ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঘরের কাঁটাই রক্তচাপ বাড়াচ্ছে বিজেপির

প্রকাশিত: ১৭:৪০, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৫

ঘরের কাঁটাই রক্তচাপ বাড়াচ্ছে বিজেপির

অনলাইন ডেস্ক ॥ প্রতিপক্ষের চাপ তো রয়েইছে। তবে ‘ঘরের কাঁটা’ দূর করতেই এখন বেশি ব্যস্ত বিজেপি। অরুণ জেটলির বিরুদ্ধে আপ সুর চড়াচ্ছে কয়েক দিন ধরেই। ফিরোজ শাহ কোটলা স্টেডিয়ামের সংস্কারে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে দিল্লি ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (ডিডিসিএ)-এর সভাপতি জেটলিকে আজও নিশানা করেছেন আপ নেতৃত্ব। তবে সে সবের থেকেও বিজেপি নেতৃত্বের কাছে বেশি অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন দলেরই সাংসদ এবং জাতীয় দলের প্রাক্তন ক্রিকেটার কীর্তি আজাদ। তিনি প্রকাশ্যেই বলে চলেছেন, ‘‘আম আদমি পার্টির হাতে তেমন কোনও নথিই নেই। আমার কাছে যা তথ্য রয়েছে, সেই তুলনায় ওদের কাছে তো মাত্র ১৫-২০ শতাংশ রয়েছে।’’ রবিবার বিকেল চারটেয় বিষেণ সিংহ বেদীদের নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে জেটলির ‘মুখোশ খোলা’-রও হুমকি দিয়ে রেখেছেন কীর্তি। এই পরিস্থিতিতে আজই কীর্তিকে তলব করেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। গত কালই অমিতের নির্দেশে দলের সংগঠন সচিব রামলাল তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। তার পরেও আজাদের সুর নরম হয়নি। তাই আজ বিজেপি সভাপতি নিজেই তাঁকে ডেকে পাঠান। রবিবারের সাংবাদিক বৈঠক বাতিল করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে তাঁকে। কিন্তু আজাদের বক্তব্য, নয় বছর ধরে তিনি ডিডিসিএ-র দুর্নীতি নিয়ে লড়ে যাচ্ছেন। বিজেপি নেতৃত্বও প্রকাশ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হওয়ার কথা বললেও কেন তাঁকে বাধা দেওয়া হচ্ছে— সে প্রশ্ন তুলেছেন আজাদ। জেটলি শিবিরের নেতারা মনে করছেন, কীর্তি বরাবরই লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজ ও রাজনাথ সিংহদের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। এখন আপ জেটলির বিরুদ্ধে সরব হওয়ায় পিছন থেকে আজাদকে আরও উস্কে দিচ্ছেন এই গোষ্ঠীর নেতারাই। তাই জেটলির বিরুদ্ধে মুখ খুললেও এত দিন কীর্তি আজাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। এই গোষ্ঠীর আর এক নেতা শত্রুঘ্ন সিন্হাও আজ জেটলির বিরুদ্ধে তোপ দেগে জল আরও ঘোলা করেছেন। তাঁর মন্তব্য, ‘‘কীর্তি যা অভিযোগ আনছেন, তা নিয়ে তদন্ত হোক। আর যাঁর বিরুদ্ধে প্রশ্ন উঠছে, তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতারও প্রমাণ দিতে হবে।’’ কীর্তি আজাদ যখন জেটলি শিবিরের রক্তচাপ বাড়িয়ে দিয়েছেন, তখন লাগাতার জারি রয়েছে কেজরীবালের আক্রমণও। শুরু থেকেই তাঁর অভিযোগ ছিল, কেন্দ্রের নির্দেশে তাঁকে হেনস্থা করতেই সিবিআই দিল্লি সচিবালয়ে তল্লাশি চালিয়েছে। অভিযোগের সপক্ষে আজ সিবিআইয়ের এক অফিসারের বক্তব্যকে হাতিয়ার করেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘‘গত কাল সিবিআইয়ের এক জন অফিসার আমাকে জানিয়েছেন, বিরোধী নেতাদের নিশানা করার জন্য তাঁদের বলা হয়েছে। আসলে বিহার ভোটের পরে নরেন্দ্র মোদী দুর্বল হয়ে পড়েছেন। তাই তিনি অন্যদেরও দুর্বল করতে চান।’’ পাশাপাশি, জেটলিকে নিয়ে আজও প্রশ্ন তুলেছেন আপ নেতৃত্ব। তাঁদের বক্তব্য, ডিডিসিএ জানিয়েছে, ফিরোজ শাহ কোটলা স্টেডিয়ামের সংস্কারে ১১৪ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। আপের প্রশ্ন, এর মধ্যে ৫৭ কোটি টাকার হিসেব পাওয়া গিয়েছে। বাকি ৫৭ কোটি কাকে দেওয়া হয়েছে? আপের অন্য অভিযোগ, কোটলা স্টেডিয়ামের ১০টি কর্পোরেট বক্স ‘টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি’ নামে একটি সংস্থাকে সাব লিজে দেওয়া হয়। যার ফলে সংস্থাটির পাঁচ কোটি টাকা লাভ হয়। আপ নেতা আশুতোষের দাবি, ‘‘ওই সংস্থার মালিক জেটলির পরিচিত। তিনি জেটলির ঠিক কী ধরনের আত্মীয়, তা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী স্পষ্ট করুন।’’ আপের পরের অভিযোগ, ডিডিসিএ-র সভাপতি থাকাকালীন জেটলি হকি ইন্ডিয়া-কে পাঁচ কোটি টাকা দিতে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ওএনজিসি-কে চাপ দিয়েছিলেন। জেটলির ওই পদক্ষেপে কারণ জানতে চেয়েছে কেজরীবালের দল। এই অবস্থায় বিজেপির কাছে স্বস্তির বিষয় একটাই। যে বিষেণ সিংহ বেদীকে নিয়ে কীর্তি সাংবাদিক বৈঠক করতে চান, সেই বেদীই আজ জেটলির প্রতি সুর নরম করেছেন। তাঁর মন্তব্য, ‘‘জেটলির প্রতি আমার সম্মান রয়েছে। তিনি দুর্নীতি করেননি। তাঁর বিরুদ্ধে আমার ব্যক্তিগত অভিযোগ নেই। তবে তাঁর আমলে ম্যানেজমেন্টের কর্তারা ঠিক ছিলেন না।’’ জেটলি দাবি করেছেন, ডিডিসিএ-তে দুর্নীতি হয়নি। প্রক্রিয়াগত কিছু ত্রুটি হয়েছিল। বেদীর মতে, ‘‘দুর্নীতিই হয়েছিল। আর ছোটখাটো জরিমানা দিয়ে অভিযুক্তরা পার পেয়ে যাবে, এটা ঠিক নয়।’’ সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
×