ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতেই দিনাজপুরে বারবার জঙ্গী হামলা

প্রকাশিত: ০৬:৫৪, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতেই  দিনাজপুরে বারবার জঙ্গী হামলা

সাজেদুর রহমান শিলু, দিনাজপুর ॥ দিনাজপুরে সম্প্রতি একের পর এক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনার পর সচেতন মহলে বিভিন্ন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। গত দেড় মাসে দিনাজপুরে পাঁচটি হামলা, বোমা বিস্ফোরণ ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। অধিক সংখ্যালঘু অধ্যুষিত দিনাজপুর জেলায় তাদের প্রতি সব নাগরিক সহানুভূতিশীল। শত শত বছর ধরে এ জেলায় মুসলিম-হিন্দু-খ্রীস্টান সহ-অবস্থান করে আসছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের ইসকনদের ওপর হামলা মানুষের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ ওরা নিরীহ এবং ঝামেলামুক্ত জীবনযাপনে অভ্যস্ত। কিন্তু হঠাৎ করে খ্রীস্টান, হিন্দু ও নিরীহ ইসকনরা আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হলেন কেন? সচেতন মহল মনে করছে, দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য উপাসনালয়গুলোকে হামলার লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বেছে নিয়েছে জঙ্গীরা। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগিয়ে দেশ অস্থিতিশীল করাই তাদের টার্গেট। এজন্য একের পর এক হামলা চালানো হচ্ছে। জানা যায়, ইসকন হচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ‘হরে কৃষ্ণ’ আন্দোলন নামের একটি বৈষ্ণব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। ইসকনদের মধ্যে রয়েছে ঐক্য এবং আধ্যাত্মিকতা। তাদের মধ্যে ধর্মবোধ রয়েছে ব্যাপক। এরা মূলত ‘কৃষ্ণ ভাবনা’ প্রচার করে থাকে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে শুধু কৃষ্ণকে নিয়েই আরাধনাকারী এই ইসকনরা পুরোপুরিভাবে অসাম্প্রদায়িক। কিন্তু তারপরও নিরীহ এবং ধর্ম-কর্ম নিয়ে ব্যতিব্যস্ত ইসকনরা হঠাৎ করে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হলো কেন? এভাবে একের পর এক হামলার ঘটনার পর সচেতন মহল বলছে, দিনাজপুরে সংখ্যালঘু ইস্যু প্রায় সময়ই ছিল। কিন্তু ধর্মীয় উপাসনালয় ও ব্যক্তির ওপর হামলা সন্ত্রাসের এক নতুন রূপ। এর আগে বিচ্ছিন্ন কিছু অঘটন ঘটলেও দিনাজপুরে এ ধরনের ধারাবাহিক ঘটনা ঘটেনি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও এর আগে এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়েনি। এ ব্যাপারে দিনাজপুর জেলা জজকোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর, আওয়ামী লীগ দিনাজপুর জেলা শাখার আইন বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সভাপতি এ্যাডভোকেট হামিদুল ইসলাম বলেন, জঙ্গীবাদ একটি আন্তর্জাতিক সঙ্কট। তবে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের কোন কর্মকা- নেই। এ দেশী সন্ত্রাসীরা অনেক সূক্ষ্ম পরিকল্পনা করে এসব সন্ত্রাসী কর্মকা- ঘটাচ্ছে। আমাদের পুলিশ বাহিনী এর আগে এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করেনি। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাদের আরও আধুনিক করে গড়ে তোলা উচিত। হিন্দু-বৌদ্ধ, খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ দিনাজপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক পরিমল চক্রবর্তী তপন বলেন, দিনাজপুরে হামলার ঘটনাগুলো কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এসব হামলা অত্যন্ত পরিকল্পিত এবং এর পেছনে একটি সংঘবদ্ধ শক্তি ক্রিয়াশীল। এই শক্তির উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশকে সংখ্যালঘু শূন্য করে ফেলা। একটি ভয়ের সংস্কৃতি সৃষ্টি করা এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নিরাপত্তাহীনতার মুখে ফেলে দেয়া। সরকার থেকে বলা হচ্ছে, আইএস বাংলাদেশে নেই। আমরাও মনে করি, আইএস হয়তবা নেই। কিন্তু আইএস ভাবাপন্ন কিংবা তাদের মতাদর্শ দ্বারা প্রভাবিত জঙ্গীগোষ্ঠী তো আছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনাগুলো মূলত দিনাজপুরের সংখ্যালঘু এলাকাকেন্দ্রিক এবং এর সমস্তটাই হচ্ছে মূলত দিনাজপুরের সীমান্ত অঞ্চলে।
×