ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অবৈধ স্থাপনা ॥ ময়মনসিংহ শহররক্ষা বাঁধ হুমকির মুখে

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৫

অবৈধ স্থাপনা ॥ ময়মনসিংহ শহররক্ষা বাঁধ হুমকির মুখে

বাবুল হোসেন, ময়মনসিংহ ॥ জবরদখল হয়ে গেছে ময়মনসিংহ শহর রক্ষা বাঁধ! স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলের মদদে নানা শ্রেণী পেশার মানুষ জবর দখল করে নিয়েছে এই বাঁধ। বঁভধের ওপরে ও নিচে গড়ে তোলা হয়েছে বাসা বাড়ি, হোটেল রেস্তরাঁ, গরুর খামার, মুদি দোকান ও চুল কাটার সেলুনসহ কয়েকশ’ অবৈধ স্থাপনা। এসব প্রতিটি অবৈধ স্থাপনাতেই রয়েছে বৈধ বিদ্যুত সংযোগ! বাঁধের ওপর এভাবে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলার প্রতিযোগিতার কারণে মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে ময়মনসিংহ শহররক্ষা বাঁধ। তারপরও স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রশাসন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে কোন উদ্যোগ নেই। ফলে বিনা বাধায় শহর রক্ষা বাঁধের ওপর নানা স্থাপনা গড়ে তোলে ভাড়া দিয়ে একটি মহল হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের অর্থ। এর ভাগ যাচ্ছে নানা মহলে। অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল বাঁধের জায়গা জবরদখল করে তাতে গড়ে তুলেছে অবৈধ স্থাপনা। স্থানীয় সূত্র জানায়, ব্রহ্মপুত্রের ভাঙ্গন থেকে ময়মনসিংহ শহর রক্ষাকল্পে পানি উন্নয়ন বোর্ড শহরের পাটগুদাম ব্রহ্মপুত্র ব্রিজ থেকে এসকে হাসপাতাল সংলগ্ন পুরনো গোদারাঘাট, কালিবাড়ি থানার ঘাট, বুড়পীরের মাজার ও শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্ক হয়ে খাকডহরের ঘুণ্টি পর্যন্ত প্রায় আট কিলোমিটার দীর্ঘ শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে। বাঁধ নির্মাণের আগে মাটি ভরাট কাজের সময় এসব এলাকায় বসবাসকারীদের উচ্ছেদের কারণে সরকার ক্ষতিপূরণ প্রদান করে। ক্ষতিগ্রস্তদের বেশিরভাগ ওই সময়ে অন্যত্র সরে গিয়ে পুনর্বাসিত হয়। বাঁধ নির্মাণের পর পরই স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহলের মদদে থেকে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্তদের একটি অংশসহ শহরের নানা শ্রেণী পেশার একটি অংশ শহররক্ষা বাঁধ জবরদখলের প্রতিযোগিতায় নামে। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার মেয়াদে শহরের ছিন্নমূল নানা শ্রেণী পেশার মানুষের সঙ্গে বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরাও শহর রক্ষা বাঁধ জবরদখল করে রাতারাতি গড়ে তোলে অসংখ্য স্থাপনা। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার আমলেও বন্ধ হয়নি শহররক্ষা বাঁধ দখলের প্রতিযোগিতা। এ সময়ে বাঁধের ওপর বাসা বাড়ি হোটেল রেস্তরাঁ, গরুর খামার, মুদি দোকান, গ্যারেজ, চা স্টলসহ নানা স্থাপনা। থানারঘাট এলাকায় স্থানীয় এক ওয়ার্ড কাউন্সিলর, তাই ভাই শফিক, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্র, স্থানীয় কার্তিক দে’সহ অনেকে বাঁধের পাশে জায়গা দখল করে গড়ে তুলেছে একাধিক স্থাপনা। এসকে হাসপাতাল সংলগ্ন পুরনো গোদারাঘাট এলাকাতেও বাস্তুহারা সমিতির শহীদ ও সুরুজ মহুরীর দখলে রয়েছে বেশ কয়েকটি স্থাপনা ও বস্তি। অভিযোগ, এসব বস্তিতে চুটিয়ে চলছে মাদকের কারবার। সরেজমিন দেখা গেছে, বর্তমানে বাঁধের ওপর কোন খালি জায়গা না থাকায় বাঁধের নিচেও গড়ে তোলা হয়েছে শত শত বাসা বাড়িসহ নানা স্থাপনা। এসব প্রতিটি অবৈধ স্থাপনায় রয়েছে বিদ্যুত বিভাগের বৈধ সংযোগ! সার্ভিস তার ও বাশ খুঁটি দিয়ে এসব স্থাপনায় দেয়া হয়েছে বিদ্যুতের এই সংযোগ। প্রচার রয়েছে, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল বাঁধের ওপরে ও নিচের অংশ জবরদখল করে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলে নানা জনের কাছে ভাড়া দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের অর্থ। এর ভাগ যাচ্ছে নানা মহলে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, এসব প্রতিটি অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের সঙ্গে সরকারী দলের কিংবা স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র জড়িত বলে কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদের ব্যাপারে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নিতে পারছে না। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড, ময়মনসিংহের নির্বাহী প্রকৌশলী ইলিয়াস মাহমুদ জানান, বাঁধের ওপর ও নিচে যে কোন স্থাপনা নির্মাণ বাধের জন্য মারাত্মক হুমকি। আর তাই বাঁধের ওপর থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ব্যাপারে বিষয়টি একাধিকবার জেলা প্রশাসনের সভায় তোলা হয়েছে। নিজেদের পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা না থাকায় সময়মতো উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা যাচ্ছে না বলেও জানান এই প্রকৌশলী।
×