ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নম্রতা শারমিন

ও বন্ধু আমার

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২ নভেম্বর ২০১৫

ও বন্ধু আমার

আসিফা ও আদৃতা। দু’জনই একটি খ্যাতনামা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ছাত্রী। একই সাবজেক্টে একই ক্লাসে পড়ছে। দু’জন খুবই ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। ক্লাসে দু’জন একসঙ্গে পাশাপাশি বসে। সারাদিন দু’জনে মিলে কত ঘোরাঘুরি। একজন ছাড়া অন্যজন যেন সম্পূর্ণ অচল। কিন্তু হঠাৎ কী যেন হলো। হঠাৎ করেই তারা দু’জন দুই ভুবনের বাসিন্দা। একজন আরেকজনের সঙ্গে মুখ দেখাদেখি বন্ধ। একজন আরেকজনের সঙ্গে কথাবার্তা বলা বন্ধ। আমাদের চারপাশে এমন ঘটনা হরদম ঘটছে। কিন্তু তাই বলে একজনের সঙ্গে আরেকজনের বন্ধুত্বের জুটি বাঁধা থেমে যায়নি। এমন বন্ধুত্বও আমাদের চোখে পড়ে যা মেলে না কোন জুড়ি। এই সমাজে মানুষমাত্রই সঙ্গপ্রিয়। সঙ্গী ছাড়া এ জীবন যেন অচল মনে হয়। একজন আরেকজনের সঙ্গে তার একান্ত অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে চায়। আর এভাবেই কারও সঙ্গে গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব। আর আমাদের ছোট্ট এই জীবনে নানা পদে পদে কত প্রতিকূলতা মোকাবেলা করতে হয়। তার কোন ইয়ত্তা নেই। আমাদের জীবনের নানা ধাপগুলো একে একে অতিক্রম করতে হয়। যেমন ধরুন, স্কুল জীবনে যে আপনার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল কলেজ জীবনে পা রাখার পর একটি দিনের জন্য তো দূরের কথা চোখাচোখি পর্যন্ত হয়নি। হয়ত কলেজ জীবনে এসে আপনি নতুন বন্ধু-বান্ধবী পেয়ে গেছেন। কলেজের সেই বন্ধুটি পাস করে পাড়ি জমালো বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য আর আপনি রয়ে গেলে নিজের দেশে। আসলে বন্ধুত্বের লাভ-ক্ষতি আছে। আর এই লাভ-ক্ষতির হিসাবটাই জটিল। কখনও তা অঙ্কের হিসাবে মেলানো যায় না। আবার কখনও হিসাবের গরমিলটাই বন্ধুত্বের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। বন্ধুত্বের ব্যাপারটা পাঁচমিশলি। তবে যাই বলুন, বন্ধুত্বের উর্বর ক্ষেত্র কিন্তু কলেজ-ভার্সিটি। কাউকে বন্ধু বানানো, কারও বন্ধু হওয়া কিংবা একটা গ্রুপে অনেক ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে কাটানো। এসব তো ক্যাম্পাস জীবনে সম্ভব। ব্যক্তিজীবনটা প্রতিষ্ঠা পাবার জন্য। সংসার করার, ছেলেমেয়ে সামলানোর। এমন বন্ধুত্ব তখন কে বন্ধুÑকারা বন্ধু আপনার প্রিয় মানুষটি তখন আপনার প্রিয় বন্ধু। যার সঙ্গে আপনার সবকিছু মিলে যায় সেই তো আপনার বন্ধু। দিবে আর নিবে মিলিবে, মিলাবেÑবন্ধুত্বের স্মারক তো এটাই। এ বিশাল দুনিয়ার যেখানেই যাবেন সেখানেই আপনি বন্ধু জুটিয়ে নিতে পারেন। কোন এক কারাগারে দুই ভয়ঙ্কর অপরাধীও কিন্তু ভাল বন্ধু হয়ে উঠতে পারেÑএমন নজির দেখা যায়। ইন্টারনেটের এই যুগে পৃথিবীর এক প্রাপ্ত থেকেও অন্য আরেক প্রান্তের কারও সঙ্গে মনের মিল হয়ে গেলে বন্ধুত্ব হয়ে যেতে পারে। দূরত্ব