ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খুলনায় আন্তর্জাতিক মানের রেলস্টেশন ॥ কাজ চলছে পুরোদমে

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৫

খুলনায় আন্তর্জাতিক মানের রেলস্টেশন ॥ কাজ চলছে পুরোদমে

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ খুলনা রেলস্টেশন ও স্টেশনইয়ার্ড রিমডেলিং প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চলছে। বিরাট এলাকাজুড়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। শত বছরের বিষয় মাথায় রেখে আন্তর্জাতিক মানের খুলনা রেলস্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। এখানে তিনতলাবিশিষ্ট ভবনে থাকবে যাত্রীদের জন্য সুসজ্জিত ওয়েটিং রুম, রিক্রিয়েশন সেন্টার, গাড়ি পার্কিং সুবিধাসহ বিভিন্ন রকম সুযোগ-সুবিধা। দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুত আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত খুলনা রেলস্টেশন ও স্টেশনইয়ার্ড প্রকল্পের কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলায় খুলনাবাসী খুশি। জনা গেছে, ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৮০ সালে যশোর থেকে খুলনা পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের কাজ শুরু হয়। ১৮৮৫ সালে খুলনা থেকে প্রথম রেলগাড়ি চলাচল শুরু করে। শত বছরের অধিক পুরনো এই রেলস্টেশনের আধুনিকায়নের জন্য খুলনাবাসী অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৭ সালে ‘খুলনা রেলওয়ে স্টেশন ও ইয়ার্ড রিমডেলিং এবং বেনাপোল রেলওয়ে স্টেশনের অপারেশনাল সুবিধাদি উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও তা বাস্তবায়নের কাজ আর শুরু হয়নি। ২০১১ সালের ৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খালিশপুরে অনুষ্ঠিত জনসভায় খুলনা রেলস্টেশন আধুনিকায়নসহ এ অঞ্চলের বিভিন্ন উন্নয়নের ঘোষণা দেন। এরপর নানা ধাপ পেরিয়ে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি ‘খুলনা রেলওয়ে স্টেশন ও ইয়ার্ড রিমডেলিং এবং বেনাপোল রেলওয়ে স্টেশনের অপারেশনাল সুবিধাধির উন্নয়ন’ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন লাভ করে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয় ৭৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। এরমধ্যে খুলনা স্টেশন ও স্টেশনইয়ার্ড রিমডেলিং প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয় ৫৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। সরকারী অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। সূত্র জানায়, খুলনা মহানগরীতে অবস্থিত বর্তমান রেলস্টেশনের নিকটবর্তী স্থানে রেলস্টেশন ও স্টেশনইয়ার্ড রিমডেলিং প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের আওতায় রয়েছে তিনতলা বিল্ডিং, প্ল্যাটফর্ম, গাড়ি পার্কিংয়ের স্থান, রাস্তা, ফুটপাথ, ড্রেন, বাউন্ডারি ওয়াল, স্যানিটারি ওয়ার্কস, স্টেশনইয়ার্ড নির্মাণ, বৈদ্যুতিক কাজ প্রভৃতি। রেল মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ রেলওয়ের তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে তমা কনস্ট্রাকশন এ্যান্ড কোং লিঃ। প্রকল্পের ব্যয় ধার্য রয়েছে ৫৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করার কথা রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে যাত্রীদের সুযোগ-সুবিধাসহ ট্রেন পরিদর্শন ও ট্রেন ধৌতকরণ সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। রেলওয়ের রাজস্ব আয় বেড়ে যাবে। সরেজমিন প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে দেখা যায়, প্রকল্পের ভৌত ও অবকাঠামো নির্মাণকাজের অনেক অগ্রগতি হয়েছে। জাতীয় সংসদের রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান বলেন, জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়নের বিষয়ে সচেষ্ট রয়েছেন। খুলনাবাসীকে দেয়া প্রতিশ্রুতি তিনি একে একে পূরণ করে চলেছেন। পদ্মা সেতু, বিমানবন্দর, খুলনা-মংলা রেললাইন, খুলনা রেলস্টেশন ও স্টেশনইয়ার্ড নির্মাণ, খুলনা শিল্পকলা একাডেমি কমপ্লেক্স ভবন, জেলা স্টেডিয়ামসহ বহু উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। খুলনায় নির্মাণাধীন রেলস্টেশনটি হবে আন্তর্জাতিক মানের এবং দৃষ্টিনন্দন। এ প্রকল্পের সঙ্গে একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদও নির্মাণ করা হবে বলে তিনি জানান। বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ-জামান বলেন, খুলনাবাসী অন্যান্য দাবির সঙ্গে প্রায় ১শ’ ৩০ বছরের পুরনো খুলনা রেলস্টেশনের আধুনিকায়নের জন্য দীর্ঘদিন যাবত আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। বর্তমান সরকার খুলনা রেলস্টেশন ও স্টেশনইয়ার্ড রিমডেলিংয়ের কাজ শুরু করেছে। এটা খুলনাবাসীর জন্য আনন্দের বিষয়। তিনি এজন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, রেলস্টেশনটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে এতদাঞ্চলের রেলপথের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হবে। যাত্রীদের ও পণ্য পরিবহনে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। অর্থনীতে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে।
×