ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চার নির্দেশ

আক্রান্ত হলে পুলিশ গুলি চালাবে

প্রকাশিত: ০৫:১২, ৬ নভেম্বর ২০১৫

আক্রান্ত হলে পুলিশ গুলি চালাবে

শংকর কুমার দে ॥ আক্রান্ত হলে আত্মরক্ষার্থে অনুমতি ছাড়াই গুলি করাসহ অন্তত চারটি নির্দেশ দেয়া হয়েছে পুলিশকে। চেকপোস্টে কিংবা টহলদানকালে আক্রান্ত হলে আত্মরক্ষার্থে গুলি চালানোর নির্দেশ ছাড়াও চেকপোস্ট বসানোর সময়ে পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ, পুলিশ দলের অন্তত একটি অস্ত্রের চেম্বারে গুলি ভর্তি রাখা ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও মোটরসাইকেলে ব্যাগসহ একাধিক আরোহী থাকলে এবং সন্দেহভাজন সিএনজিগুলোর যাত্রীদের তল্লাশি অভিযান পরিচালনায় আরও সতর্কতা অবলম্বন, নিরাপত্তা জোরদার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দফতরে বৃহস্পতিবার ডিএমপির বিভিন্ন জোনের ডিসি ও এডিসিদের সঙ্গে বৈঠককালে এ ধরনের নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া। অপরদিকে, পুলিশ সদর দফতর থেকেও কর্তব্যরত পুলিশ দল আক্রান্ত হলে আত্মরক্ষার্থে গুলি চালানোর জন্য দেশের ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারদের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দফতর ও ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে এ খবর জানা গেছে। সূত্র জানান, মাত্র ১৩ দিনের মাথায় রাজধানী ঢাকার গাবতলী ও আশুলিয়ায় দুই পুলিশকে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা এবং চার পুলিশ গুরুতর আহত করেছে সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি ২০১৫ সালের নবেম্বর পর্যন্ত প্রায় আড়াই বছরে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ২১ জন কর্তব্যরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ পুলিশকে খুন করা হয়েছে। এর মধ্যে বিএনপি-জামায়াত হরতাল-অবরোধ আহ্বান করে ১৪ জন পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকে খুন করেছে। আগের বছর ’১৪ সালে খুন করা হয়েছে কর্তব্যরত ৩ পুলিশ সদস্যকে। চলতি বছর ’১৫ সালে খুন হয়েছেন ৪ পুলিশ সদস্য, যার মধ্যে মাত্র ১৩ দিনের ব্যবধানে ২ পুলিশ সদস্যকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। প্রগতিশীল প্রকাশক, লেখক, ব্লগার খুন ও জখম যেই দুর্বৃত্ত বা জঙ্গীগোষ্ঠী করেছে, তারাই দুই পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা এবং অন্য পুলিশদের কুপিয়ে জখম করার মধ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মনোবল ভেঙে দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। বৈঠকে উপস্থিত থাকা একজন উপ-কমিশনার (ডিসি) নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বৈঠকে পুলিশ কমিশনার বলেছেন, টহল বা চেকপোস্টে পুলিশ গুলিবিদ্ধ হবে এবং সন্ত্রাসীরা গুলি করে চলে যাবে, অথচ পুলিশ গুলি করবে না, এটা হতে পারে না। নিজেদের রক্ষায় গুলি চালাতে হবে। এক্ষেত্রে কারোর অনুমতি লাগবে না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি যেন না হয়, কমিশনার সেই ধরনের নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া নিরাপত্তা জোরদার করতে নজরদারি বাড়াতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম শাখার উপ-কমিশনার (ডিসি) মুনতাসিরুল ইসলাম বলেছেন, ডিএমপির একটি বৈঠক হয়েছে। তবে আনুষ্ঠানিক কোন সিদ্ধান্তের বিষয়ে কোন কথা বলেননি। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) আরেকজন উপ-কমিশনার (ডিসি), যিনি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘অফিসিয়ালি গুলি করাসহ এ ধরনের নির্দেশনা জারি করা হয়নি। তবে আন-অফিসিয়ালি পুলিশ সদস্যদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। পুলিশ আইনেও আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি করতে পারবে বলে উল্লেখ আছে। সুতরাং পুলিশের ওপর হামলা হলে আত্মরক্ষার্থে গুলি চালাতে পারেন। এক্ষেত্রে অনুমতি লাগবে না। পুলিশ সদর দফতরের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, রাজধানী ঢাকায় মাত্র ১৩ দিনের মাথায় সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে ২ পুলিশ সদস্যকে নির্মমভাবে খুন করার ঘটনায় সারাদেশের ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারদের প্রতিও সর্বোচ্চ সতর্কতা ও নজরদারি করার নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। পুলিশের পিআরবি অনুযায়ী পুলিশ আক্রান্ত হলে আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি চালাতে পারবে এই ধরনের নির্দেশের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে লিখিতভাবে গুলি করার জন্য পুলিশ সদস্যদের প্রতি নির্দেশ দেয়ার বিষয়টি কোন পুলিশ কর্মকর্তাই স্বীকার করেননি। প্রসঙ্গত, গত ২২ অক্টোবর রাজধানীর গাবতলীতে চেকপোস্টে সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক ইব্রাহিম মোল্লা নিহত হন। এর ১৩ দিনের মাথায় গত ৪ নবেম্বর সাভারের আশুলিয়ায় একইভাবে চেকপোস্টে পুলিশের ওপর হামলা করে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। এতে কনস্টেবল মুকুল হোসেন নিহত হন। গুরুতর জখম ও আহত হন নূরে আলমসহ চার পুলিশ কনস্টেবল। এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের পুলিশ সদস্যদের সর্বোচ্চ সতর্কতা ও নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়।
×