ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দক্ষিণ কোরিয়ায় আত্মহত্যা ঠেকাতে কফিন চিকিৎসা

প্রকাশিত: ১৮:২১, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫

দক্ষিণ কোরিয়ায় আত্মহত্যা ঠেকাতে কফিন চিকিৎসা

অনলাইন ডেস্ক॥ পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার হার যে দেশগুলোতে তার একটি দক্ষিণ কোরিয়া। এই আত্মহত্যার একটি কারণ হিসেবে বলা হয় সেখানকার চাকরিজীবী বা শ্রমিকদের অতিরিক্ত চাপ। এর প্রতিকার হিসেবে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের নানাভাবে জীবনের মূল্য উপলব্ধি করানোর চেষ্টা করছে, যার মধ্যে এমনকি কফিনে শুয়ে থাকার মতো চর্চাও রয়েছে। সিউলের একটি আধুনিক অফিস ব্লকে ১৮ জন মানুষ তাদের কফিনের পাশে বসে আছেন-- তাদের নিজেদের কফিনের পাশে। এটি একটি সাজানো গণ শেষকৃত্য অনুষ্ঠান। এই কার্যক্রমে যারা অংশ নিচ্ছেন, তাদেরকে তাদের চাকরি দাতারা নিয়ে এসেছেন। কারণ তারা মনে করছেন, তাদের এই কর্মচারীদের জীবনের মূল্য বোঝা উচিত। এবং তাদের সাজানো শেষকৃত্যের মধ্য দিয়ে তারা উপলব্ধি করতে পারবেন তাদের জীবনের ভালো দিকগুলো। সাদা পোশাকে আবৃত অবস্থায় অংশগ্রহণকারীরা তাদের প্রিয়জনের কাছে শেষ চিঠি লিখছেন। ভেজা-ভেজা চোখ রূপ নিয়েছে প্রকাশ্য কান্নায়। এরপর তারা উঠে দাঁড়ান এবং খোলা কফিনে প্রবেশ করেন। কফিনের পাল্লা বন্ধ করে দেয়া হয় এবং ১০ মিনিট ঘোর অন্ধকারে কাটানোর পর কফিনের পাল্লা খুলে আবার তাদের আলোর মাঝে আনা হয়। কফিন থেকে বেরুনোর পর নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিচ্ছিলেন একজন অংশগ্রহণকারী। তিনি বলছিলেন “আমি বুঝতে পারছি যে আমি জীবনে অনেক ভুল করেছি। আমি ভবিষ্যতে যাই করি না কেন, তাতে আরো বেশি মনোযোগ দিতে চাই।” এই কার্যক্রমের প্রধান, পার্ক চুন উং বলছিলেন, তাদের কাজের প্রধান উদ্দেশ্যই হচ্ছে মানুষের মধ্যে একটি ঐক্যের মনোভাব তৈরি করা। “আমার কোম্পানি সবসময় কর্মীদের তাদের চিন্তার ধরণ পরিবর্তনের উৎসাহ দিয়েছে। কিন্তু সত্যিকারের কোন পরিবর্তন আনা সম্ভব হচ্ছিল না। আমার কাছে মনে হয়েছে একটি কফিনের ভেতর সময় কাটানো মানুষের মনে এমন একটি ধাক্কা দেবে যে, সে তখন তার আচরণ সম্পূর্ণ পরিবর্তন করতে উদ্বুদ্ধ হবে” বলছিলেন মি. উন। দক্ষিণ কোরিয়ার চাকরিজীবীদের কাজের চাপ নিয়ে আগে থেকেই অনেক অভিযোগ রয়েছে। একটি অলিখিত নিয়ম হচ্ছে, কর্মীরা সবসময় বসের আগে অফিসে ঢুকবে এবং বস বেরিয়ে যাবার পর অফিস থেকে বের হবে। সম্প্রতি সিউল শহর কর্তৃপক্ষ কর্মীদের জন্য দুপুরবেলা এক ঘণ্টা ঘুমের সময় বরাদ্দ করেছে। কিন্তু এখানেও পরিহাস হল যে, সেই সময়টা পাবার জন্য তাকে হয় এক ঘণ্টা আগে আসতে হবে নতুবা এক ঘণ্টা পরে অফিস থেকে বেরুতে হবে। তবে এধরণের ব্যবস্থাও খুব বেশি জনপ্রিয় হয়নি। অন্য একটি প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন সকালে কর্মীরা একসাথে মিলে হাসির চর্চা করে। এটিও একটি সম্পর্ক তৈরি করার অনুশীলন। কর্মীরা তাদের ডেস্কের পাশে দাড়িয়ে জোরপূর্বক কিছুক্ষণ হাসে। তারা আসলে কি ভাবছে সেটি বোঝা কঠিন, কারণ শেখাতে তাদের বসও উপস্থিত ছিল। এর বাইরে কিছু অফিসে কর্মীদের প্রতিদিন সকালে শরীরচর্চাও করানো হয়। এটি সেখানে কর্পোরেট কালচারের একটি অংশ হয়ে গেছে। এরই মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার একটি নতুন আইন প্রস্তাব করেছে, যাতে চাকরিজীবীদের পদচ্যুত করাটা আরো সহজ করা হবে। এই আইনের প্রতিবাদে হাজার-হাজার ইউনিয়ন সদস্যরা রাস্তায় বিক্ষোভও করেছে। অফিসে শরীরচর্চা হয়তো কর্মীদের সুস্থ রাখতে পারে। কিন্তু ভালো বেতন, কাজের সময় কমানো এবং চাকরির নিরাপত্তাটাই হয়তোবা তাদের কাছে বেশি কাম্য। সূত্র : বিবিসি বাংলা
×