ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্বদেশপ্রেমের গান ও কবিতায় দীপ্ত বিজয়ের অনুষ্ঠান

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫

স্বদেশপ্রেমের গান ও কবিতায় দীপ্ত  বিজয়ের অনুষ্ঠান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শহরজুড়ে ভেসে বেড়াল স্বদেশের গান। কবিতার দোলায়িত ছন্দে উচ্চারিত হলো দেশপ্রেমের কথা। নৃত্যশিল্পীর নাচের মুদ্রায় উপস্থাপিত হলো যুদ্ধদিনের স্মৃতিকাতরতা। বক্তার আলাপে বর্ণিত হলো একাত্তরের চেতনাস্নাত মর্মবাণী। মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিচারণে উঠে এলো বাঙালীর বীরত্বগাথা রণাঙ্গনের শাণিত সময়ের কথা। এভাবেই মহান বিজয় দিবসের আগের দিন মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকা যেন পরিণত হলো বিজয় উৎসবের শহরে। পৌষের প্রথম দিনে নগরের নানা প্রান্তজুড়ে সুর ও ছন্দে দীপ্ত হলো বিজয় দিবসকেন্দ্রিক অনুষ্ঠানমালা। মানবাধিকার দিবস থেকে বিজয় দিবস শীর্ষক বিজয় উৎসবের আয়োজন করেছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। মঙ্গলবার ছিল সপ্তাহব্যাপী এ অনুষ্ঠানমালার ষষ্ঠ দিন। মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মোবারক হোসেনের স্মৃতিচারণের মাধ্যমে সূচনা হয় এ দিনের কর্মসূচী। এরপর অনুষ্ঠানস্থলে বয়ে যায় কবিতার দোলায়িত ছন্দের শিল্পিত শব্দধ্বনি। সম্মেলক কণ্ঠে আবৃত্তি পরিবেশন করে স্বরশ্রুতি। জুবায়ের মিলনের গ্রন্থনা ও মীর মাশরুর জামান নির্দেশিত প্রযোজনাটির শিরোনাম ছিল কনসেনট্রেশন ক্যাম্প। আবৃত্তির পর ছিল সঙ্গীত পরিবেশনা। মঞ্চে আসে মিরপুরের বিএন কলেজের শিক্ষার্থীরা। একাত্তরের শহীদদের স্মরণ করে সুরের আশ্রয়ে সম্মিলিত কণ্ঠে পরিবেশিত হয়Ñ এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা আমরা তোমাদের ভুলবো না...। দলটি পরিবেশিত অন্য দু’টি গানের শিরোনাম ছিল ‘মুক্তির মন্দির সোপানতলে’ ও ‘যে মাটির বুকে ঘুমিয়ে আছে লক্ষ মুক্তিসেনা।’ গানের সুর থামতেই শুরু হয় নৃত্য পরিবেশনা। উপস্থাপন করে মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউট। এরপর গণসঙ্গীত পরিবেশন করে ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী। সব শেষে নেত্রকোনার হেলিম বয়াতী ও তাঁর দলের জারি গানের পরিবেশনা। আজ বুধবার বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান শুরু হবে সকাল দশটায়। শিশু-কিশোর আনন্দ অনুষ্ঠানে সাং¯ৃ‹তিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করবে সোসাইটি ফর দ্য ওয়েলফে অব অটিস্টিক চিল্ড্রেন, কল্পরেখা, সালেহা স্কুল এ্যান্ড কলেজ, বাংলাবাজার সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মৈত্রী শিশুদল, ইউসেপ স্কুল ও স্পন্দন। সন্ধ্যা ছয়টায় প্রসাদকৃষ্ণ রচিত ও তাপস সরকার নির্দেশিত যাত্রাপালা ‘আনারকলি’ পরিবেশন করবে যাত্রাদল লোকনাট্য গোষ্ঠী । সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে চলছে আটদিনব্যাপী বিজয় উৎসব। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পথে জঙ্গীবাদকে দাঁড়াও রুখে সেøাগানে আটদিনব্যাপী এ উৎসবের তৃতীয় দিন ছিল মঙ্গলবার। এদিন উৎসবের মূল ভেন্যু কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ নগরীর সাতটি মঞ্চে চলে অনুষ্ঠান। শহীদ মিনার ছাড়াও মঙ্গলবার রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ মঞ্চ, ধানম-ির রবীন্দ্র সরোবরের ভাষাসংগ্রামী তোফাজ্জল হোসেন মঞ্চ, মিরপুরের নাট্যশিল্পী রফিকুল ইসলাম মঞ্চ, মতিঝিল টিএনটি কলোনি মাঠের হেমচন্দ্র ভট্টাচার্য্য মঞ্চ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চঞ্চরের চাষী নজরুল ইসলাম অনুষ্ঠিত হয়েছে জোটের বিজয় উৎসব। আজ ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে সকাল সাড়ে ৯টায় নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে বের করা হবে শোভাযাত্রা। এটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু করে শাহবাগ হয়ে পুনরায় শহীদ মিনারে এসে শেষ হবে। শোভাযাত্রার উদ্বোধন করবেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। এর আগে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে ‘রক্তস্নাত বিজয়’ ॥ বিজয় দিবসকেন্দ্রিক আয়োজনটির শিরোনাম ‘রক্তস্নাত বিজয়।’ ঐতিহাসিক সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের গ্লাস টাওয়ারসংলগ্ন বেদিতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ পুলিশের উদ্যোগে মঙ্গলবার বিকেল ৪টা ২৬ মিনিটে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে চার দিনের আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও বিজয় উৎসব। চার দিনের এই আয়োজনটি সাজানো হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের আলোকচিত্র প্রদর্শনী ছাড়াও স্মারক বক্তৃতা, আবৃত্তি, স্মৃতিচারণ, কনসার্ট, আতশবাজি দিয়ে। উৎসব উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাইদ খোকন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে এইচটি ইমাম বলেন, ঊনবিংশ এবং বিংশ শতাব্দীতে যত জনযুদ্ধ হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে সফল ও সার্থক হচ্ছে বাংলাদেশের ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ। কিন্তু সব জনযুদ্ধেই কিছু কুলাঙ্গার থাকে। তারাই গণহত্যার মূল হোতা এবং এই গণশত্রুরাই ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করেছিল। এরা দীর্ঘকাল বাংলাদেশের শাসনেও ছিল। এরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নষ্ট করতে। প্রদর্শনীটি দুইটি অংশে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রথম অংশে স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে ১১টি ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে ১১টি সেক্টর সাজানো হয়েছে। অপর অংশে ৭১টি ফ্রেমে একাত্তরকে তোলা ধরা হয়েছে। অনুষ্ঠানমালার দ্বিতীয় দিন আজ ১৬ ডিসেম্বর থাকছে ‘বিজয়ের গল্প শুনি’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা ও আবৃত্তি অনুষ্ঠান। কাল ১৭ ডিসেম্বর থাকবে ‘দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা’ শীর্ষক আলোচনাসভা ও কনসার্ট। শেষ দিন ১৮ ডিসেম্বর থাকছে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর পরিবেশনায় ‘বিজয় বিচিত্রা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান’। ওইদিন সন্ধ্যায় বিজয়ের আতশবাজির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানমালার সমাপ্তি হবে। বিজয় দিবস উপলক্ষে বৈচিত্র্যময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। আলোচনা, শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, এ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনী, নাটক, আবৃত্তি, সঙ্গীত, নৃত্যানুষ্ঠান ও চিত্র প্রদর্শনীতে সাজানো চারদিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার তৃতীয় দিন ছিল মঙ্গলবার। এদিন সন্ধ্যায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় থিয়েটার ফোকস পরিবেশিত নাটক যমুনা। সেলিনা শেলীর রচনায় প্রযোজনাটির নির্দেশনা দিয়েছেন মোহাম্মদ আলী হায়দার। বাংলা একাডেমির বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান ॥ মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বহুমাত্রিক কর্মসূচী নিয়েছে বাংলা একাডেমি। আজ বুধবার সকালে একাডেমির পক্ষ থেকে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে শুরু হবে আনুষ্ঠানিকতা। বিকেল চারটায় একাডেমির নজরুল মঞ্চে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলা একাডেমি শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন কবি পিয়াস মজিদ।
×