ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর বিরুদ্ধে ইসিতে অভিযোগ

নড়িয়ায় পৌর নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ এমপির সংশয়

প্রকাশিত: ০৬:২১, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৫

নড়িয়ায় পৌর নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ এমপির সংশয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পৌর নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে নির্বাচন কমিশনে বিএনপির অভিযোগ নতুন নয়। কিন্তু এবার এ তালিকায় যোগ হয়েছে খোদ সরকারী দলের একজন সাংসদ। তবে সারাদেশে নির্বাচন নিয়ে নয়। নিজ এলাকা শরীয়তপুরের নড়িয়া পৌরসভায় নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন নবম সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পীকার ও শরীয়তপুর-২ আসনের ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য এম শওকত আলী। বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের কাছে তিনি প্রতিপক্ষ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নির্বাচনী প্রচার চালানোর বিষয়ে অভিযোগ করেন। একই সঙ্গে এ পৌরসভায় সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে তিনি গণমাধ্যমের কাছে সংশয় প্রকাশ করেন। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের সঙ্গে সাক্ষাত না পেয়ে পরে সাংবাদিকদের বলেন, শরীয়তপুরের নাড়িয়া পৌরসভায় মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দেয়া হচ্ছে প্রতিপক্ষ বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষ থেকে। কিছু ব্যক্তি হরদম লঙ্ঘন করছেন নির্বাচনী আচরণবিধি। ত্রাস সৃষ্টি করায় সেখানে অস্থির অবস্থা বিরাজ করছে। আর আওয়ামী লীগের একজন বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষেই এসব কাজ হচ্ছে উল্লেখ করেন। সাংবাদিকদের বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থী ত্রাস সৃষ্টি করেছেন নড়িয়ায়। ফলে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে সংশয়ে আছেন তিনি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের একজন বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে এসব আচরণবিধি লঙ্ঘনের কারণে সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। নির্বাচন কীভাবে সুষ্ঠু হবে, তা বুঝতে পারছি না। আমি সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। সিইসিকে বিষয়টি অবহিত করতে এসেছিলাম। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ও পুলিশ সুপারকেও জানানো হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছেও বিষয়টি জানানো হবে। শওকত আলী বলেন, মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হায়দার আলী তার ছেলে পাভেল চারণায় গ্রামে গেলে ধাওয়া করেছে বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজন। বিষয়গুলো ইসিকে দেখা উচিত। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে বিএনপির শঙ্কার সঙ্গে তার শঙ্কা এক নয়। কেননা বিএনপি বেশি করে বলার চেষ্টা করছে। আর আমি শুধু একটি পৌরসভার কথা বলছি। সারাদেশের বিষয়ে আমি অবগত নই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে নড়িয়া পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে হায়দার আলীকে আলীকে। তিনি নৌকা প্রতীকে নির্বাচনের মাঠে রয়েছে। অপরদিকে দল থেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে শহীদুল ইসলাম বাবু। এ পৌরসভায় বিএনপির কোন প্রার্থী নেই। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী হায়দার আলী ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থী শহীদুল ইসলাম বাবু। জানা গেছে আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতাকর্মীই দলীয় প্রার্থীর পক্ষে থাকলেও শহীদুল ইসলাম বাবুর পক্ষে কাজ করছেন নড়িয়া উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম ইসমাইল হক। তিনি আবার পুলিশপ্রধান একেএম শহীদুল হকের ভাই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে পুলিশ প্রধানের ভাই হওয়ার কারণে তিনি এলাকায় দাপটের সঙ্গে চলাফেরা করেন। তার ওপরে কারও কথা বলার সাহস নেই। এ ছাড়া নড়িয়ায় কর্তৃত্ব নিয়ে সংসদ সদস্য শওকত আলী এবং উপজেলা চেয়ারম্যান ইসমাইলের বিরোধ রয়েছে। মাসখানেক আগে হামলার শিকার হয়েছেন সাবেক এ ডিপুটি স্পীকার। এ হামলার হন্য তিনি ইসমাইল সমর্থকদের দায়ী করেছিলেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, শুধু উপজেলার চেয়ারম্যান নয় এলাকার বিএনপির এক নেতা বাবুর পক্ষে কাজ করছেন। তবে তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে ইসির ওপরে এখনও তার আস্থা রয়েছে। তিনি নড়িয়া সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান। বলেন, সিইসিকে বিষয়টি জানাতে এসেছিলাম। কিন্তু তিনি বৈঠকে ব্যস্ত থাকায় বিয়য়টি রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানানো হবে। এ ছাড়া থানার ওসি ও এসপিকে জানানো হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনে যেসব অভিযোগ জমা পড়েছে তার বেশিরভাগই স্বতন্ত্র ও বিএনপির প্রার্থীদের করা অভিযোগ। এর বাইরে আওয়মী লীগ দলীয় কোন প্রার্থীর পক্ষ থেকে এই প্রথম কোন অভিযোগ দেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে ইসি গঠিত মনিটরিং কমিটি পৌর নির্বাচনে অনিয়ম ও আচরণবিধি লঙ্ঘনে নির্বাচন কমিশন ৩১টি অভিযোগ শনাক্ত করে মাত্র একটির তদন্তে কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে। বাকিগুলো সত্যতা ও যথার্থতা যাচাইয়ের জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তার ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। পৌর নির্বাচনের বিধি লঙ্ঘন সংক্রান্ত মনিটরিং কমিটির সভাপতি রকীবউদ্দিন ম-ল বলেন, মঙ্গলবার পর্যন্ত অন্তত ৩১টি অনিয়ম-বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পেয়েছেন তারা। এর মধ্যে ৩০টি অভিযোগ সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়ে তদন্তের মাধ্যমে সত্যতা ও যথার্থতা যাচাই করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তাও ইসি সচিবালয়কে অবহিত করতেও সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইসির উপ-সচিব রকীবউদ্দিন ম-ল জানান, ২২টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও আটটি লিখিত অভিযোগ যথাযথ যাচাই করে কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা ইসিকে অবহিত করার জন্য ৩০ জন রিটার্নিং অফিসারকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে নোয়াখালীর চৌমুহনী, চঁাঁপাইনবাগঞ্জের রহনপুর, সিলেটের গোলাপগঞ্জ, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, ঢাকার সাভার ও ধামরাই, চাঁদপুরের কচুয়া, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, ফেনীর পরশুরাম, সদর ও দাগনভূঞা, নড়াইল সদর ও কালিয়া, মুন্সীগঞ্জের মীরকাদিম, চাঁদপুরের ছেঙ্গারচর, ঝিনাইদহের মহেশপুর, চট্টগ্রামের চন্দনাইশ ও রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পৌরসভার রিটার্নিং কর্মকর্তাকে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন পাঠিয়ে সত্যতা যাচাই করে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া কুমিল্লার লাকসাম, চঁাঁদপুরের কচুয়া, পটুয়াখালীর কলাপাড়া, রাজশাহীর তাহেরপুর, নরসিংদী, ময়মনসিংহের গৌরীপুর, সাভার ও জামালপুরের ইসলামপুর পৌরসভার রিটার্নিং কর্মকর্তাদের লিখিত অভিযোগগুলো পাঠিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
×