ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বস্তিবাসীর জন্য

প্রকাশিত: ০৩:৩৭, ১ নভেম্বর ২০১৫

বস্তিবাসীর জন্য

রাজধানীকেন্দ্রিক সীমিত আয়ের মানুষের দুঃখ-কষ্টের সীমা নেই। তাদের স্থায়ী কোন ঠিকানাও নেই। যারা সামান্য সচ্ছল তারা স্বল্প মূল্যের ভাড়া বাসায়, যাদের ওই সামর্থ্যটুকুও নেই তারা রাজধানীর বিভিন্ন বস্তিতে বাস করছেন। আজ এখানে কাল ওখানে অনেকটা যাযাবরের মতোই যেন তাদের জীবনযাপন। অনেকের মনে হয়ত স্বপ্ন জাগে এক টুকরো জমি কিংবা একটা ছোট ফ্ল্যাট কেনার। স্বপ্ন আছে কিন্তু সাধ্য নেই। বাস্তবতা থেকে তাদের স্বপ্ন ধরাছোঁয়ার অনেক বাইরে। দুই কোটি জনসংখ্যার এই মহানগরীর প্রায় ৪০ লাখ লোক এই শ্রেণীভুক্ত। বর্তমানে ঢাকা শহরে বস্তির সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার ৭২০টি। এটি সরকারী হিসাব হলেও বেসরকারী হিসাবে এর সংখ্যা আরও বেশি। নদী ভাঙনসহ বিভিন্ন কারণে সর্বস্ব হারিয়ে প্রতিদিনই ঢাকামুখী হচ্ছে নিঃস্ব মানুষ। বাধ্য হয়েই ফুটপাথ আর ঝুপড়ি বস্তিতেই তাদের বসবাস করতে হয়। মাঝে মধ্যে উচ্ছেদ অভিযানে ভেঙ্গে দেয়া হয় তাদের সবকিছু। এমন পরিস্থিতিতে নিম্ন আয়ের এসব মানুষের জন্য একটি সুখবরের কথা জানা গেল। ২০ বছরের মধ্যে পরিশোধের সময় বেঁধে প্রতিদিন ২৭৫ টাকা কিস্তিতে বস্তির বাসিন্দাদের দুই বেডরুমের এ্যাপার্টমেন্ট তৈরি করা হচ্ছে। স্বল্প ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ৫০ হাজার এ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সীমিত আয়ের নগরবাসীর কাছে এ সংবাদটি আশার আলো দেখিয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে ভাবনার বিষয় এই যে, গত কয়েক বছর আগে সরকারের পক্ষ থেকে রাজধানীর সীমিত আয়ের মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিতে কম দামে ফ্ল্যাট দেয়ার একই ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে এই ধরনের একটি প্রকল্পের কাজও শুরু হয়। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার নির্ধারিত সময়সীমা পার হয়ে গেছে। কবে শেষ হবে তা এখনও অনিশ্চিত। এমতাবস্থায় নতুন এই প্রতিশ্রুতি কতটা কার্যকর করা সম্ভব সেই প্রশ্নটি সামনে উঠে এসেছে। তবে সিদ্ধান্তটি যে সময়োপযোগী এবং আশ্রয়হীন মানুষগুলোর কল্যাণে তা এক বাক্যে স্বীকার করা যায়। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের কথা ভাবা হলেও আলাদাভাবে এই মানুষগুলোর মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের বিষয়টি ভাবা হয় না। বিশ্বব্যাংকের এক জরিপে দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকায় প্রতিবছর ৩ থেকে ৪ লাখ নতুন মানুষ যোগ হচ্ছে। যারা রিক্সা ও ভ্যান চালিয়ে বা দিন মজুরি করে অর্থ উপার্জনের আশায় ঢাকায় আসে। বাসা বাড়ি বা উন্নত স্থাপনায় থাকার সাধ্য না থাকায় অধিকাংশই এসে উঠছেন নগরীর বিভিন্ন বস্তিতে। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ও অলি-গলিতে চোখ মেললেই দেখা যায় পলিথিনের ঝুপড়ি। এগুলো মূলত শহরের আশ্রয়হীন মানুষের ডেরা। প্রতিবছর বাজেটে বস্তি পুনর্বাসন প্রকল্পের জন্য বিশেষ বরাদ্দের কথা শোনা গেলেও বাস্তবে এর সুফল ওই আশ্রয়হীন মানুষগুলো পায় না। বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন রয়েছে। এ লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। স্বাধীনতার পর থেকে নিম্ন আয়ের দেশ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া একটি দেশের জন্য এটা বিরাট অর্জন। এই অর্জন ধরে রাখতে হলে এই বিশাল সংখ্যক আশ্রয়হীন মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা দরকার। বিশেষ করে বাসস্থানের বিষয়টি। সরকার সে পথেই এগোচ্ছে বলে মনে হয়। তবে বিশাল এই পরিসংখ্যানের বিপরীতে ৫০ হাজার খুবই নগণ্য। তারপরও শুরুটা যে হচ্ছে সেটাই বড় কথা। তবে প্রকৃত আশ্রয়হীন মানুষগুলো যাতে ফ্ল্যাটের মালিক হতে পারে তা নিশ্চিত করা জরুরী। এ প্রকল্পকে ঘিরে স্বল্প আয়ের মানুষ স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। মাঝপথে এসে যেন এই স্বপ্ন ভেঙ্গে না যায় সেটা নিশ্চিত করা দরকার।
×