ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আবুল মাল আবদুল মুহিত

ছেলেবেলা ও ছাত্রজীবন

প্রকাশিত: ০৩:৩৬, ২১ ডিসেম্বর ২০১৫

ছেলেবেলা ও ছাত্রজীবন

ছাত্রজীবনের অবসান (২০ ডিসেম্বরের পর) ক্স এই বছর আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে একটি পিকনিকের আয়োজন করি শান্তিনগরে। পিকনিকের আয়োজনটি করা হয় আমাদের কয়েকজন বীর পুরুষের একটি চুরিকে কেন্দ্র করে। তারা কিভাবে জানি একটি পালিত রাজহাঁসকে চুরি করে শান্তিনগরে তাদের কারও আত্মীয়ের বাড়িতে জমা দেন। এই রাজহাঁসটিকে কেন্দ্র করেই আমাদের পিকনিক হয়। ছেলেমেয়েসহ আমরা ছিলাম ১০ জন। তবে এই পিকনিকের ভাল দিকটি ছিল খাওয়া-দাওয়া শেষে আমাদের মনে খুব অনুশোচনা জাগে। তখন আমরা ঠিক করলাম, যার হাঁসটি চুরি হয়েছে তাকে নিয়ে আমাদের একটি পিকনিক করা দরকার। সেইজন্য ২৩ জানুয়ারি আমরা ঢাকার নিকট কাওরাইদ এলাকায় একটি পিকনিকের আয়োজন করি। এই পিকনিকে শেষ পর্যন্ত আমরা ১৩ জন উপস্থিত ছিলাম এবং সারাটা দিন মহানন্দে আমরা কাটাই। আমি সেই সময়ই বুঝতে পারলাম এসব অনুষ্ঠানে রান্নাবান্নার ব্যবস্থা করা বা রান্নাবান্না করতে আমার বেশ দক্ষতা ছিল। দু’দিন পরেই আমার জন্মদিনে আমি আমার বন্ধুদের এক বিরাট দলকে বলধা বাগানে চায়ের নিমন্ত্রণ করি। জন্মদিবস পালন করা ছাড়াও আর একটি উদ্দেশ্য ছিল অনার্স পরীক্ষায় কৃতিত্বের জন্য বন্ধুদের আপ্যায়ন করা। বলধা বাগানে হ্রদ ঘেঁষে নানা দলবেঁধে আমরা দিনটি কাটাই। এই অনুষ্ঠানে আমরা মোটমাট প্রায় দেড় শ’ ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিত ছিলাম। ক্স সম্ভবত ১৯৫৪ কি ১৯৫৫ সালে ঢাকার বিখ্যাত শিক্ষক এবং উপাচার্য ড. মাহমুদ হাসান পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি থেকে অবসর নিয়ে ঢাকায় বসবাস করতে আসেন। তার সম্বন্ধে আমরা অনেক শুনেছি। তিনি অত্যন্ত দক্ষ অধ্যাপক ছিলেন এবং উপাচার্য হিসেবেও অতি উত্তম ছিলেন। তাকে আমাদের ইংরেজী বিভাগে একটি বক্তৃতা দেয়ার জন্য ৪ অক্টোবর আমন্ত্রণ করা হয়। যদিও দু’দিন পরেই আমার পরীক্ষা শুরু হবে, তবুও আমি এই আলোচনায় যোগ দিই। ড. হোসেনের বক্তৃতাটি আমার খুব ভাল লাগে এবং তখন থেকে তার সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। পরবর্তী সময়ে আমি তাকে করাচীতে পাই যখন তিনি পাকিস্তান পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য ছিলেন। তার রসিকতা, জ্ঞান এবং সামাজিক আচার-আচরণ আমাকে খুবই মুগ্ধ করে। আমি চিরদিনই তাকে শিক্ষক এবং গুরু হিসেবে সম্মান দিতে কার্পণ্য করিনি। ক্স সম্ভবত ১৯৫৪ সালের শেষে অথবা ১৯৫৫ সালেই আজিমপুরের পাশে বেবী আইসক্রিমের একটি কারখানা স্থাপিত হয়। সম্ভবত এটা এদেশের প্রথম উন্নতমানের আইসক্রিম কারখানা ছিল। সেখানে তারা আইসক্রিম পরিবেশনার জন্যও সুন্দর ব্যবস্থা নেয়। আমার মনে হয় তারা অনেক দিন পরে গুলিস্তান সিনেমা হলেও আইসক্রিমের একটি বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করে। আজিমপুরে কারখানা এলাকায় তাদের আইসক্রিম দোকানে আমরা প্রায়ই দলবেঁধে রাতে আইসক্রিম খেতাম। ঢাকার গরমে এরচেয়ে ভাল কোন খাদ্য আছে বলে তখন আমার মনে হতো না। এখনও সম্ভবত আইসক্রিমের আকর্ষণ আমার কাছে খুবই শাক্তিশালী। ক্স এই বছরের শেষভাগে অতি চমৎকার একটি ছবি মুক্তি পায়। ছবিটির নাম ছিল ‘রোমান হলিডে’। এর নায়ক ছিলেন ‘গ্রেগরি প্যাক’ এবং নায়িকা ছিলেন অড্রে হ্যাপবার্ন। অড্রে হ্যাপবার্ন তখন নায়িকাদের মধ্যে আমার খুবই প্রিয় ছিলেন। তার সুনাম ছিল, তিনি যেমন ছিলেন সুন্দরী ঠিক তেমনি কাপড়-চোপড়েও ছিলেন দুরস্ত। এই ছবিতে তিনি একজন কুমারী রাণী হিসেবে রোম ভ্রমণে গিয়েছিলেন এবং সব লৌকিকতা ছেড়ে তার নিরাপত্তায় নিয়োজিত সঙ্গী-সাথীদের ফাঁকি দিয়ে ছদ্মবেশে রোম মহানগরটি পরিভ্রমণ করেন। তাকে কিন্তু একজন সাংবাদিক গ্রেগরি প্যাক ঠিকমতোই ধরে ফেলেন এবং ছলে-কৌশলে তার পথপ্রদর্শক হিসেবে সঙ্গ দেন। সারাটি কাহিনী হচ্ছে একজন সাধারণ মানুষের বিশেষ করে মহিলার রোম পরিভ্রমণ নিয়ে। এখানে তাকে গুরুগম্ভীর রাণী চরিত্রের পরিবর্তে হাস্যোজ্জ্বল, খোলামেলা এবং সুরুচিসম্পন্ন সাধারণ মহিলা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। এই ছবিটি এখনও আমার খুব প্রিয়। ছাত্রজীবনে এবং পরবর্তী ৫Ñ৭ বছরের মধ্যে এই ছবিটি আমি ১৩ বার দেখি। এখনও এটিকে আমার দেখা শ্রেষ্ঠ ছবি হিসেবে বিবেচনা করি। চলবে...
×