ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পটুয়াখালীর চরাঞ্চলে লাল নিশান আতঙ্ক

প্রকাশিত: ০৭:৪৪, ২১ ডিসেম্বর ২০১৫

পটুয়াখালীর চরাঞ্চলে লাল নিশান আতঙ্ক

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ গলাচিপা ও রাঙ্গাবালী উপজেলার চরাঞ্চলে যখন আমন ধানে সোনা রং ধরেছে। তখনই কৃষকের চোখে মুখে নেমে এসেছে আতঙ্কের কালোছায়া। অসংখ্য কৃষকের স্বপ্ন গ্রাস করে নিয়েছে সরকারী লাল নিশান। খাজনা আদায়ের নামে ভূমি দফতর দুই উপজেলার ৫০টির অধিক চরের কয়েক হাজার একর জমির আমন ধানক্ষেতে বাঁশের মাথায় লাল নিশান তুলে দিয়েছে। ফলে ধান নিয়ে কৃষকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে নানা শঙ্কা। এ বছর ঘরে ধান তুলতে পারবেন কি-না এ নিয়ে কৃষকরা নানা সংশয় ও আতঙ্কে ভুগছে। অন্যদিকে লাল নিশানের কারণে অন্যান্য বছরের মতো এবারও একশ্রেণীর লাঠিয়াল জোতদারদের মধ্যে বইছে আনন্দের বন্যা। তারা কৃষকের ফলানো ধান লুটের পাঁয়তারা করছে। কয়েকটি দ্বীপগ্রাম ও চর ঘুরে এ তথ্য পাওয়া গেছে। জানা গেছে, পটুয়াখালীর গলাচিপা ও রাঙ্গাবালী উপজেলায় এবার পৌনে দুই লাখ একর জমিতে রোপা আমন ধানের চাষ হয়েছে। দুই উপজেলার শতাধিক চর ও দ্বীপগ্রামে এখনও কয়েক হাজার একর সরকারী খাস জমি রয়েছে, যা কৃষকরা একসনা ডিসিআর কেটে ভোগ দখল করছে। এছাড়া চরাঞ্চলগুলোতে এ যাবত স্থায়ী বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে ৫০ হাজার একরের বেশি জমি। বন্দোবস্ত নিয়ে যদিও নানা অভিযোগ রয়েছে। যে কারণে গলাচিপা ও রাঙ্গাবালীর চরাঞ্চলে প্রতি বছর ধান কাটা মৌসুম এলেই শুরু হয় দাঙ্গা-হাঙ্গামা, লুটপাট ও মারপিটসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকা-। অভিযোগ রয়েছে, চাষাবাদের সময় কৃষকরা আবেদন-নিবেদন করেও খাসজমি চিহ্নিত করতে সার্ভেয়ারসহ সংশ্লিষ্ট কাউকে চরে নিতে পারে না। কিন্তু ধান পাকা শুরু হলেই রাজস্ব বা খাজনা আদায়ের নামে ভূমি দফতরের লোকজন ধানি জমিতে লাল নিশান তুলে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অন্যান্য বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও গলাচিপা ও রাঙ্গাবালী উপজেলায় কয়েক হাজার একর জমিতে এরই মধ্যে লাল নিশান ওড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে গলাচিপা উপজেলায় আমখোলা, ডাকুয়া, গলাচিপা সদর, চরকাজল, চরবিশ্বাস ইউনিয়ন, বকুলবাড়িয়া, রাঙ্গাবালী উপজেলায় চালিতাবুনিয়া, বড়বাইশদিয়া, ছোটবাইশদিয়া, রাঙ্গাবালী সদর, চরমোন্তাজ ইউনিয়নের প্রায় তিন হাজার একর জমিতে লাল নিশান ওড়ানো হয়েছে। ধানি জমির মাঝখানে বাঁশ পুঁতে তার মাথায় লাল কাপড় বেঁধে কৃষকদের ধান কাটায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কৃষকদের অভিযোগ, ভূমি দফতরের একশ্রেণীর কর্মচারী নিজেরা লাভবান হতে চাষাবাদের মৌসুমের পরিবর্তে ধান কাটার সময়ে লাল নিশান তুলে খাজনা ও একসনা ডিসিআরের নামে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। একসনা ডিসিআরে প্রতি একর জমির জন্য তিনশ’ টাকা রাজস্ব হলেও ভূমি দফতরের কর্মচারীরা কয়েকগুণ বেশি আদায় করছে। কৃষকরা এ অর্থ দিতে ব্যর্থ হলেই ধান কাটার জন্য সরকারী দলের নেতাকর্মী ও লাঠিয়ালদের ক্ষেতে নামিয়ে দেয়ারও পাঁয়তারা চলছে। কোথাও কোথাও ভূমি দফতরের কর্মচারীদের জোতদাররা কয়েক গুণ বেশি অর্থ দিয়ে ম্যানেজ করে ধান লুটের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যে কারণে অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও লাল নিশান তুলে দেয়া জমির ধান কৃষকরা ঘরে তুলতে পারবে কি-না, এ নিয়ে তাদের মধ্যে সংশয়-আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে গলাচিপা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাজী মোঃ সায়েমুজ্জামান জানান, সাধারণ মানুষের কোন জমিতে লাল নিশান ওড়ানো হয়নি। সর্বশেষ জরিপে ৪০/৫০ একর জমি সরকারী খাস হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তার দফতরের মাধ্যমে কেবলমাত্র ওই জমিতে লাল নিশান তোলা হয়েছে। আর সহকারী ভূমি কর্মকর্তারা কিছু জমিতে লাল নিশান তুলেছে। তবে সে হিসাব তাঁর কাছে নেই।
×