ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকার বায়ু দূষণ

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৫

ঢাকার বায়ু দূষণ

ঢাকার বাতাসে মাত্রাতিরিক্ত নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইডের প্রমাণ পেয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। অবশ্য নাসা এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছে বিশ্বব্যাপী। বাতাসের গুণাগুণ নির্দেশক শক্তিশালী রেজ্যুলেশনের স্যাটেলাইট মানচিত্র থেকে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে নাসার বিজ্ঞানীরা বায়ু দূষণ সংক্রান্ত এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেন। এতে বিশ্বের ১৯৫টি শহরসহ বিভিন্ন অঞ্চলের বাতাসে নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইডের হ্রাস বৃদ্ধি সম্পর্কিত তথ্যাদি তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৫ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যবর্তী সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার বাতাসে নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। চীন ও মধ্যপ্রাচ্যে বায়ু দূষণ পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। তবে গত এক দশকে বিশ্বের যে কোন শহরের তুলনায় ঢাকার বাতাসে ক্ষতিকর নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। নাসার এই তথ্যটি রীতিমতো উদ্বেগজনক। বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ হিসেবে নাসা চিহ্নিত করেছে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি ও শিল্পায়নকে। এ ক্ষেত্রে আমরা যৎকিঞ্চিৎ শ্লাঘা অনুভব করতে পারতাম যদি এ দুটোই রাজধানী ঢাকার ক্ষেত্রে সত্যি হতো। বাস্তবে তা নয়। ঢাকা আয়তনে বেড়েছে ঠিকই, তবে তা শিল্পায়নের জন্য আদৌ নয়। গত কয়েক বছরে বিনিয়োগ পরিস্থিতি প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। নতুন শিল্পায়নের খবরাখবর প্রায় পাওয়া যায় না বললেই চলে। তবে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির প্রমাণ দিতে গিয়ে একেবারেই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে রাজধানী ঢাকা। বড় বড় সুউচ্চ দালানকোঠা, সুপারমল, সুপার মার্কেট, বহুতল হাউজিং কমপ্লেক্স, কয়েকটি ফ্লাইওভার, হাইওয়ে, আন্ডারপাস এবং ততোধিক বস্তি। এক হিসেবে জানা যায়, ঢাকায় ৩৫ শতাংশ মানুষ বস্তিবাসী। প্রায় দুই কোটি অধিবাসী অধ্যুষিত রাজধানীতে নেই পর্যাপ্ত আবাসন, রাস্তাঘাট, হাট-বাজার, হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ, সর্বোপরি গ্যাস-পানি-বিদ্যুত, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা। তদুপরি মাত্রাতিরিক্ত গাড়ি-বাস, ট্রাক, টেম্পো, লরি, মাইক্রো, প্রাইভেটকার, লেগুনা ইত্যাদি। সেই অনুপাতে নেই খোলা জায়গা, মহানগরীর ফুসফুস বলে খ্যাত পার্ক, গাছপালা, নদী-নালা। সুতরাং ঢাকার বায়ু দূষণ যে বিশ্বে সর্বাধিক মাত্রায় হবে তাতে আর বিচিত্র কি? তবে রাজধানীর বাতাসে যে নাইট্রোজেনে ডাই-অক্সাইডের মাত্রাই বেশি, তা নয়। এর পাশাপাশি আছে কার্বন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনো-অক্সাইড, মাত্রাতিরিক্ত সীসা (লেড অক্সাইড), ধুলা, বালি, ধোঁয়া ইত্যাদি। শুধু নেই মানুষের জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য পর্যাপ্ত অক্সিজেন। কেননা, তথাকথিত উন্নয়নের প্রয়োজনে আমরা অনেক আগেই দখল করেছি রাজধানীর খাল-নালা ও ছোট-বড় পার্কগুলো। ঢাকার জনস্বাস্থ্য রীতিমতো হুমকির মুখে, বিপন্নপ্রায়। শ্বাসকষ্ট, সর্দি-হাঁচি-কাঁশি, হাঁপানি, ফুসফুসের অসুখ-বিসুখ নগরবাসীর প্রায় নিত্যসঙ্গী। এ অবস্থায় নাসার পর্যবেক্ষণটিকে অবশ্যই আমলে নিতে হবে সরকার, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদফতরসহ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে, যে বা যারা এ বিষয়ে কাজ করে থাকেন। নাসা পর্যবেক্ষণে দেখেছে, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নাইট্রোজন ডাই-অক্সাইড নির্গমনকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং জাপান বায়ু দূষণের লাগাম টেনে ধরতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করায় পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে সক্ষম হয়েছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশেরও অবশ্য কর্তব্য হবে সেসব দেশের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় করে বায়ু দূষণের মাত্রা যথাসম্ভব কমিয়ে আনার চেষ্টা করা। সরকার এ বিষয়ে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলেই প্রত্যাশা।
×