ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পৌর নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে সন্ত্রাসী গ্রেফতার অভিযান

প্রকাশিত: ০৫:১০, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫

পৌর নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে সন্ত্রাসী গ্রেফতার অভিযান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচনী এলাকায় চিহ্নিত সন্ত্রাসী গ্রেফতারে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বিশেষ করে এলাকায় চিহ্নিত অপরাধী, চাঁদাবাজ, অস্ত্রবাজ ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে এ অভিযান চালানো হবে। ভোটকে সামনে রেখে নির্বাচনী এলাকায় অননুমোদিত যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা, লাইসেন্সধারী বৈধ অস্ত্র জমা নেয়া এবং ভোটের আগের দিন বহিরাগতরা যাতে নির্বাচনী এলাকায় অবস্থা না করে সে বিষয়েও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কমিশন জানিয়েছে, আগামী ১৯ ডিসেম্বর নির্বাচনী এলাকার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হবে। আলোচনার পরেই ভোট নির্বিঘœ করতে প্রয়োজনীয় এসব ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ থাকবে। ওই বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানদের উপস্থিত থাকার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। বৈঠকে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব, সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, পুলিশ, বিজিবি, আনসার, এনএসআই, ডিজিএফআই, ডিবি ও কোস্টগার্ডসহ সব বাহিনীর প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে বৈঠকে আলোচ্যসূচী নির্ধারণ করা হয়েছে। আলোচ্যসূচীতে রয়েছে প্রাক-নির্বাচনী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা, নির্বাচনপূর্ব শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টিতে করণীয় নির্ধারণ, সন্ত্রাসী, মস্তান ও চাঁদাবাজদের গ্রেফতার এবং তাদের দৌরাত্ম্য রোধে ব্যবস্থা, বিভিন্ন নির্বাচনী কার্যক্রম, নির্বাচনী সামগ্রীর পরিবহন, সংরক্ষণ নিরাপত্তা বিধান, নির্বাচনী আইন এবং আচরণবিধিসহ বিভিন্ন নির্দেশনা সুষ্ঠুভাবে পরিপালনের পরিবেশ তৈরি করা এবং ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তাবিষয়ক কর্ম-পরিকল্পনা বিষয়ে আলোচনা করা হবে। কমিশন জানিয়েছে পৌর নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের কোন সিদ্ধান্ত না থাকলেও প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকবে। এছাড়াও ভোটের দিন নির্বাচনী কেন্দ্রে মোবাইল ফোন ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নিষেধাজ্ঞায় বলা হয়েছে, ভোট কেন্দ্রে শুধুমাত্র প্রিসাইডিং অফিসার ছাড়া আর কেউ মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবে না। প্রিসাইডিং অফিসারও নির্বাচনী কার্যক্রমের প্রয়োজন ব্যতিরেকে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবে না। কমিশনের উপ-সচিব শামসুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এ নির্দেশনা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। অন্যদেরও জানাতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কমিশন সূত্রে জানা গেছে, কোন প্রকার সেনা মোতায়েন ছাড়াই পৌর নির্বাচন সুষ্ঠু করতে চায় ইসি। তবে এ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন না করা হলেও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৭০ হাজারের বেশি ফোর্স মোতায়নের কথা ভাবছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। জানা গেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ভোটের আগে দুই দিন ও পরে একদিন এই চারদিন অর্থাৎ ২৮ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাঠে থাকবে। ফোর্সের মধ্যে পুলিশ, র‌্যাব, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), কোস্টগার্ড, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), ব্যাটালিয়ন আনসার মোতায়েন থাকবে। তারা সার্বক্ষণিক ভোটার এলাকায় ভ্রাম্যমাণ ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। তবে ইসি জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত কোন প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও সেনা মোতায়েনের দাবি জানানো হয়নি। শুধুমাত্র ভোটে থাকা অনেক স্বতন্ত্রপ্রার্থী ও এনপিপি পৌরসভায় সেনা মোতায়েনের দাবি জানানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশনার মোঃ শাহনেওয়াজও ইতোমধ্যে এ নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, পৌর ভোটে সেনা মোতায়েনের দরকার পড়বে না। যেখানে সেখানে সেনা মোতায়েন করাও যাবে না। এ বাহিনীকে মোতায়েনের বিষয়টি ভেবে-চিন্তে করতে