ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আলিফ লায়লার সেতারে মুগ্ধ শ্রোতা

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ২০ ডিসেম্বর ২০১৫

আলিফ লায়লার সেতারে মুগ্ধ শ্রোতা

গৌতম পা-ে ॥ কোন বাক্য উচ্চারণ নয়, শুধু সুরের অনুরণন। মর্মে গিয়ে অন্তরকে ধাক্কা দিয়ে যেন জানান দিচ্ছে, আমি সুরের ধারায় ভাসিয়ে দিতে এসেছি। গুলশানের ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র মিলনায়তনের প্রতিটি দর্শক এমনই এক সুরের মায়াজালে নিমগ্ম থেকে নিজেকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করছিলেন শুক্রবার সন্ধ্যায়। শিল্পী আলিফ লায়লা সেতারে সুরের ঝংকার তুলে মুহূর্তের মধ্যে সুরলোকে পৌঁছে দিলেন সকলকে। বিভিন্ন রাগের সুর তরঙ্গ নিয়ে খেলা করতে করতে শিল্পী নিজেও যেন পৌঁছে গিয়েছিলেন মর্মলোকে। রাগের মাধুর্যকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে ভারতীয় শিল্পী রূপক ভট্টাচার্যের তবলা বাদন। শিল্পী আলিফ লায়লার একক সেতার বাদনের এ আয়োজন করে ঢাকার ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। অনুষ্ঠান শুরুর আগে শিল্পী আলিফ লায়লা বিনয়ের সঙ্গে বলেন, আমি আজ ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত পরিবেশন করব কিন্তু এ সঙ্গীত শুধু ভারতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর ব্যাপকতা বিশ্বব্যাপী। সুরের মধ্য দিয়ে সবাইকে যদি কিছুক্ষণের জন্য হলেও আনন্দ দিতে পারি, তবেই আমার সার্থকতা। রাগ ইমন দিয়ে শুরু হয় তাঁর পরিবেশনা। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে এই রাগের প্রথম প্রচলন করেন হযরত আমির খসরু। লঘু মেজাজের এ রাগটি সূর্যাস্তের সময় পরিবেশন করা হয়। শিল্পী ঠিক সময়ে ঠিক রাগটি বেছে নিয়েছিলেন। প্রায় ২০ মিনিট ধরে রাগের আলাপ বাজিয়ে শোনান। পরে রূপক তালে জোর ও তান করেন। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা ব্যাপ্তিতে সুরের এক মোহময়তা তৈরি হয় মিলনায়তনজুড়ে। শ্রোতার উপস্থিতি আশানুরূপ না হলেও সমঝদার শ্রোতার ঘাটতি ছিল না। শুধু সেতার আর তবলার মেলবন্ধন ছাড়া আর কোন শব্দই ছিল না। শ্রোতাদের কেউ কেউ চোখ বন্ধ করে সুরের মাধুর্য অনুধাবন করার চেষ্টা করছিলেন, কেউবা নির্লিপ্তে শিল্পীর হাতের কারসাজি দেখছিলেন। রাগ পরিবেশনার শেষে হাততালি আর অসাধারণ কথাটি বলতে সম্ভবত কেউই ভুল করেননি। শিল্পীর পরের পরিবেশনায় ছিল রাগ ঝিনঝুটি। রাগ পরিবেশনের আগে সুর বাঁধতে গিয়ে একটি তার ছিঁড়ে যায়। শিল্পী প্রস্তুত ছিলেন এমন সমস্যা মোকাবেলা করার। কাছে থাকা আরেকটি তার জুড়িয়ে সঙ্গে সঙ্গে সুর বেঁধে নিলেন। প্রথমে রাগের আলাপ ও দীপচ-ি তালে বন্দিশ করে নিলেন। দ্রুত লয়ের তিন তালের পর ঝালা পরিবেশনার মধ্য দিয়ে রাগটি শেষ করেন। শিল্পীর সব শেষ পরিবেশনায় ছিল রাগ শিবরঞ্জনী। বড় রোমান্টিক এই রাগ। শিল্পী আলিফ লায়লা সেতারে তালিম নিয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, কৃষ্ণ ভাট ও কুশল দাশের মতো বড় বড় ওস্তাদের কাছে। সেতার শিক্ষার পাশাপাশি তাঁর আরেকটি পরিচয় হলো তিনি একজন চিত্রশিল্পী। রংতুলিতেও তার রয়েছে অসাধারণ ক্ষমতা। তিনি রাগ শিবরঞ্জনীতে আলাপ ও ঝালা বাজিয়ে সকলকে মুগ্ধ করেন।
×