এখানে কোন ব্যাপার নয়। দূর পরবাস থেকেও গড়া যায় বন্ধুত্ব। আপনার মোবাইল ফোনে হয়ত অন্তত একবার হলেও ‘বন্ধু হতে চাই’ মেসেজ পেয়ে থাকবেন। হয়ত আপনি নিজেও এ ধরনের মেসেজ দিয়েছেন। এই আধুনিক প্রযুক্তির সময়ে বন্ধু খুঁজে পেতে তেমন বেগ পেতে হয় না। চাইলেই পাওয়া যায়। তবে এক্ষেত্রে সাবধনী হওয়া উচিত সবার। বন্ধুটি যেন ভাল হয় সে ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে নেয়া প্রয়োজন। কারণ যার সঙ্গে আপনি আপনার সেরা সময়গুলো কাটাবেন, যার সঙ্গে ভাগ করে নেবেন সময়ের সেরা মুহূর্তগুলো সেই বন্ধুটি যদি ভাল না হয় তাহলে তো জীবনটাই মাটি। বন্ধুত্বের বিপদ সঙ্কেত অনেকটাই অদৃশ্য। বলে কয়ে ও পথে কাঁটা ফোঁড়ে না কেউ। প্রিয় বন্ধুর জন্মদিন প্লানটা ছিল বেশ মজা করার। বাধ সাধল ক্লাস। বন্ধুরও মন খারাপ। আবার ধরা যাক, আপনাদের স্টাডি সার্কেলে পাঁচজন রয়েছে এরই মধ্যে আরও দু’জন যোগ দিতে চায় আপনাদের সাথে। কী করবেন তেমন পরিস্থিতিতে? কিংবা আপনাদের গ্রুপ নোট আপনার এক বন্ধু বাইরে পার করে দিল। বন্ধুত্বে ফাটল ধরতে পারে অথবা আপনার কোন বন্ধু তার প্রেমিকা নিয়ে বেশ ব্যস্ত। আপনাকে সময় দিতে পারছে না, তার সঙ্গে কি বন্ধুত্ব টিকানো সম্ভব হবে? বড্ড ঝামেলা তাই না? বন্ধুত্ব আর ক্যারিয়ারÑএই দুয়ের মধ্যে ভারসাম্য রাখাটা কিন্তু জরুরী। ভবিষ্যতের ভাবনা ভাবাই জ্ঞানীর কাজ। তাই বলে কি স্বার্থপরের মতো নিজের কথাটাই ভাববেন? যতটা পারুন স্বার্থপরতা এড়িয়ে চলুন। আমরা জানি, আপনার যুক্তির যথেষ্ট যৌক্তিকতা রয়েছে। তাই বলে বন্ধুটিও যে খুব ভুল বলছে তাও কিন্তু নয়। একটু মিলিয়ে নিন। নিজের মতামত অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেবেন না যেন। আনন্দে থাকুন। শেয়ার করে নিন আনন্দ। আর একটু ব্যাপার আপনার কি ইগো প্রবলেম আছে? খুব বেশি ভাল নয় ব্যাপারটা মনে রাখবেন। এড়িয়ে চলুন। আর বন্ধুত্ব করতে গিয়ে নিজের বা বাড়ির লোকজনের সঙ্গে সম্পর্কের দিকটা সামলে চলুন। আজ যার সঙ্গে আপনার জবরদস্ত একটা ঝগড়া হলো। হয়ত দেখলেন আগামীকালই আপনার জন্য সে ভাল একটা কিছু করল। সবার মধ্যেই কিন্তু ভালমন্দ দুটো দিকই আছে। তার কাছে কিছু না কিছু শেখার মতো গুণাবলী রয়েছে। সবার সঙ্গে যে সব সময় মতের মিল হবে এমন নয়। আপনাকেই এ্যাটজাস্ট করে নিতে হবে। মানে হাতটা আপনাকে বাড়িয়ে রাখতে হবে। সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকার অভ্যাসটা জীবনের প্রায় প্রতিটি স্তরেই কাজে আসে। যেখানেই যান না কেন, সেটা কর্মজীবনে। আপনার কলিগই হতে পারে আপনার ভাল বন্ধু। প্রেম না করলে বিয়ে করার পর স্ত্রীই জীবনের সেরা বন্ধু। ছেলেমেয়ের সঙ্গে গড়ে উঠতে পারে অকৃত্রিম বন্ধুত্বের সম্পর্ক। মানে আপনি একজন ভাল বন্ধু এটাই আপনাকে প্রমাণ করতে হবে। তাহলে দেখবেন, আপনার বন্ধুর অভাব হবে নাÑসময়টাও মজার কেটে যাবে। আবারও বলছি, হাতটা বাড়িয়ে রাখুন, প্রসারিত হাত আপনার যাবতীয় দুঃখ ঘুচিয়ে দিতে পারে। ছবি : মুকুল মডেল : তুর্য ও ফারহানা নিশো
×