ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিমানবন্দর ও সীমান্তে কড়া নজরদারির নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৪:৪৩, ২১ ডিসেম্বর ২০১৫

বিমানবন্দর ও সীমান্তে কড়া নজরদারির নির্দেশ

শংকর কুমার দে ॥ পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গীরা যাতে বাংলাদেশের ভূখ-ে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সীমান্ত ও বিমানবন্দরে সতর্ক থাকা এবং নজরদারি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাকে। ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বিদেশে জন্মসূত্রে নাগরিক বাংলাদেশী বংশোদ্ভূতরা বাংলাদেশের ভূখ-ে অবস্থান, তৎপরতা চালাতে পারে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন গোয়েন্দারা। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, আফগানিস্তান, পাকিস্তানসহ এশিয়ায় আইএস জঙ্গীর হুমকি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাকে। তাড়া খেয়ে পাশ্বর্¦বর্তী দেশগুলো থেকে বাংলাদেশের ভূখ-ে যাতে আইএস জঙ্গী ঢুকতে না পারে সেজন্য সতর্ক থাকা ও নজরদারি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন আইএস প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানে তৎপরতা জোরদার করার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। শুক্রবার গুজরাটে ভারতীয় পুলিশের মহাপরিচালক মহাপরিদর্শকের সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ভারতেও আইএসের কর্মকা-ের কিছু নমুনা দেখা গেছে। ভারতে আইএসের কর্মকা-ের নমুনা দেখা যাওয়ার রেশ বাংলাদেশে যাতে না পড়তে পারে সেজন্য সতর্ক ও নজরদারি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাকে। সীমান্ত এলাকার চৌকিগুলোতে বিজিবি প্রহরা জোরদার, বিমানবন্দর এলাকায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত নাগরিকদের প্রবেশের বিষয়ে কড়াকড়ি ও তল্লাশির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, জামা‘আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ থেকে তাড়া খেয়ে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে গিয়ে ঘাঁটি গেড়ে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। আবার ভারত থেকে তাড়া খেয়ে বাংলাদেশের ভূখ-ে প্রবেশ করছে। বাংলাদেশ ও ভারতের বিশাল অরক্ষিত সীমান্ত এলাকা দু’দেশের জঙ্গীরা ব্যবহার করার নজির রয়েছে। তবে দুই দেশের কঠোর অবস্থানের কারণে সীমান্ত রক্ষীরা জঙ্গী আসা-যাওয়া, চোরাচালান, জালনোট, মাদক পাচারের ঘটনাগুলো নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। এখন আবার যাতে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন আইএস পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে নিরাপত্তার ফাঁক গলিয়ে কোনভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সতর্ক ও নজরদারি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ব্রিটেনে জন্মগত সূত্রে নাগরিক ও বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত এমন ৭শ’ জঙ্গী আইএসের যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে ইরাক ও সিরিয়ায়। এর মধ্যে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আইএস জঙ্গীর সংখ্যা ৫০ জন। যেহেতু ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে এসব জঙ্গীর ব্রিটেনে ফেরার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তাই এসব জঙ্গী ব্রিটেনে ফিরতে না পেরে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে। এই তথ্য ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার। ২০১৪ সালে সামিয়ূন রহমান নামে ২৪ বছর বয়সী এক বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশকে আইএসের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে ঢাকায় গ্রেফতার করা হয়। সামিয়ূন গোয়েন্দাদের কাছে স্বীকার করেছে সে আইএসের কর্মী সংগ্রহের কাজে বাংলাদেশে এসেছিল। বাংলাদেশ সরকার সামিয়ূনকে ব্রিটিশ সরকারের কাছে হস্তান্তর করে। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন আইএসের অবস্থান ও তৎপরতা চালানোর সুযোগ নেই। কারণ বিদেশী কোন নাগরিক বাংলাদেশে এসে অবস্থান ও তৎপরতা চালাতে গেলে সহজেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মানুষজনের নজরে পড়ে যাবে। কোন ঘটনা ঘটলে বিভিন্ন সময়ে জঙ্গী সংগঠনগুলোর মধ্যে বিশেষ করে জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, হিযবুত, হুজির জঙ্গীরাই নিজেদের আইএস জঙ্গী দাবি করে আসছে এবং ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিদেশের সাইট ব্যবহার করে আইএস দাবি করার প্রবণতাও ধরা পড়ে গেছে। পার্শ্ববর্তী দেশগুলো বিশেষ করে ভারতের মাটি ব্যবহার করে যাতে আইএস বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে এবং দেশী জঙ্গী সংগঠনগুলোর কোন ধরনের সহায়তা না পায় সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সতর্ক থাকা ও নজরদারি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
×