ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মুহাম্মদ ইব্রাহীম সুজন

স্কটল্যান্ডে রথ দেখা, কলা বেচা

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৬ নভেম্বর ২০১৫

স্কটল্যান্ডে রথ দেখা, কলা বেচা

দুই মাস আগের কথা। ঢুঁ মারছিলাম ফেসবুকে। চোখে পড়ে এক লিঙ্ক। ব্রিটিশ কাউন্সিলের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজের শেয়ার করা। বিষয়- তরুণদের কাছে আবেদন আহ্বান। বয়সসীমা আঠারো থেকে পঁচিশ যাদের এবং আবশ্যিক সাংবাদিকতার ওপর আগ্রহী যারা, তাদেরকে বিশেষ করে আবেদন করতে বলা হয়। ‘সাংবাদিকতা কেন তোমার কাছে প্রয়োজনীয় মনে হলো’- শিরোনামে অনুর্ধ ৫০০ শব্দসম্বলিত অনুনিবন্ধ রচনা প্রতিযোগিতা। লিখতে হবে ইংরেজিতে। প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণরা সেপ্টেম্বরে স্কটিশ পার্লামেন্টে অনুষ্ঠিতব্য ‘ফিউচার নিউজ কনফারেন্সে’ যাওয়ার টিকেট পাবেন। ব্যস! ঝটপট বসে গেলাম লিখতে। উপর্যুক্ত অনুনিবন্ধ লিখলাম। যোগার করলাম প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। মেইল করলাম নির্ধারতি ই-মেইল ঠিকানায়। এবার আশায় দিনগণনার পালা। ভাগ্যের শিকে কি ছিড়বে? এ যাত্রায় অবশ্য ভাগ্যের শিকে ছিড়েছিলো। কয়েকদিন পরেই ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে ফোন। মুঠোফোনের অপরপ্রান্ত থেকে নারীকণ্ঠে সুসংবাদের নির্ঘোষ- ‘ফিউচার নিউজ কনফারেন্সে’ অংশগ্রহণের জন্য আপনি প্রাথমিকভাবে মনোনীত। সামনে সাক্ষাতকার নামক ‘বাধার বিন্ধ্যাচল’। বিন্ধ্যাচলই বা হবে না কেন! সাক্ষাতকার যে ইংরেজিতে। কী মুশকিল! দু’দিন আদাজল খেয়ে লাগলাম। মিশন স্পোকেন ইংলিশ। এ যাত্রায় বাধার বিন্ধ্যাচল জয় করলাম। মানে, সাক্ষাতকারে পরীক্ষায় আমি উত্তীর্ণ। আমাকে জানিয়ে দেয়া হলো, ফিউচার নিউজ কনফারেন্সে বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণেচ্ছু মনোনীতদের মধ্যে আমি একজন। বাাংলাদেশ থেকে আরও তিনজন এই কনফারেন্সে যোগ দেওয়ার টিকেট অর্জন করে। দৈনিক প্রথম আলোর প্রতিবেদক আবদুর রশিদ অর্ণব, সহ-সম্পাদক আরিফা আলম এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও নিউ এইজের ফিচার লেখক মোস্তফা মানোয়ার। শুরু হয় চারজনের ‘ফিউচার নিউজ-২০১৫’ মিশন। ১ সেপ্টেম্বর। রাত্রি শেষ প্রহর। বিমানে উঠি আমরা। বিমান পাড়ি দেয় স্কটল্যান্ডের উদ্দেশে। মধ্য পথে কাতারের দোহাতে তিন ঘণ্টার যাত্রাবিরতি। নির্ধারিত দিনের একদিন আগেই অর্থাৎ ৩ সেপ্টম্বর দুপুরে আমরা কাতার এয়ার ওয়েইজের একটি ফ্লাইটে স্কটল্যা-ের এডিনবারাতে পৌঁছাই। স্কটল্যান্ডে তখন গ্রীষ্মকাল। তুলনামূলকভাবে কম শীত। স্কটিশদের কাছে কম হলেও আমাদের কাছে নয়! কম শীতেও যে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস! হাড়ে লাগে! শীতে জুবুথবু। শরীরের শীতকাপড় চাপাতে হলো চার বাঙালকেই। বিমানবন্দর লাউঞ্জে ব্রিটিশ কাউন্সিলের দুই নারী কর্মকর্তা