ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দেশ ছাড়লেন শাম্মীও

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ৩১ অক্টোবর ২০১৫

দেশ ছাড়লেন শাম্মীও

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘একের পর এক ব্লগার হত্যা এবং এ বিষয়ে সরকারের অনীহার প্রতিবাদ করে আসছি। আর মৌলবাদীরা তো সেই কবে থেকেই আমাকে চিহ্নিত করে রেখেছে। গত কয়েক মাস ধরে যেভাবে ব্লগারদের হত্যা করা হচ্ছে তাতে এখন মোবাইল এবং ফেসবুক ব্যবহার করতেও অজানা শঙ্কা কাজ করছে। তবে আমি দেশ ছাড়তে চাই না।’ সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যমে এসব কথা বলেন গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী শাম্মী হক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেশ ছাড়তে হলো তাকেও। ক্রমাগত হুমকি আর অজানা আতঙ্ক নিয়ে প্রতিবাদমুখর শাম্মী হক জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন। ৩০ সেপ্টেম্বর নিজের ফেসবুকে স্ট্যাটাসে জানিয়েছেন, ‘ধন্যবাদ আমার সকল বন্ধু ও শত্রুদের। ধন্যবাদ যারা বিপদের দিনে পাশে ছিলো, ধন্যবাদ সে সকল বন্ধুদেরও যারা আমার সঙ্কটময় মুহূর্তে তাদের হাত গুটিয়ে নিয়েছিলো। ধন্যবাদ বাংলাদেশের পুলিশ প্রশাসনকে যারা গত দু’মাস ধরে আমাকে নিরাপত্তা দিয়েছিলো। প্রবাস জীবনকেই বেছে নিতে হয়েছে। এর বিকল্প আর কিছু ছিলো না।’ গত ২৭ আগস্ট ধানম-ি এলাকায় দুই যুবক তাকে অনুসরণ করলে তিনি মোহাম্মদপুর থানায় জিডি করেছিলেন। এর প্রেক্ষিতে পুলিশ দু’জনকে শনাক্তও করেছিল। তারপর পুলিশের পক্ষ থেকে শাম্মীর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। ২০১৩ সালে শাহবাগ আন্দোলনের সময় থেকেই গণজাগরণ মঞ্চের প্রতিটি কর্মসূচীতে রাজপথে দেখা গেছে শাম্মী হককে। ব্লগ লেখালেখির চেয়ে মানবতাবিরোধীদের বিচারের দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চের হয়ে রাজপথে সরব থাকা, মৌলবাদ এবং ব্লগার হত্যার প্রতিবাদে সোচ্চার থাকাতেই লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন তিনি। এদিকে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, নিরাপত্তার অভাবে ইতোমধ্যে দেশ ছেড়েছেন যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের অন্তত ১০ কর্মী। তাদের কেউ বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছে। আবার কেউ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন। গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের শুরু থেকে এ পর্যন্ত চার কর্মীকে হত্যা করেছে উগ্র সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠী। যার প্রেক্ষিতে নিরাপত্তাহীনতা ও দেশ ছাড়ার বিষয়টি সামনে চলে আসে। এদিকে অপর একটি সূত্র বলছে, জামায়াতসহ উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী কৌশলে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীসহ ব্লগারদের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য চলমান জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধ ও সন্ত্রাসবিরোধী আন্দোলনকে নস্যাত করা। শাম্মীর দেশ ছাড়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার জনকণ্ঠকে বলেন, তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখে জার্মানি চলে যাওয়ার বিষয়টি আমি জানতে পারি। শাম্মী দেশ ছেড়ে চলে যাবে এর আগে আমি জানতাম না। তিনি বলেন, আন্দোলন শুরুর পর থেকে আমাদের চার সহযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছে। তাই নিরাপত্তার সঙ্কট তো আছেই। এরপরও কেউ ব্যক্তিগতভাবে অনিরাপদ বোধ করলে বিদেশে যেতেই পারে। তবে মনে রাখতে হবে অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করলে সঙ্কট আসবেই। তার মানে দেশের সঙ্কটময় মুহূর্তে বিদেশে চলে যাওয়া কাম্য নয়। তিনি বলেন, আমাদের নিরাপত্তার বিষয়টি বার বার পুলিশ প্রশাসনের কাছে তুলে ধরার পর এখন দৃশ্যত কিছুটা উন্নতি হয়েছে। একটা কথা মনে রাখতে হবে বিদেশে গিয়ে উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হবে না। যারা ইতোমধ্যে দেশের বাইরে গেছেন তাদের ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যুদ্ধে সঙ্কট থাকবেই। দেশে মৌলবাদী শক্তি যখন শক্তিশালী তখন জাতির সঙ্কটময় সময়ে পাশে থেকে সবাইকে নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। যতই বাধা আসুক আমাদের সংগ্রাম চলছে। চলবে।
×