হবে। কেউ চাইলে তো হবে না। এছাড়াও পৌর নির্বাচনে ইতোমধ্যে ভোটের কেন্দ্রভিত্তিক নিরাপত্তার পরিকল্পনাও ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করেছে ইসি। ২৩৪ পৌরসভায় ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৩ হাজার ৫৫৮টি। এক্ষেত্রে সাধারণ কেন্দ্রে ১৯ এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ২০ জন করে ফোর্স রাখা হবে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র নির্ণয় করতে মাঠ প্রশাসন কাজ করছে। জানা গেছে, ভোট কেন্দ্রে নিরাপত্তায় থাকবে পুলিশ, আনসার-ভিডিপি ও ব্যাটালিয়ান আনসার সদস্যরা। কমিশনের উপ-সচিব সামসুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, সবকিছু পর্যালোচনা করে বৈঠকের পর কেন্দ্রভিত্তিক নিরাপত্তা রক্ষী ও মোবাইল স্ট্রাইকিং ফোর্স কোন বাহিনীর ক’জন নিয়োজিত থাকবে, তা ইসি সিদ্ধান্ত নেবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধমে সংশ্লিষ্টদের কাছে চাহিদা জানিয়ে দেয়া হবে। তবে ইসির কর্মকর্তারা জানান, কেন্দ্রভিত্তিক সাড়ে ৪ হাজার সদস্য নিয়োজিত থাকবে। এর বাইরে টহলে ও রিজার্ভে বিভিন্ন বাহিনীর অন্তত ৫Ñ৮ হাজার সদস্য রাখার প্রস্তাব রয়েছে। এদিকে নোয়াখালীর চাটখিল পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থীকে জোর করে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের অভিযোগ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির আইন শাখার উপসচিব মহসিনুল হকের নেতৃত্বে গঠিত কমিটিকে অভিযোগ তদন্ত করে ২০ তারিখে ইসির নিকট প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এর আগে গত ১৩ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে নোয়াখালীর চাঁটখিল পৌরসভায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে মেয়র পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ দেয়া হয়েছে জোর করে তাদের প্রার্থীর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে। বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব মাহবুবউদ্দিন খোকন চাটখিল পৌরসভায় দলীয় প্রার্থীর অভিযোগ প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর জমা দেন। এছাড়ও আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দীন খান আলমগীরসহ ১০ সংসদ সদস্যের (এমপি) বিরুদ্ধে গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন। পত্রিকায় প্রকাশিত বিধি লঙ্ঘনের খবরের ভিত্তিতে মনিটরিং কমিটির দেয়া প্রতিবেদন অনুসারে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর আগে এ কমিটির প্রতিবেদন অনুসারে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের বিষয়েও একই নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো। এছাড়ও শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে সাংসদ নাহিম রাজ্জাক, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে আবু জাহির, নাটোরের গুরুদাসপুরে অধ্যাপক আবদুল কুদ্দুস, সিরাজগঞ্জের সাংসদ হাসিবুর রহমান স্বপন, নড়াইলের দুটো পৌরসভায় সাংসদ কবিরুল হক, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি ও বাজিতপুরে সাংসদ সোহরাবউদ্দিন আহমেদ ও আফজাল হোসেন, ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে মোঃ আবদুর রহমান এবং রাজশাহীর পবায় আব্বাস আলীর বিধি লঙ্ঘন বিষয়ে কি ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা জানাতে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। ইসি কর্মকর্তারা বলছেন প্রতিনিয়ত যেসব অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছে বা ইসিতে লিখিত আবেদন আসছে সেগুলোর বিবরণীসহ এবং ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ ইসির কাছে উপস্থাপন করা হচ্ছে। অনুমোদন সাপেক্ষে উল্লেখযোগ্য কিছু অভিযোগ রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হচ্ছে। গত কয়েকদিনে দেড় ডজন অভিযোগ বিভিন্ন মাধ্যমে পেয়েছে বলে জানিয়েছে ইসি সচিবালয়ের মনিটরিং কমিটি। এর মধ্যে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে পৌর নির্বাচনী এলাকায় বেশি অভিযোগ করেছেন বিএনপি ও স্বতন্ত্রপ্রার্থীরা। এছাড়া লিখিতভাবে বগুড়ার কুতুবখালীর বিএনপির প্রার্থী হুমায়ুন কবির, জামালপুরের ইসলামপুর পৌরসভার স্বতন্ত্রপ্রার্থী সাজেদ আলম, বালাপাড়া পৌরসভার স্বতন্ত্র হাজী হুমায়ুন করিব, নরসিংদীর পৌরসভার স্বতন্ত্র এসএম কাইয়ুম ও নরসিংদীর তাহেরপুর পৌরসভার স্বতন্ত্রপ্রার্থী আসাদুর রহমান, বগুড়ার নন্দীগ্রামের বিএনপির মেয়র প্রার্থী সুশান্ত কুমার শান্ত এবং বগুড়া পৌরসভার আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল করিম মন্টু প্রতিপক্ষ প্রার্থীর বিরুদ্ধে ইসির কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
×