দ-ায়মান। উদ্দেশ্য আমাদের রিসিভ করা। তাঁদের সঙ্গে যাই পলক হলে। পলক হল মানে ইউনিভার্সিটি অব এডিনবারার আবাসিক এলাকা। ওখানেই আমাদের থাকার ব্যবস্থা। আসার পথে চোখ আটকে গেলো রাস্তার দু’পাশে সাজানো-গোছানো পুরনো ধাঁচের বিল্ডিংগুলোয়। শত বছর আগে তৈরী নয়নাভিরাম ভবনগুলি এখনও যেন নতুনের মতো। একদিকে পাহাড়, অন্যদিকে শহর। পাহাড়ের বুক জুড়ে সবুজের সমারোহ। সে কি মনোরম দৃশ্য! ঠিক যেন আমাদের রাঙ্গামাটি। রাস্তায় গাড়ি-ঘোড়ার চাপ নেই। তাই যানজটও নেই। অটোসিগনালের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে ট্রাফিক সিস্টেম। কারও মধ্যে কোন তাড়াহুড়ো নেই। নিয়মতান্ত্রিকভাবে গাড়িগুলি ছুটছিল স্ব-স্ব গন্তব্যে। মাঝে মাঝেই চোখে পড়ছিল রেস্তোরাঁ, বার, নিত্য-প্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাহারি দোকান। সাজানো-গোছানো শহর এডিনবারা। বেশ সুন্দর। পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন। ওইদিন রুমে পৌঁছে আমরা বসে থাকিনি। ছুটে গেছি পাশেই থাকা আর্থার সিটতে। আর্থর সিট হলো বিশাল এক পাহাড়। দেখতে অনেকটা সিংহের মতো। হাঁটা পথে পলক হল থেকে বিশ মিনিটের দুরত্ব। ততক্ষণে পশ্চিম আকাশে সূর্য ঢলে পড়তে শুরু করেছে। একটু একটু করে উপরে উঠছি আর শীতের মাত্রা একটু একটু করে বাড়ছে। চূড়োয় উঠে নিচের দিকে তাকালাম। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। বিস্ময়ে আমাদের মুখ দিয়ে শুধু একটি শব্দ বেরুলো। ‘ওয়াও’। এখান থেকে গোটা শহরটাকে দেখা যায়। বাড়ির ছাদে উঠলে যেমন উঠোন-আঙিনা দেখা য়ায়, ঠিক তেমনি। আমরা চারজন মুগ্ধ হয়ে দেখতে থাকলাম এডিনবারার সৌন্দর্য। হটাৎ করে সবাই ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। এক নাগাড়ে আধাঘণ্টা ধরে বিভিন্ন এঙ্গেলে ছবি তুললাম আমরা। সাড়ে সাতটার আগে নির্ধারিত রেস্তোরাঁয় গিয়ে রাতের খাবার খেলাম। সেলফ সার্ভিস। ফ্রাইড রাইস, চিকেন, পাসতা, ডিম, সবজি বিভিন্ন ফলফলাদি, জুস-দুধসহ বিভিন্ন ধরনের খাবারের আইটেমের সমাহার। পছন্দমতো খাবার নিয়ে উদরপূর্তি করলাম। রুমে ঢোকার সময় দেখলাম দলে দলে বিভিন্ন দেশ থেকে তরুণেরা আসছে। কিউবা, ব্রাজিল, ডমেনিকান রিপাবলিক, চীন, ভারত, পাকিস্তান, রাশিয়ার ডেলিগেটসদের সঙ্গে পরিচিত হলাম প্রথম দিনই। অনেকের সঙ্গে ভাল ভাবও হয়ে গেল। এই কনফারেন্সে বিশ্বের পঁচিশ দেশের মোট ১০০ জন অংশ নেয়। প্রত্যকেই ব্রিটিশ কাউন্সিলের সিলেকশন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নির্বাচিত হন। বিশ্বমানের সাংবাদিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে আগ্রহী তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত, প্রশিক্ষিত করার জন্য ফিউচার নিউজ কনফারেন্সের এই আয়োজন। বিশ্বের নামকরা মিডিয়া হাউসের নেতৃত্ব পর্যায়ের ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক, সাংবাদিকতার