আগের নেয়া ঋণ পরিশোধ করেছে। গেল অর্থবছরে ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩১ হাজার ২২১ কোটি টাকা। কিন্তু অর্থবছর শেষে সরকারের ব্যাংকঋণ ঋণাত্মক ধারায় নেমে আসে। যার পরিমাণ ঋণাত্মক (-) ৬ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা। এ সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকেও সরকারের নেয়া ঋণও ঋণাত্মক ধারায় নেমে আসে। অথচ আগের ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের নেয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ২৪ হাজার কোটি টাকা। যদিও ওই অর্থবছরে সরকারের নিট ব্যাংকঋণ দেখানো হয়েছিল ৬ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা। মূলত সঞ্চয়পত্রের বিক্রি অস্বাভাবিক হারে বাড়ায় গেল অর্থবছরে সরকারের ঋণ চাহিদা কম ছিল। সরকারের ব্যাংক ঋণ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ব্যাংক থেকে কোন ঋণ না নিয়ে উল্টো ৭ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়। এরপর প্রতিবারই ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার পরিমাণ বেড়েছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে ব্যাংক থেকে সরকার নিট ২০ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা ঋণ নেয়। পরবর্তী অর্থবছরে নেয়া হয় ২১ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছরে তা আরও বেড়ে হয় ২৪ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা।
×