ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রাণচাঞ্চল্যে বাংলার ফুটবল

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২ নভেম্বর ২০১৫

প্রাণচাঞ্চল্যে বাংলার ফুটবল

প্রায় হতোদ্যম, ঝিমিয়ে পড়া দেশীয় ফুটবলে প্রাণের সঞ্চার হয়েছিল চলতি বছরই বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আয়োজনের মাধ্যমে। এবার সঞ্চারিত হলো প্রাণ চঞ্চলতা। শুক্রবার ভারতকে হারিয়ে ফুটবলে বিজয়ী হলো বাংলাদেশÑ এভাবেই দেখছেন দেশের কোটি ফুটবলপ্রেমী। যদিও উভয় দেশের জাতীয় দল খেলেনি। খেলেছে দুটি দেশের দুটি ফুটবল ক্লাব। তবু ‘চট্টগ্রাম আবাহনী’ ও ‘কলকাতা ইস্ট বেঙ্গল’ নামের দুটি ঐতিহ্যবাহী ফুটবল দলের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে জিতে শিরোপা পাওয়া এক মহা-আনন্দের ব্যাপার, জাতীয় উৎসবেরই সমতুল্য। অপরাজিত প্রতিপক্ষের কাছে এক গোলে পিছিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত ৩-১ গোলে জিতেছে চট্টগ্রাম আবাহনী। উল্লেখ্য, ত্রিশ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন এমএ আজিজ স্টেডিয়ামটি ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। স্টেডিয়ামের বাইরে উপস্থিত ছিল আরও হাজারদশেক দর্শক। নিকট অতীতে ফুটবল নিয়ে এমন উন্মাদনা আর দেখা যায়নি। সত্যিই এ জাগরণ প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর। রুদ্ধশ্বাসে খেলা উপভোগকারী প্রধানমন্ত্রী তাৎক্ষণিকভাবে চট্টগ্রাম আবাহনীর প্রত্যেক খেলোয়াড়কে এক লাখ টাকা করে পুরস্কার প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন। ফুটবলই বাংলাদেশের মানুষের আসল খেলা। সেসব অতীত দিনের কথা আজকাল যেন বিশ্বাসই হতে চায় না। গ্রামবাংলার এমন কোন পল্লী অঞ্চল খুঁজে পাওয়া যেত না যেখানে বছরে অন্তত একবার ফুটবলকেন্দ্রিক কোন বিশেষ প্রতিযোগিতার আয়োজন হতো না। এক গ্রামের সঙ্গে ভিন্ন গ্রাম, গ্রামের একটি হাইস্কুলের সঙ্গে পাশের গ্রামের কোন স্কুলের ছেলেদের জমজমাট ফুটবল খেলা হতো। সে এক হৈ হৈ রৈ রৈ ব্যাপার। উৎসাহ, উদ্যম, উদ্দীপনায় ভরপুর এক লড়াই। খেলা সে তো খেলা নয়, রীতিমতো যুদ্ধ। এই যুদ্ধের ভেতর কী বিপুল আনন্দ আর বিনোদন পোরা থাকত, হাসি থাকত রাশি রাশি। বর্ষাকালে পানিতে কাদাতে হুটোপুটি লুটোপুটি করে প্রতিপক্ষের গোলপোস্ট এলাকায় ঢুকে পড়ার কী তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা! নগরও তার বাইরে ছিল না। ছিল বড় বড় খেলার মাঠ। এখন কী শহর, কী গ্রাম সর্বত্রই খেলার মাঠের সংখ্যা শোচনীয়ভাবে কমে এসেছে। যদিও মানুষের ফুটবলপ্রীতিতে এতটুকু ভাটা পড়েনি। বিশ্বকাপ ফুটবলের উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। সেই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ না থাকলেও এ দেশের কোটি দর্শক মাসব্যাপী ওই খেলার সঙ্গে একাত্মতা বোধ করে থাকেন। রাত জেগে খেলা উপভোগ করেন। আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলÑ প্রধানত এ দুটি দলের সমর্থনে ভাগ হয়ে যায় দেশের ফুটবলপ্রেমী মানুষ। অবস্থা অনেকটা আবাহনী-মোহামেডানের মতো। এই উত্তেজনা, আবেগ আর বিনোদন ভালভাবেই খোলাসা করে দেয় ফুটবল নামক ক্রীড়াটির প্রতি বাংলার মানুষের গভীর আকর্ষণের কথাটি। দেশের ফুটবলামোদী মানুষের জন্য আশা ও আনন্দের কথা দেড় দশক পরে হলেও শুরু হয়েছে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ। টুর্নামেন্টটি পেয়েছে ফিফার প্রথম শ্রেণীর টুর্নামেন্টের মর্যাদা। ‘শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ টুর্নামেন্ট’ প্রতিবছর অক্টোবরে অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা এসেছে। ফুটবলের সুদিন ফিরিয়ে আনতে চায় বাফুফে। সেজন্য কিছু পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হচ্ছে। তৃণমূল পর্যায়ে খেলাধুলার সুবিধা নিশ্চিত করতে সরকার বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। দেশের ৪৮৭ উপজেলার প্রত্যেকটিতেই কমপক্ষে একটি করে স্টেডিয়াম তৈরি হচ্ছে। স্টেডিয়াম মানেই হলো ক্রীড়াকে উৎসবে পরিণত করার জমজমাট আনুষ্ঠানিকতা। বহু ক্রীড়ামোদী মানুষের একসঙ্গে খেলা উপভোগের অতীব সুন্দর ব্যবস্থা। এর ফলে খেলাধুলার চর্চা ও অনুশীলন সাধারণভাবে বৃদ্ধি পাবে। আমরা আশা করতে পারি উপেক্ষিত ফুটবলও পুনরায় ফিরে পাবে তার যথাযথ আসন।
×