একাডেমিক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে তরুণ প্রজন্মের যোগাযোগ এবং জ্ঞান-চিন্তা-ধারণা ও মত-বিনিময়ের সুযোগ করে দেয় এই কনফারেন্স। কমনওয়েলথ গেমসের সাংস্কৃতিক পর্বের অংশ হিসেবে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত গ্লাসগো কনফারেন্সের সফলতার পরই প্রতিষ্ঠিত হয় ফিউচার নিউজ। রয়টার্স, দি হেরাল্ড এ্যান্ড টাইমস গ্রুপ, টিনোপলিস ইন্টারএকটিভ, ব্রিটিশ কাউন্সিল, এসটিভি এবং অন্যান্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের যৌথ ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত ফিউচার নিউজ-২০১৫ কনফারেন্সের বিষয় ছিল বিজনেস অব নিউজ। স্কটিশ সরকার এবং ইউকে ইউনিভার্সিটি স্কুল অব জার্নালিজমের একটি সংস্থা কনফারেন্সের সার্বিক অর্থনৈতিক বিষয়ে সহযোগিতা করে। ওই রাতেই আমরা কয়েকজন বেরিয়ে পড়লাম। রাতের এডিনবারা দিনের এডিনবারা থেকে আরও সুন্দর। আরও জৌলুস তার। রেস্তোরাঁগুলোতে ভিড় দেখে মনে হচ্ছিল এখানকার বাসিন্দারা বোধহয় বাসায় রান্না করেন না, সবাই মিলে রেস্তোরাঁতে খেতেই পছন্দ করেন। পরে অবশ্য জেনেছি যে, আমার ধারণা ভুল ছিল। রাস্তার দুইধারে থাকা বিল্ডিংগুলোর গায়ে বিভিন্ন রংয়ের বাতি জ্বলছিল যা দেয়ালে প্রতিফলিত হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছিল। ইট, টাইলস, না পাথর বোঝা মুশকিল, তবে দেখলে মনে হবে পাথর। একবার ডানে একবার বাঁয়ে, কখনো কখনো সামনে, এভাবে তাকিয়ে থেকেই আমি ঘুরছিলাম। বেশ কয়েক ঘণ্টা ঘোরাঘুরি শেষে রাতে ফিরে আসলাম। পরদিন সকালে আমরা গেলাম স্কটিশ পার্লামেন্টে। ওখানকার স্থাপত্যের অন্যতম সুন্দর নিদর্শন এটি। ওটাই ছিলো আমাদের কনফারেন্সের ভ্যেনু। নিরাপত্তা চেক, রেজিস্ট্রেশন সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে শুরু হলো বহুল কাক্সিক্ষত কনফারেন্স। শুরুতেই স্কটল্যান্ডের লিডিং মিডিয়া কোম্পানি দি হেরাল্ড এ্যান্ড টাইমস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, স্কটিশ ব্রিটিশ কাউন্সিলের ট্রাস্টি এবং কনফারেন্সের পরিচালক সাংবাদিক টম থমসন স্বাগত বক্তব্য দিলেন। তাঁর বক্তব্যের ধারাবাহিকতা দিয়ে কনফারেন্স পরিচালনা করতে আসলেন এসটিভির উপস্থাপিকা লরা গডউইন। এর পরপরই মঞ্চে আসলেন রয়টার্সের ম্যানেজিং এডিটর পল ইনগ্রাসিয়া। তিনি ‘কি সংবাদ, আর কি সংবাদ নয়’ শীর্ষক কী-নোট উপস্থাপন করেন। মাঠ পর্যায়ের উপাদান ও উদাহরণ দিয়ে সুচারুরূপে বিষয়বস্তুগুলো প্রাঞ্জল ভাষায় তুলে ধরেন তিনি। পরে সম্প্রচার সাংবাদিকতা বিষয়ে আলোচনা করেন সাংবাদিক ডি জে ম্যাকডোনাল্ড। কিভাবে এসটিভি তিনটি পৃথক শহরে একই সময়ে অভিন্ন সংবাদ উপকরণ দিয়ে সংবাদ প্রচার করে, তা ফুটে ওঠে তাঁর বক্তব্যে। এরপর লাঞ্চ বিরতি। বিরতি শেষে গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞ এবং এন্ডারস এনালাইসিসের প্রতিষ্ঠাতা এলিস এন্ডারস আসেন ‘মিডিয়া ল্যান্ডস্কেপ এ্যান্ড ইকোনমিক্স’ বিষয় নিয়ে। তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠানের গবেষণা-পত্রাদি থেকে তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন। এরপর সম্পাদনার নানা ব্যবহারিক দিক নিয়ে মঞ্চে আসেন অধ্যাপক স্টিফেন জিউকস। এদিন সাংবাদিকতা সংক্রান্ত পরপর ছয়টি কর্মশালার নেতৃত্ব দেন আলস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলনে রউনট্রি, বর্ননেমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যান্ডি বিচশেল, সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইকেল বরমলে, স্টার্থক্লাইড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যালেয়ান ডানকান এবং গ্লাসগো ক্যালেডোনিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের বেন ম্যাককোনভিলি। এরপর শুরু হয় পার্লামেন্ট ভবন ভ্রমণ। অংশগ্রহণকারী তরুণ-তরুণীদের অনন্য নির্মাণশৈলির দৃষ্টিনন্দন স্কটিশ পার্লামেন্ট ভবন ঘুরিয়ে দেখানো হয়। এরপরের দু’দিনেও এই ধারা অব্যাহত থাকে। তরুণ-তরুণীদের অনুপ্রাণিত করতে উপস্থাপনা ও বক্তব্য দিতে আসেন জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের স্ট্রাটেজিক পার্টনারশিপ ম্যানেজার উইল গুয়াট, দি হেরাল্ডের এডিটর ম্যাগনাস এললিওয়েলিন, ডিসি থমসনের ডোনাল্ড মার্টিন, বাজফিডের ডেপুটি এডিটর জেমস ওয়াটারসন, বিবিসি স্কটল্যা-ের সহকারী স্পোর্টস এডিটর জিঅফ ওয়েবস্টার, সিএনএনের সহ-সভাপতি গ্রেইগ বেইচম্যান, বিবিসি স্কটল্যান্ডের বিজনেস এটিটর ডগলাস ফ্রেসার এবং আলজাজিরার সুয়ে তর্টন প্রমুখ। শেষের দিন আমাদের দেখানো হয় কিভাবে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বদলে যাচ্ছে সাংবাদিকতা। এতে আমাদের কে রিপোর্টার পরিচালিত ড্রোন, হেক্সাকোপটার ইত্যাদির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় এবং থ্রিডি ভিডিওগ্রাফির মাধ্যমে এদের কাজ করার প্রক্রিয়ার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। শেষদিনের সব থেকে আকর্ষণীয় বিষয় ছিল ভার্চুয়াল রিয়েলিটি। সবাইকে একটি করে গুগল কার্ডবোর্ড হ্যান্ডসেট দেয়া হয়, যার মাধ্যমে থ্রিডি ভিউতে মুঠোফোনের পর্দা দেখা যায়। প্রতিটি সেশনের পরপরই থাকতো প্রশ্ন-উত্তর পর্ব। বাংলাদেশের ডেলিগেটসরা উপস্থিত অতিথিদের প্রশ্ন করে প্রশংসা কুড়ান। সমাপনী বক্তব্যে ফিউচার নিউজের পরিচালক কারেন কানিংহাম বলেন, ‘বিশ্বের যেসব মেধাবী তরুণেরা গণমাধ্যম সম্পর্কে আগ্রহী এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মনন নিয়ে কাজ করেন, নিজেকে এই পেশায় উচ্চস্থানে দেখতে চান, তাদের অনুপ্রাণিত করতেই ফিউচার নিউজ। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তরুণ এই সাংবাদিকদের স্কটল্যান্ডে আমন্ত্রণ জানিয়ে আনতে পেরে, আমি আশা করছি, আমরা নতুন করে স্বাধীন ও বৈচিত্র্যময় গণমাধ্যম এবং গণতান্ত্রিক সমাজের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে সক্ষম হবো।’ ফিউচার নিউজ কনফারেন্সের পরিচালক টম থমসন বলেন, ‘ব্রিটেনের বিভিন্ন গণমাধ্যমের এই চমৎকার অংশগ্রহণমূলক অংশীদারিত্বই আমাদের এই প্রোগ্রামটির গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানিত অতিথিদের একত্রিত করতে সহায়তা করেছে।’ সবশেষে ধন্যবাদ জানান স্কটিশ ব্রিটিশ কাউন্সিলের পরিচালক ড. এলয়েড এন্ডারসন। শেষের দিনে কনফারেন্সের আনুষ্ঠানিকতা দুপুরের আগেই শেষ হয়ে যায়। আমরা শহরের বিখ্যাত স্থানগুলো ঘুরে দেখতে সময় করে বের হয়ে যাই। তখন ভর দুপুর, মাথার উপরে সূর্যের তীর্যক রশ্মি। আমরা পার্লামেন্ট বিল্ডিংয়ের পাশ দিয়ে হলিরোড থেকে এডেনবারা ক্যাসেলে দিকে হাঁটতে শুরু করলাম। সম্পূর্ণ নীল আকাশ। মাঝে মাঝে দুয়েক টুকরা সাদা মেঘ ভেলা। এরই মাঝে কানে ভেসে আসতে লাগলো ব্যাগ পাইপারের সুমধুর সুর। একটু সামনে যেতেই দেখলাম স্কটল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী হাইল্যান্ড পোশাক পরে ব্যাগ পাইপার বাজিয়ে রেস্তোরাঁর দিকে মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করছেন একজন। কিন্তু কি সুন্দর অভিনব ব্যবস্থা। কারও কোন সমস্যা না করে এমন করে মানুষকে টানা যায়, এটি আগে কখনো আমি দেখিনি। ব্যাগ পাইপারের সুর যেন হলিউডের সিনেমার মতো রোমান্টিক করে তুলেছে পরিবেশকে। আমি ছবি তোলা বাদ দিয়ে ভিডিও করা শুরু করি। একটু দূরেই দেখলাম এক ভদ্রলোক স্পিকার দিয়ে গিটার বাজাচ্ছেন খুবই চমৎকারভাবে। তাঁর চারপাশে সবাই ভিড় করে মুগ্ধ হয়ে তার বাজানো দেখছিল। আমি যোগ দিলাম। পাশে রাখা ছিল অর্থ রাখার জায়গা। আমিও তাতে ৭০ পেনি দেই। আরেকটু সামনে গিয়ে দেখলাম অর্থনীতি শাস্ত্রের জনক এ্যাডাম স্মিথের স্ট্যাচু। পাশেই বড় বড় কালো কোর্তা পড়ে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন নারী-পুরুষ শহরের প্রচলিত ভূতের গল্প উপস্থাপন করছেন। রীতিমতো ভয় পেয়ে যাওয়ার দশা। এমন সুন্দর করে গল্পগুলো উপস্থাপন করা হচ্ছিল যে চোখের সামনেই দৃশ্যপট ভেসে উঠছিলো। জেনে অবাক হলাম এই গল্প শোনানো হচ্ছে বিনাপয়সায়। আরও অনেক ঘোরাঘুরি করলাম আমরা। কালটন হিল, ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব স্কটল্যান্ড, ড্যানডার হল, মিলার হিল, হোয়াইট হিল, ব্ল্যাকফোর্ড ইত্যাদি স্থান ঘুরে ঘুরে দেখেছি। কিন্তু সময়ের অভাবে লন্ডন যাওয়ার সুযোগ হয়নি। রথ দেখা, কলা বেচা নামে একটি প্রবাদের প্রচলন রয়েছে। স্কটল্যান্ডে আমাদের রথ দেখা, কলা বেচা দু’ই হয়েছিল। কনফারেন্সে অংশগ্রহণ যদি হয় কলা বেচা, তবে স্কটল্যান্ডে ঘোরাঘুরিকে রথ দেখা বললে অত্যুক্তি হবে কি? হবে না নিশ্চয়ই! ৪ থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্কটিশ পার্লামেন্টে অনুষ্ঠিত এই কনফারেন্সে সফলভাবে অংশ নিয়ে দেশে ফিরি আমরা। সঙ্গে নিয়ে আসি সাংবাদিকতাকে ভালবাসার মতো অনুপ্রেরণা। নিয়ে আসি কিছু মধুর স্মৃতি, ভালবাসা এবং নতুন বন্ধুত্বের বন্ধন।
×